কামিল বা স্নাতক সমমান শিক্ষা ছাড়াই বাপ ছেলে মাওলানা

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥

শ্রীমঙ্গলের কালাপুর গ্রামে কোন রকম যষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা বাপ ছেলে সনদ বা সার্টিফিকেট বিহীন মাওলানা। এমন অভিযোগের ডাকনা খুলছে আব্দুল জলিল ও তার বড় দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। 

তারা কোন মাদ্রাসায় কামিল বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাস না করেই মনগড়া লিখছেন মাওলানা। মাওলানা হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ রয়েছে মাদ্রাসায় কামিল যা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমমান পাসের বেলায় সম্বোধনের জন্য ব্যবহৃত হয় মাওলানা। এলাকায় এমন সম্মানি যোগ্যতার অপব্যবহার নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ধর্মপ্রান মানুষের মধ্যে ক্ষুব সৃষ্টি হয়। তবে মুখ খুলেন নি কেউ। প্রকৃত মাওলানারা প্রতিনিহত হচ্ছেন নানা প্রশ্নে সম্মুখিন। তাদের কারণে ভ্রান্ত ধারণার বিরাজ করছে জনমতে। এলাকা সুত্রে জানা যায়, আব্দুল জলিলকে স্কুল মাদ্রাসায় খুব একটা বেশি দিন লেখাপড়া করতে দেখেন নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার আত্মীয় এক মহিলা ফখরুলের মা হিসেবে জানেন অনেকে তার কাছ থেকে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে পড়ে ছিলেন কিছু দিন। তারপর মুদির দোকানি থেকে কালাপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আর প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। কোন শিক্ষক ছাড়াই বাপ ছেলের শিক্ষকতায় চলছে হাতে গনা কয়েক জন শিক্ষার্থীদের ন্যায়,আজবদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৪ সালে আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাজী আলফত মিয়া এতিমখানা নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এখানেও ডালপালা মেলে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির এতিম ছাড়াই এতিখানা। এলাকার অধিকাংশ বাচ্চাদের তাদের জীবিত পিতাদের অজান্তে মৃত দেখিয়ে এতিম করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ। এমন লেবাসের আড়ালে রয়েছে বাপ ছেলের চড়াও সুদের রমারমা ব্যবসা। কালাপুর গ্রামের লোকমান মিয়া জানান,আব্দুল জলিল কাছ থেকে ২লাখ টাকার বিনিময়ে ৫ মাসে পর সুদ দেন ৯০ হাজার টাকা। এব্যাপারে এলাকায় অনেক সালিশ বৈঠকও হয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহরের পোস্ট অফিস রোডস্থ সাইফুর রহমান সুপার মার্কেটের রয়েছে তার বড় ছেলে দেলোয়ার হোসেনের সুদের কারবারে জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিয়োগ।

প্রতি মাসে ১লাখ টাকায় তিনি সুদ নেন ৩ হাজার টাকা। শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অজয় সিং বলেন,জলিল নুরী সাহেবের ছেলে দেলোয়ার হোসেনের নিকট থেকে আমি কিছু টাকা এনেছিলাম। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি আসল টাকা এবং লাভের কিছু টাকা পরিশোধ করার পরও আরোও লাভের টাকার জন্য আমাকে চাপ দেয়া হয়। পরে তার পিতার উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. কামাল হোসেনের অফিসে সালিশ হয় এবং আরোও কিছু সুদের টাকা আমি পরিশোধ করি। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. কামাল হোসেন শালিসের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার অফিসে দেলোয়ার হোসেনের সাথে অজয় সিং এর একটি বিচার বৈঠক হয়েছে। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ীরা জানান।কিন্তু মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ। তার বিরোদ্ধে মুখ খুললে হামলা মামলার স্বীকার হতে হয়। তার এমন তথ্যের বিষয় নিয়ে কথা বলার দায়ে মালেশিয়া থাকা তার ছেলের বউকে মিথ্যা পরকিয়ার অপবাদ তুলে ৩ বছরে শিশু সন্তানসহ পুত্রবধুকে মারধর করে ঘর ছাড়া করেন।

এব্যাপারে তার পুত্রবধু ঝুমি আক্তার বাদী হয়ে মৌলভীবাজার আদালতে মামলা দায়ের করেন মামলা নং ২৪৩/২৩। মামলা দায়ের করে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই মামলায় তার ছেলে আজমান হোসেন হাজত বাস করে ১মাস ৪দিন। তারপর জামিনে বের হয়ে এসে ফেইসবুকে নানা অপপ্রচার করছে। মামলা দায়েরের  পর ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যের উপর পরপর ৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল জলিল বলে জানান,তার পুত্রবধু ঝুমি আক্তার। টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে শমশেরনগর থেকে মহিলা এনে আমার পরিবারের বাবা ভাইদের উপর মিথ্যা হয়রানি মুলক এই মামলা করেন তিনি।

এমন তথ্য জানান,কালাপুর গ্রামের সুনু মিয়ার মেয়ে ভুক্তভোগী ঝুমি আক্তার। এব্যাপারে কালাপুর মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক, আব্দুল জলিলের কাছে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কামিল পাস করছেন সনদপত্র বা সার্টিফিকেট আছে কি? জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি! এর বাহিরে কতটুকু লেখাপড়া করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন আমি ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তার ছেলেরা লেখাপড়া করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিরাজনগর গাউছিয়া জালালিয়া মমতাজিয়া ছুন্নীয়া ফাযিল ডিগ্রী) মাদরাসায়। এব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শেখ শিব্বির আহমদ বলেন, আব্দুল জলিল খুব সম্ভবত সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বলে শুনেছি। তার পুত্র দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য ছেলেরা আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা কেউ দাখিল পাশও করেননি। এর আগেই লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাওলানা মনে করে মুখ খুলছেন না কেউ ভয়ে! তাদের এমন কৃতি প্রকাশ হলে মানুষের মধ্যে কানাঘুঁষা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও