বড়লেখায় পল্লীবিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ লাইন যেন মৃত্যুফাঁদ

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলবীবাজার প্রতিনিধি।।

বড়লেখা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন দেখা গেছে। দীর্ঘদিন থেকে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এই লাইনগুলো এখন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোথাও বসত ঘরের পেছন দিয়ে, কোথাও মানুষের আসা-যাওয়ার রাস্তায় হাতছোঁয়া দূরত্বে বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজ এসব লাইন। আবার কোথাও পিডিবি’র কয়েক যুগের পুরোনো ষ্টীলের খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুতের লাইন টানানো রয়েছে। এসব খুঁটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে। তবে এসব খুঁটি ও বিদ্যুৎ লাইন সরানোর উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ে বারবার ধর্না দিয়েও মেলেনি প্রতিকার। ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।

সূত্র জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ের লাইন রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ ডিজিএমের নেতৃত্বে তদারকি করবেন এজিএম ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু এসব কাজ তদারকি করা হয়না ঠিকমতো। যার ফলে দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ লাইনসহ নানা ত্রুটি থেকেই যায়। বিভিন্ন সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ লাইনসহ নানা ত্রুটির বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এছাড়া এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর খুব একটা পড়েনা। অভিযোগ রয়েছে, এই অফিসের এজিএম আশরাফুল হুদা, সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। তারা বিভিন্ন লোকজনের সাথে বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিধিবহির্ভূত সংযোগ (কাগজে কলমে বৈধ দেখিয়ে) দিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁিকপুর্ণ লাইন আরো ঝুঁিকপূর্ণ হয়ে উঠছে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ শাহবাজপুর, বড়লেখা পৌরসভা, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন ও পিডিবি’র সময়ের জরাজীর্ণ ষ্টীলের খুঁটির সাথে বিদ্যুতের লাইন টানানো আছে। এরমধ্যে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের উত্তর ঘোলষা (খদানগর) এলাকায় গিয়াস উদ্দিনের বসত ঘরের পেছন দিয়ে যাওয়া ৬ হাজার ৩৫০ ভোল্টের (সিঙ্গেল ফেজ হাই ভোল্টেজ এইচটি লাইন) লাইনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বছর দেড়েক আগে ‘সিঙ্গেল ফেজ হাই ভোল্টেজ এইচটি’ সঞ্চালন লাইনটি ঝুলে মাটি স্পর্শ করে। তখন বাড়ির লোকজন বাঁশের খুঁটি দিয়ে সঞ্চালন লাইটি কোনমতে উঠিয়ে রাখেন। তারপরও হাতছোঁয়া দূরত্বে বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনটি রয়েছে।

অপরদিকে বড়লেখা পৌর শহরের গাজিটেকা (বাঁশতলা) জামে মসজিদ এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের এসপিসি (পাকা) খুঁটির পরিবর্তে পিডিবি’র আমলের জরাজীর্ণ ষ্টীলের খুঁটি দিয়ে এল.টি বেয়ার (খোলা তার) সঞ্চালন লাইন টানানো হয় প্রায় এক দশক আগে। পাশাপাশি পিডিবি’র আমলের জরাজীর্ণ ষ্টীলের খুঁটি দিয়ে এলটি ডুপ্রেক্স (কভার তার) লাইন দিয়ে ওই এলাকার ব্যবসায়ী নুরুদ্দিন ও মুজিবুর রহমানের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জরাজীর্ণ এই খুঁটিগুলো দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে লাইন টানানো থাকলেও তা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কোনো খুঁটি ভেঙে পড়েছে, কোনোটি হেলে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে বাসিন্দারা বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের নামে প্রায় প্রতি সপ্তাতে এক/দেড়দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুহেল রানা চৌধুরী বলেন, ‘সব জায়গায়তো তারপক্ষে তদারকি করা সম্ভব হয়না। অভিযোগ পেলে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেন। ঝুঁিকপূর্ণ লাইন নজরে আসলেই তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেন। ইতিমধ্যে কিছু লাইনের সমস্যা তার নজরে এসেছে। এগুলো সারানোর জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিচ্ছেন। এজিএম কম ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের সিন্ডিকেটের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই, কেউ অভিযোগও করেনি। তবে এব্যাপারেও তিনি খোঁজ-খবর নিবেন।’

সর্বশেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৫
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও