বদরুল ও কুলসুমার উপর ব্যবস্থা নিতে মৌলভীবাজার ৩ ইউনিয়নের উঠান বৈঠক, ১০ সদস্যের কমিটি গঠন।

বিশেষ প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের পূর্বসম্পাশি এলাকা থেকে মাহিন মিয়ার মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয় । ঘটনাটি ঘটেছে ২০২১ সালের ১২ ডিসেমম্বরে।

সেই সময় পুলিশ সূত্রে জানা যায়,নিহত শিশুর বাবা বদরুল ইসলাম বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে দ্রæত সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে সাব্বির বক্স (১৯) নামের এক যুবক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই মাহিনকে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার জন্য মনু নদীতে ফেলে দিয়ে আসে বলে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয় আসামী সাব্বির বক্সকে। তবে আটক অন্য দুজন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে জানান সেই সময়ের দায়ীত্বে থাকা মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান।

তবে মামলা চলার পর কয়েক বার আপস মীমাশার জন্য বসা হলেও তা আপস হয়নি। আপস না হওয়ার একটি কারন হলো মৃত মাহিন এর মা তার বাবাকে বিশ্বাস করতে পারেন মাহিন এর মা কুলসুমা বেগম মনে করেন তার স্বামী বদরুল একাই আপসের টাকা নিয়ে চলে যাবে । আর মাহিনের বাবা বদরুল মনে করছে আপস করলে আপসের টাকা বিচারীরা খেয়ে ফেলবে। এই সমস্যার জন্য কয়েক বার আপসে বসলেও আপস হয়নি।

তবে কয়েক মাস আগে মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলার ও জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সেলিম হক,৭নং চাদনী ঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন ও পুর্ব সম্পাসী গ্রামের সমাজ সেবক নাইওর আহমদসহ কয়েক জন মিলে আপসে বসলে  ১৪ লক্ষ টার বিনিময়ে বিষয়টি আপস হয়। এবং ১৪ লক্ষ টাকা কুলসুমা বেগম ও তার স্বামী বদরুলের যৌথ একাউন্টে জমা দেওয়া হয়। আপসের পর কোর্টে উঠে বদরুল আহমদ জজ সাহেব কে বলেন সাব্বির বক্সকে জামিন দিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই,সেই সময় জজ সাহেব সাব্বির বক্সকে জামিন দেয়। জামিনের আগে সাব্বির বক্সকে কোর্টে আনলে মধ্যস্তকারী নাইওর আহমদ ও কোর্ট পুলিশের সামনে কুলসুমা বেগম সাব্বির বক্সকে মারধর করে।

জামিন পেয়ে বাড়িতে আসার কয়েদিন পর সাব্বির বক্স বাড়ির পাশের মাটে খেলা করছে হঠাৎ  সাব্বিরের উপর লাটিসোটা নিয়ে হামলা করে কুলসুমা বেগম। তখন সাব্বির  দৌড়ে বাড়িতে চলে আসে এবং তার বাবা মাকে বিষয়টি জানায়। পর দিন মৌলভীবাজার মডেল থানায় কুলসুমা বেগম একটি অভিযোগ করে বলেন তার ছেলে মাহিনের হত্যাকারী সাব্বির তার উপর হামলা করে। এবং সাব্বিরের জামিন বাতিলের জন্য কোর্টে একটি দরখাস্ত করেন।

এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৭ নং চাদনী ঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে শুক্রবার রাতে সাব্বির বক্সের বাড়িতে তার বাবা আবুল বক্সের ডাকে ৭ নং চাদনী ঘাট ইউনিয়ন পরিষদ,৩ নং কামালপুর ও ৫নং আখাইলখুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ময় মুরুব্বি নিয়ে একটি উঠান বৈঠকে বসেন। শতাদিক মানুষের উপস্থিতিতে আবুল বক্স পুরো বিষয়টা অবগত করেন। উঠান বৈঠকে ৭ নং চাদনী ঘাট ইউনিয়ন পরিষদ ১নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি (মেম্বার) আবুল হোসেন কে সভাপতি করেন। শুরু হয় আলাপ আলোচনা ।

মধ্যস্তকারী নাইওর আহমদ বলেন আমি কয়েক বার আপসের চেষ্টা করেছি,কোন সময় মানে আবার কোন সময় মানে না। অবশেষে আপসে এসে ১৪ লক্ষ টাকা কুলসুমা বেগম ও বদরুল আহমদের  যৌথ একাউন্টে দুই দাকে টাকা জমা দেন মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর  সৈয়দ সেলিম হক সহ সমঝোতার কয়েকজন মিলে । জজ সাহেব জামিন দেবার আগে আমার সামনে ও কোর্ট পুলিশের সামনে কুলসুমা বেগম সাব্বির কে মারধর করে। তারা এখন বিচার চায় না টাকা চায়।

মৃত মাহিনের চাচা সাবেক সেনা কর্মকর্তা সামসু মিয়া বলেন আমি কয়েক বার কাউন্সিলরের বাসায় গিয়েছি। পুরো ১৪ লক্ষ টাকা তাদের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। আমার ছোট ভাই বদরুল সে কি ভাবে খারাপ  কুলসুমা বেগমকে বিয়ে করেছে আমরা জানিনা। এই মহিলাকে আমাদের বাড়িতে এখনো জায়গা  দেইনি। আমি আমার ভাইকে বলেছিলাম তোমার ছেলে নিখোঁজ হয়েছে তোমাকে কুলসুমা জানায় নি। নিখোঁজের একদিন পর মাহিন এর লাশ পাবার পর তোমার বউ তোমাকে জানায় তার কারন কি? নিখোঁজের পর কেন তোমাকে জানালো না। তোমার বউ কুলসুমা কি এই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছে? এ কথা জিজ্ঞেস করায় আমি কুলসুমার কাছে খারাপ হয়েছি।  আমার ভাই বদরুল এবং তার বউ কুলসুমাকে  বলেছি আপস হয়ে যাবার পর আর কিছু থাকে না। আমার ভাই বদরুল তার বউর কারনে আমার সাথে আর কথা বলেনা। আজকে এই বৈঠকে আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি আপনাদের সাথে থাকবো।

পশ্চিম সম্পাসির   রহমত মিয়া বলেন একটি হত্যা মামলা  শেষ করা সহজ বিষয় না,  কুলসুমা খুব খারাপ, আপস করার পর সে কি ভাবে মেম্বার, চেয়াম্যান, এবং আপসের  মধ্যস্তকারী নাইওর কে হুমকি দেয়। বিষয়টি  একটা ব্যবস্তা নেয়া প্রয়োজন।আসিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির সভাপতি  শফিক মিয়া বলেন  কুলসুমা একটা বাজে মহিলা। আমরা শুনেছি সে না কি গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে সুদে টাকা লাগায়। সুদের টাকা না দিতে পারলে সেই মানুষকে কুলসুমার ঘরে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে।আব্দুল করিম বলেন ছেলের মৃত্যুর পর আমরা দেখেছি কুলসুমা পোষ্টার বানিয়ে নিজে রাস্তায় এবং বিভিন্ন দেয়ালে লাগিয়েছে ছেলে হত্যার বিচারের জন্য। আর এখন দেখলাম মা বাবা ছেলের লাশের বিনিময়ে ১৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তার মানে মৃত ছেলের লাশ বিক্রি করেছে। গ্রামে থেকে ফাইজলামি শুরু করছে ।

উঠান বৈঠকে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয় আব্দুল করিম,মজবিল মিয়া,আবুল মেম্বার,শফিক মিয়া,গিয়াস উদ্দিন,রহমত আলী,রমজান আলীসহ ১০ সদস্যের একটি কমিটি হয়। এই কমিটি বদরুল ও কুলসুমার সাথে আলাপ করবেন,যে  আপস করে ১৪ লক্ষ টাকা নিয়ে আবার কেন সে মিত্যা মামলা করেন। যদি বদরুল ও কুলসুমা সঠিক রাস্তায় না আসে তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিবো ।

সর্বশেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৬
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও