বরগুনা প্রতিনিধি:- হুট করেই গুজব ওঠে “দাম বাড়বে লবনের, এখুনি না কিনলে পরে ১শ টাকা কেজিতেও পাবেন না” লবন নিয়ে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে বরগুনায়। মুহুর্তেই বাজারে ভিড় জমে ক্রেতাদের। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ, বস্তায় বস্তায় লবন কিনে নেয় তারা। এ সুযোগ লুফে নেয় বিক্রেতারা, কেজি প্রতি দ্বীগুন তিনগুন বাড়িয়ে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ১০০টাকায় দেদার বিক্রি করছেন তারা। তরকারির জন্য খোলা লবন ৩০ টাকা, খাবার লবন ১০০টাকায় বিক্রি করেছেন। দুপুরে দাম বাড়ার গুজব উঠতে শুরু করলেও বিকেল ও সন্ধ্যা নাগাদ গোটা জেলায় তা ছড়িয়ে পরে।
বরগুনার লবনের আড়তগুলোতে নারী পুরুষ ভির জমিয়ে কিনতে থাকে লবন। ঘন্টার পর ঘন্টা সাড়িবদ্ধ দাড়িয়ে ক্রেতারা লবন কিনে নিয়ে যায়। লবন কিনতে আসা ঢলুয়া এলাকার আবুল কালাম বলেন, শুনেছি পিঁয়াজের মত লবনের আকাল পড়বে, তাই কিনতে এসেছি। পরীরখালের বেল্লাল হোসেন বলেন, খবর এসেছে লবনের দাম বাড়বে, তাই আগাম কিনে রাখতে এসেছি।
ব্যাবসায়ী জহির মিয়া বলেন, হঠাত করেই ক্রেতারা লবনের জন্য ভিড় জমায়। লবনের জন্য তাড়াহুড়ো শুরু হয়। ভীর সামলাতে অতিরিক্ত কর্মচারী নিতে হয়। তিনি বলেন, শুরুর দিকে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করলে পরে চাহিদা বাড়ায় দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করেন তিনি। একই অবস্থার সৃষ্টি হয় বাজারের সব পাইকারি ও খুচরা বিক্রতাদের দোকানে। শহরের বাজার সড়কের ব্যাবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, হঠাত করেই বিকেল চারটার দিকে হঠাত ক্রেতারা ভিড় জমায়, লবনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি হুজুগ। ক্রেতারা বুঝতে চায়না, আমি ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক লবন ন্যয্য দামে বিক্রি করি।
বরগুনা চেম্বার অক কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, লবন নিয়ে গুজব সৃষ্টির পরপরই ব্যাবসায়ীদের ডেকে সভা করেছে চেম্বার অব কমার্স। সেখানে লবন নিয়ে গুজব রোধে ও বিক্রিতে দাম বাড়ানো অথবা সংকট তৈরির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
প্রশাসনের কড়াকড়ি:- লবন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয়ে ওঠে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজারে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে। এদিকে পুলিশ বাজারে অভিযান শুরু করে বিক্রি বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করে। কিন্ত মানুষ পুলিশি বাঁধায় দমে যাওয়ার পাত্র নয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে লাঠিচার্জও শুরু করে। সন্ধ্যার পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে লবনের সংকট নেই মর্মে সতর্ক বার্তা জানিয়ে দেয়া হয়।
১ কেজির বেশি লবন কিনলেই এক মাসের জেল:
সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এতে জেলা প্রশাসক জানান, লবনের গুজব বন্ধ করতে মাইকিং ও ব্যাবসায়ীদের ডেকে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ১১টি মোবাইল কোর্ট প্রস্তত রাখা হয়েছে। কেউ যদি এক কেজির বেশি ক্রয় বা বিক্রি করে তবে এক মাসের জেল দেয়া হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, গুজব ঠেকাতে যা যা করার দরকার বরগুনার জেলা প্রশাসন সেসব ব্যবস্থা নিয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য