মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হোসনাবাদ চা বাগানে চা শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরী প্রদান না করায় বাগান বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা।
গত শনিবার থেকে চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতী চলছে। চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মজুরী প্রদান করার দিনে চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরী দিতে পারে নি।
সোমবার হোসনাবাদ চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা বাগানের শ্রমিকরা বাগানের কাজ বন্ধ রেখে ম্যানেজারের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন করছেন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা পার্শবর্তী নন্দরানী চা বাগানের বট তলায় যান। সেখানে শ্রমিকদের সাথে একাত্ততা পোষণ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা, বালিশিরা ভ্যালীর সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণ তাঁতী, উপদেষ্টা সুভাষ রবিদাশ প্রমুখ।
হোসনাবাদ চা বাগান পঞ্চায়েত সাধারণ সম্পাদক মালেক মিয়া বলেন, আমরা এই বাগানে ভালো চিকিৎসা পাই না, রেশন পাই না। এখন কয়দিন পর পর মজুরীর জন্য আন্দোলন করতে হয়। কয়েক মাস পর পর আমাদের মজুরী বন্ধ করে দেয় চা বাগান মালিক। প্রতি বৃহস্পতিবারে আমাদের চা বাগানে মজুরী দেয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় তা আটকে যায়। চা শ্রমিকরা এই মজুরী দিয়ে সারা সপ্তাহের বাজার সদাই ও বাচ্চাদের স্কুলের খরচ করে থাকেন।গত বৃহস্পতিবার আমাদের শ্রমিকদের মজুরী দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে পরেরদিন দিবেন। বৃহস্পতিবার গিয়ে আজ সোমবার এলেও এখন অব্দি কেউ মজুরী পায় নি। এখন টাকা না থাকায় অনেক কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছি।
তিনি বলেন, চা বাগানের বর্তমান মালিক পক্ষ এই চা বাগানের শ্রমিকদের মানুষ বলে মনে করেন না। কয়েকদিন পর পর এভাবে মজুরী বন্ধ করে দেন। বার বার আন্দোলন করে মজুরী নিতে হবে কেন? আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই এই বাগান মালিকের কাছ থেকে চা বাগানটি সরকারের আন্ডারে নিয়ে যাওয়া হোক। আমরা গত শনিবার থেকে চা বাগানের কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছি। আমাদের মজুরী না দিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, আমরা বাগান শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। তারা মজুরী না পেয়ে অনেক কষ্টে চলছেন। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে মজুরী না দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের সাথে আমরা চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা অবশ্যই পাশে থাকবো। হোসনাবাদ চা বাগানের এই ধরনের মজুরী আটকে রাখার ঘটনা আজ নতুন নয়। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই এই চা বাগানের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
হোসনাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের চা বাগানের মালিক বর্তমানে একটু অর্থনৈতিক সমস্যায় আছেন। যার কারনে সঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরী দেয়া যাচ্ছে না। আমি এই চা বাগানে দুই মাস হয় জয়েন করেছি। এই দুই মাসের ভিতরে আগে কখনো এমনটি হয় নি। প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে টাকা আসে। আমি স্টাফ এর মাধ্যমে টাকাগুলো মজুরি হিসেবে বিতরণ করি। আমি মালিকদের সাথে কথা বলেছি। মজুরী আশা করছি দ্রুতই শ্রমিকরা পাবেন।
সর্বশেষ আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ০১:৫৪
পাঠকের মন্তব্য