মৌলভীবাজারের ৭১টি বালুমহাল ইজারা না হওয়ায় প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয় বালুখেকোরা যত্রতত্রভাবে সিলিকা বালুসহ অন্যান্য বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এতে নদী ভাঙন ও চা বাগানে চলাচলের রাস্তা ভেঙে যাওয়াসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড়ি ছড়া, চা বাগান ও পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর।
জেলার ৭টি উপজেলায় অনেক বালুছড়া রয়েছে। এসব বালুমহাল ইজারা দিয়ে প্রশাসন অতীতে কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও কয়েক বছর ধরে নানান জটিলতায় সময়মতো এসব বালুমহাল ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৯টি বালুমহাল টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ৫০টি সিলিকা বালু ও সাধারণ আরও ২১টি বালুমহাল এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আসেনি। এ কারণে বছরে প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এদিকে প্রভাবশালী বালুখেকোদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন বালুমহালে অভিযান চালাতে গেলে বালুখেকোরা আগেই খবর পেয়ে যায়। প্রশাসন সরেজমিন কাউকে দেখতে না পেয়ে ফিরে আসে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেন, বালুখেকোদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ থাকায় তারা প্রকাশ্যেই বালু উত্তোলন করে চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর এলাকার নির্জন এলাকা থেকে প্রভাবশালী বালুখেকোরা দিন-রাত ধরে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে ভাটি এলাকাসহ সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এলাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের জরিমানা করলেও নেপথ্যের রাঘববোয়ালরা অধরাই থেকে গেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর সুমারাই ও শহরঘেঁষা সদর উপজেলার মনু নদের দুর্লভপুর, নদের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর, সিন্ধুরখান ছড়া ও রাজনগর উপজেলার মারুয়াছড়া, ধামাইছড়া, কালামুয়াছড়াসহ নিলামে না যাওয়া আরও প্রায় ৭১টি বালুমহাল ও নদ-নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলিকা বালুমহাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ টাকার, সাধারণ বালুমহাল থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকার, কুশিয়ারা নদী থেকে ৫০ হাজার টাকা ও মনু নদ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা। এই হিসাবে বালুমহালগুলো থেকে মাসে ৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেন তারা। সরেজমিন রাজনগর উপজেলার মারুয়াছড়া, কালামুয়া ও ধামাইছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এসব ছড়া থেকে উত্তোলিত সিলিকা বালু চড়া দরে বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলেছেন, যত্রতত্র বালু উত্তোলন করায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৌলভীবাজারের পরিবেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনগর উপজেলার মারুয়াছড়া এলাকার পানিশাইল গ্রামের দুই ব্যক্তি বলেন, ‘বালু সিন্ডিকেট চক্রের ৭-৮ ব্যক্তি দেদার ওই ছড়া থেকে দিন-রাতে বালু উত্তোলন করছে। তারা ওপর মহলের যোগসাজশে বুক ফুলিয়ে বালু বিক্রি করে। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পান না।’
তারা জানান, এক ট্রাক বালু ৩ হাজার টাকা ও নৌকা ভর্তি বালু ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে তারা ওই ছড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করে থাকে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এসব এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। বালু সিন্ডিকেট চক্র রাতের আঁধারে তাদের কাজ করে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ রাজনগরের ইউএনও ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, ‘মারুয়াছড়া, কালামুয়া ও ধামাইছড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন তথ্য পাইনি। পেলে আমরা অভিযান চালিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’ অনেক জায়গায় বালুমহাল ইজারা হয়নি স্বীকার করে রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আব্দুল হক বলেন, ‘বালুমহালগুলো ইজারা দিতে কোনো সমস্যা নেই, পর্যায়ক্রমে ইজারায় যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও বালু উত্তোলন হলে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি।
সর্বশেষ আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩৩
পাঠকের মন্তব্য