বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। যেভাবে বেড়েছে তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি দামের কারণে ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ ভোক্তা।
মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে।
সপ্তাহজুড়ে দেশে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। শুধু ডিম নয়, বৃষ্টির অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে বাজারে চার ধরনের নিত্যপণ্যে অস্থিরতা রয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ, সবজি ও মাছের দামও। বিশেষ করে সবজির মধ্যে টমেটোর দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে- এমন গুজবে অনেককে চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য কিনতে দেখা গেছে। এতে বাজারের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে চলছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজও কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এর সঙ্গে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। ইলিশের ভরা মৌসুমেও কমছে না মাছের দাম। বাজারে ৬০০ বা ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে রুই-কাতলার কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রূপচাঁদা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আইড় ৮০০ টাকা, পোয়া এক হাজার টাকা, তপসী ১১০০ টাকা, বাইলা ১৪০০ টাকা, পুঁটি ১২০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, চিড়িং ৭৫০ টাকা, টেংড়া ৬০০ টাকা, ফলি ৩০০ টাকা, বাছা ৪০০ টাকা, পাবদা ৩০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা ও কই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের মাছ বিক্রেতা সোহরাব বলেন, বাজারে সব মাছের দাম বাড়তি। ইলিশ মাছের দাম বেশি থাকায় অন্য মাছের দামও কমছে না। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় মাছের দাম বাড়ছে।সেগুনবাগিচা বাজারের মাছ বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের দাম বেশি থাকায় অন্য মাছের দামও কমছে না। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় মাছের দাম বাড়ছে।
এদিকে হঠাৎ বাজারে ডিমের দামে অস্থিরতা নিয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমান উল্লাহ বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। এর ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কমলে, বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ বাড়লে ডিমের ওপর থেকে চাপ কমবে। তখন হয়তো দাম কমতে পারে।
তবে ডিমের দাম বাড়লেও বাজারে মুরগির দামে সপ্তাহ ব্যবধানে খুব একটা হেরফের হয়নি। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সোনালি বা কক মুরগির কেজি ৩২০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা।
সর্বশেষ আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪২
পাঠকের মন্তব্য