আওয়ামী লীগের চলতি সংসদ সদস্যদের একটি বড় অংশ আগামী নির্বাচনে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মোট সংসদ সদস্যের ৩ ভাগের এক ভাগ বাদ পড়তে পারেন। দলীয় নেতারা বলছেন, এবারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সেই ব্যক্তিকেই দেওয়া হবে যিনি জয়লাভ করে আসতে পারবেন। বিষয়টি দলীয় প্রধান অনেকবার স্পষ্ট করে বলেছেন। দলের অনেক নেতার কাছেও বলেছেন। সর্বশেষ গত রোববারের বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন দলীয় প্রধান। আওয়ামী লীগের আগামী সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য করা জরিপগুলোতে ১শ’এর অধিক সংসদ সদস্য খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
গত ৬ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়ও আওয়ামী লীগ প্রধান আগামী নির্বাচনে দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। ভালো-মন্দ, কানা-খোঁড়া যাই হোক প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আপনারা তাকেই জয়ী করার জন্য কাজ করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, মনোনয়ন যাকেই দিই। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না, সারা দিন কাজ করি। সংগঠনের কাজও করি। কোথায় কার কী অবস্থা সেটা কিন্তু ছয় মাস পর পর জরিপ করি। আমাদের এমপিদের কী অবস্থা, অন্য জনপ্রতিনিধিদের কী অবস্থা, তার একটা হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া। সে কথাটা মাথায় রেখে, আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যখন মনোনয়ন দেব অবশ্যই আমাদের একটা হিসাব থাকবে যে কাকে দিলে আমরা আসনটা ফিরে পাব। দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, অনেক এসএমএস দিলে, গিবত গাইলেই কিন্তু আমি তাদের কথা শুনব এমন না। এটা আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। কারণ আমার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। ৪২ বছর আপনাদের সঙ্গে আছি। ১৯৮১ সালে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এরপর কিন্তু আমি প্রতিটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখেছি। ফলে আমার কিন্তু ধারণা আছে। কার অবস্থা কী সেটা বুঝেই কিন্তু আমরা মনোনয়ন দিই।দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনের মনোনয়নও জন্য একাধিক জড়িপের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দলের অনেক নেতাকে সংসদ নির্বাচন করতে এলাকায় গিয়ে কাজ করতে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা নিশ্চিত।
গত রোববারের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, দলীয় মনোনয়ন ঠিক করতে তিনি ছয় মাস পরপর জরিপ পরিচালনা করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে সর্বশেষ একাধিক জরিপের ওপর বিশ্লেষণ প্রায় শেষ করা হয়েছে। এসব জরিপের ফলাফলে একশ এর অধিক জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের প্রাপ্ত নম্বর খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকে বাদ পড়তে পারেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, জরিপ মেনে হয়তো সবাইকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না। কয়েকজন নানা যোগাযোগ এবং ক্ষমতার বলে টিকে যেতে পারেন। রাজনৈতিক নানা মেরুকরণের কারণে ভালো নম্বর পাওয়া কিছু কিছু মন্ত্রী-সংসদ সদস্যও বাদ পড়তে পারেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কোন কোন সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য অনেক আগে থেকেই একাধিক জরিপের কাজ চলেছে। যার কাজ ইতিমধ্যে শেষের পথে। জরিপের ফল বলছে, আগামী নির্বাচনে এবার ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এসব এমপিদের মধ্যে কেউ কেউ বার্ধক্য জনিত কারণে আগামী নির্বাচন করতে পারবেন না, অনেকের এলাকায় জনপ্রিয়তার কমে গেছে। আবার অনেক এমপি দূর্নীতি ও নিজ দলে অজনপ্রিয় হয়ে কারণে এবার এমপি হতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের অনেক উপজেলায় সংসদ সদস্যদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে তারা এখন আওয়ামী লীগের নেতাদেরও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। দলীয় নেতাদের বাইরেও এলাকার জনগণের মধ্যেও তাদের জনপ্রিয়তা এখন নিচের দিকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি বড় অংশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন না এদের কেউ কেউ।দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আমার মনে হচ্ছে, এবার জেলার সংসদ সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন বাদ পরতে যাচ্ছেন। এ বিষয়টি দলীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, দিনাপুর জেলা আওয়ামী লীগের পরিস্থিতি তিনি সবটাই জানেন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও দলীয় সূত্রগুলো বলছেন, ঢাকার বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও আগামী নির্বাচনে বাদ পরতে যাচ্ছেন। তবে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে যিনি প্রার্থী হচ্ছেন তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সে ক্ষেত্রে সমীকরণ ভিন্নরকম হতে পারে। তখন মহাজোটে নির্বাচন হবে, আর সে ক্ষেত্রে ঢাকায় বদ কোন রদবদল হয়তো হবে না।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটে নির্বাচন না হলে এবার ১৪ দলীয় জোটের শরিক অনেকেই এবার আসন বেশি পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও জনপ্রিয়তা দেখেও মনোনয়ন দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের অনেক বর্তমান প্রভাবশালী নেতার বদলে সেখানে পেশাজীবিদের কেউ কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন।
আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাউদ্দিন নাছিম বলেন, যার জনপ্রিয়তা, সততা, দক্ষতা, দলীয় সক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তি, এবং যিনি দলের নীতি আদর্শের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
তৃনমূলের নেতাদের বিতর্কিত এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা জনপ্রিয়তা নষ্ট করেছে তাদের তো বাদ দেওয়াই যেতে পারে। তাদের কেন মনোনয়ন দেওয়া হবে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সে সময়ের ৫৬ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাননি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন সংসদ সদস্য।
সর্বশেষ আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০১:২০
পাঠকের মন্তব্য