মৌলভীবাজার জেলা আদালতে নন জুডিসিয়াল, জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি জাল শনাক্তের পর থেকেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
আর এই সুযোগে আদালত চত্বরে কয়েকজন স্ট্যাম্প ভেন্ডারের (স্ট্যাম্প বিক্রেতাকারী) বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রির মাধ্যমের বাজারে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ উঠেছে। জাল স্ট্যাম্পের কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে বাড়তি দামে স্ট্যাম্প কিনছেন বিচারপ্রার্থীরা। আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে বাড়তি দাম নিচ্ছে স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার আদালত এলাকায় অনুমোদিত ভেন্ডারের সংখ্যা ১শ ২৯ জন। এসব ভেন্ডার ৩৪টি ক্ষেত্রে কোর্ট ফি, স্ট্যাম্পসহ যাবতীয় ফরম বিক্রি করেন। এছাড়া আইনজীবী সমিতির ৬ জন ভেন্ডার বেইলভন্ড, ওকালতনামা, হাজিরা ফরমসহ বার সংলিষ্ট ফরম বিক্রি করেন। নিবন্ধনপ্রাপ্ত ভেন্ডাররা ট্রেজারি থেকে সংগ্রহ করে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পান সরকার থেকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, জজ আদালতের আশপাশে সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভ্যান্ডাররা টেবিল নিয়ে, আবার অনেকে কোর্টমার্কেটে দোকান নিয়ে স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন। বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষ নানা প্রয়োজনে এসব স্ট্যাম্প কিনেন। সাত মাসের বেশি সময় ধরে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।
২ টাকার কোর্ট ফি ৫ টাকায়, ২০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প ৩০ টাকা ও কোর্ট ফি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বুধবার দুপুরে রাজনগর উপজেলা থেকে আসা রুপসান মিয়া বলেন, মামলার জন্য উকিল সাব স্ট্যাম্প কেনার জন্য বলেছেন, তাই দাম বেশি হলেও তো কিনতেই হবে। আরেক বিচারপ্রার্থী সদর উপজেলার রইছ আলী বলেন, স্ট্যাম্প বিক্রেতা যে
আচরণে দাম চাইল, এতে আমার বলার কিছুই ছিল না। তাদের লাগাম ছাড়া দাম নেওয়ার বিষয়ে দেখার কেউ নেই।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার বর্ধন জানান, জেলায় ১শ ২৯ জন নিবন্ধনপ্রাপ্ত ভেন্ডার আছেন। এরমধ্যে সদরের ভেন্ডাররা ১শ টাকার স্ট্যাম্পে ১ টাকা পঞ্চাশ পয়সা, ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকার কোর্ট ফিতে ৩ টাকা পয়ট্টি পয়সা কমিশন পান।
এছাড়া উপজেলায় ১শ টাকার স্ট্যাম্পে ২ টাকা, ৫টাকা থেকে ৫০ টাকার কোর্ট ফিতে ৪ টাকা ঊনসত্তর পয়সা কমিশন পান। ভেন্ডাররা চাহিদা দিলে তা সরবরাহ করি। তবে গত কয়েক মাস ধরে কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্পের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ২, ৫ ও ১০ টাকার কোর্ট ফি নেই বললেই চলে।তিনি জানান, জুন মাসে নন-জুডিশিয়াল, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রি হয়েছে ৮৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৫ টাকার। কোর্ট ফি ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৫ টাকার। নিবন্ধনপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডার শাহীন মাহমুদ বলেন, সরকারি দামেই বিক্রি করা হয়। তবে কিছুদিন ধরে স্ট্যাম্প সংকটে কেউ কেউ একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন, সেটা আমার জানা নেই।
আইনজীবী সমিতির ভেন্ডার রসিক আহমদ বলেন, যে সকল জাল স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে তার সিরিয়াল মৌলভীবাজারের নয়। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। উত্তরে জেলা প্রশাসক লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রমা কান্ত দাসগুপ্ত বলেন, জেলায় কোর্ট ফি, স্ট্যাম্পের সংকট ও বাড়তি দামে বিক্রির বিষয়টি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আমরা জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। দ্রুতই সমাধান হবে। সংকট থাকলেও দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে। তিনি জানান, আদালতে বেশ কিছু জাল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি দাখিল করা হয়েছে বলে জজরা আমাদেরকে অবগত করেছেন। কে বা কারা, কোন ভেন্ডাররের কাছ থেকে গেছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পাবলিক প্রসিকিউটর রাধাপদ দেব সজল বলেন, দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও একই ঘটনা ঘটছে। স্ট্যাম্প ইইডি লাইট ডিটেক্টর দিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে স্ট্যাম্প জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এর কারণে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ০১:৪০
পাঠকের মন্তব্য