বর্ষার পানিতে এখন খাল-বিল, নদী-নালায় চড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছের পোনা। কিছুদিনের মধ্যেই মাছগুলো বড় হবে। কিন্তু এরই মধ্যে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে এক শ্রেণির মৎস্য শিকারি বেড় ও সুতি জাল দিয়ে অবাধে পোনামাছ নিধন করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জুড়ী নদী থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন খালের উৎস মুখ, ডোবায় পানি প্রবেশ ও বের হবার পথে নানা জাতের জাল পেতে পোনা মাছ ধরা হচ্ছে। হাকালুকি হাওরে প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছোট-বড় শতাধিক অবৈধ বেড় জাল ও কাপড়ী জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। বড় মাছের সাথে পোনা মাছও ধরা হয়। হাওরের এ মাছ গুলো গাড়ীতে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শ্রমিক জানান, হাওরে নতুন পানি এসেছে। বড় মাছ বেশ নাই, তাই তারা ছোট মাছ ধরেন। জালে চাপিলা, মলা, কেছকি মাছের পোনা বেশি আসে।
পিকআপ চালক তারেক জানান, তার গাড়িতে করে প্রতিদিন ৩০ ক্যারেট মাছ নিয়ে রাতে ঢাকা যান। যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহ পুরে বিভিন্ন আড়তে মাছ দিয়ে আসেন। এভাবে প্রতিদিন ৫-৬ টি গাড়ী মাছ নিয়ে যায়। এসবের বেশির ভাগই পোনা মাছ থাকে।পোনামাছ নিধন নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তারপরেও কেন এ কাজ করছেন- এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্যজীবী বলেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পেট চালাতে এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া এখন বিকল্প কোন কাজ নেই।
কাউলি সেতু সংলগ্ন খালে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, তার বাড়ী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। তিনি এ ছোট নদীতে ভেল জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। বড় মাছ না থাকায় পোনা আসে তার জালে। স্থানীয় নৌকা ও জালের মালিককে দৈনিক ৩০০০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে এ জায়গায় জাল দিয়ে মাছ ধরেন। হাকালুকি হাওরে রাতে মাছ ধরা কয়েকজন জেলে জানান- তারা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হাওরে জাল নিয়ে যান। ফজর পর্যন্ত মাছ ধরেন। কোন সময় সারাদিন মাছ ধরে রাতে বিক্রি করেন। দৈনিক মজুরি হিসেবে তাদের ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয়।মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এ বলা হয়েছে, নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন মৎস্য সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত কেউ প্রতিবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর (আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ ইঞ্চি) নিচে থাকা কাতলা, রুই, মৃগেল, কালবাউশ, ঘনিয়াসহ দেশি প্রজাতির মাছ নিধন করতে পারবে না।
চাষের উদ্দেশ্যে মাছ ধরতেও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। অন্যদিকে মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে কম ফাঁস বিশিষ্ট জাল ব্যবহার করা যাবে না। আইন অমান্য করলে ১ মাস হতে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্রশাসনের চোখের সামনে এহেন কাজ চলতে থাকলেও কোন প্রতিকার না থাকায় এ অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে অপরদিকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, বড় মাছের পোনা ধরার ক্ষেত্রে আইনের বাধ্যবাধকতা থাকলে ও ছোট মাছের পোনা ধরার ক্ষেত্রে আইনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
সর্বশেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ২৩:২৪
পাঠকের মন্তব্য