অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দেওড়াছড়া বধ্যভূমি’র পবিত্রতা !

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি ॥

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার দেওড়াছড়া বধ্যভূমি’র পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে অযত্ন আর অবহেলায়। এ যেন দেখার কেউ নেই। সীমানা নির্ধারণ করা হলেও সীমানা প্রাচীর বা এলাকা সংরক্ষণে ভ্রক্ষেপ নেই কারো। শুধু সামনের দিকে হাফ দেয়াল তোলে গেইটের জন্য রাখা হয়েছে উন্মুক্ত প্রবেশপথ।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার এক শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে কালেঙ্গা-দেওড়াছড়া রাস্তা সংলগ্ন এ বধ্যভূমিতে। এখানে উমেশ সবর, হেমলাল কর্মকার, লক্ষনমূড়া, বিজয় ভূমিক, আকুল রায় ঘাটুয়ার, মাহীলাল রায় ঘাটুয়ার, বিনোদ নায়েক, সুনারাম গোয়ালা, প্রহল্লাদ নায়েক, মংরু বড়াইক, বিশ্বনাথ ভুঁইয়া, শাহজাহান ভুইয়া, ভাদো ভুইয়া, আগুন ভুইয়া, জহন গোয়ালা সহ একসাথে ৫৮ জন চা শ্রমিককে হত্যা করে পাকবাহিনী। সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান মোহিনী গোয়ালা, রবি গোয়ালা, মহেশ কানু, নারাইল কুর্মী সহ ১২ জন। আহত অবস্থায় ভারতে গিয়ে এই ১২ জন চিকিৎসা করান। তাদের মাধ্যমেই পরবর্তিতে জানা যায় এই নির্মম হত্যকান্ডের খবর।

স্থানীয়রা বলছেন, এখানে যাদেরকে শহীদ করা হয়েছে, তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া বাঙালি জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সেই বিবেচনায় দেওড়াছড়া চা বাগানের এ বধ্যভূমি উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পাওয়া থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এলে শুধুমাত্র পরিস্কার করা হয়। স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।

দেওড়াছড়া চা বাগানের এ প্রজন্মের তরুণ এস.এম. ফারহান ও মোঃ অন্তরের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় যুবকরা বধ্যভূমি মাঠে স্মৃতিস্তম্ভের সামনে খেলাধুলা করে। তাছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় এখানে চষে বেড়ানো গরু-ছাগল স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে উঠে যায়। এতে করে আমরা মনে করি শহীদ বেদীর অমর্যাদা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাগান যুব শ্রমীকদের ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলা চলছে। দর্শকও ছিলেন জনা বিশেক। ৫/৬ জন দর্শক জুতা পায়ে নিয়ে বেদীতে বসে খেলা উপভোগ করছেন। ১০/১১ বছর বয়সী একজন জুতা পায়ে বেদীর চূড়ায় উঠে খেলা দেখছেন!

কালেঙ্গা বাজারের দক্ষিণ দিকে পাকা রাস্তায় একটু  সামনে এগুলেই হাতের ডানে দেওড়াছড়া চা বাগানের ভিতরে রহিমপুর ইউনিয়নে এই বধ্যভূমির অবস্থান। সীমানা প্রাচীর না থাকায় গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে বধ্যভূমির মাঠ। প্রবেশ পথে কাঁদার ছোড়াছুড়ি। নেই কোন সাইনবোর্ড। নির্মাণ কাজের মান ভালো না থাকায় বেদীর ফ্লোরে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। নির্জনস্থান হওয়ায় দিনেরবেলাই বসে গাঁজাখোরদের আড্ডা। অযত্ন আর অবহেলায় দেওড়াছড়া বধ্যভূমি’র পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। এ বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং এর মর্যাদা রক্ষার্থে তারকাঁটা দিয়ে হলেও বেড়া দেওয়া প্রয়োজন। সচেতন মহল আশা করেন, অরক্ষিত এ বধ্যভূমির প্রতি কর্তৃপক্ষ অচিরেই সুদৃষ্টি দেবেন।

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩, ১৫:৩৯
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও