মৌলভীবাজারে সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কোরবানির চামড়া বিক্রেতারা

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।।

মৌলভীবাজারে মৌসুমী চামড়ার হাটে সিন্ডিকেট চক্র: কোরবানি দাতা ও ব্যাপারীদের মাথায় হাত। 

বাংলাদেশে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আজহা। মৌলভীবাজারের সিন্ডিকেটের কারনে ব্যাপারীদের মাথায় হাত। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি চামড়াশিল্প,সংকটে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছর কোরবানি ঈদের মৌসুমে গ্রামে ঘুরে ঘুরে পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন এলাকার ছোট ছোট চামড়া ব্যাবসায়িরা সংগ্রহ শেষে সেগুলো ঐতিহ্যবাহী বালিকান্দি গ্রাামে চামড়া বাজারে কিছুটা লাভে বিক্রি করতেন।

ব্যবসা করতে গিয়ে গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে অনেক টাকা  লোকসানের অভিযোগ করেন। লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়ার দামে অসন্তুষ্ট কোরবানিদাতারা।

অপরদিকে ছাগলে চামড়ার ছিলো না কোন ক্রেতা। কেহ কেহ ফেলে দিচ্ছে বা পুতে ফেলছে। এমন অবস্থা বিরাজ করেছে প্রবাসী অধুষ্যিত মৌলভীবাজার জেলায় কুরবানী পরবর্তী চামড়ার ব্যবসায়।

প্রবাসী অধুষ্যিত মৌলভীবাজারে এবছর কুরবানীর পশুর চাহিদা ছিলো প্রায় ৮০হাজার। শেষ মূহুতে এসে চাহিদা পূরন হলেও কুরবানীর চামড়া নিয়ে চরম হতাশা বিরাজ করছে কুরবানীর দাতা থেকে শুরু করে সাধারন খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে।

অপরদিকে লাভবান হচ্ছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে নারাজ। ফলে অনেকে হতাশ হয়ে চামড়া ফেলে দিয়েছেন খাল বিল ও নদীতে।

মৌলভীবাজার অন্যতম চামড়ার ব্যবসায়ীক এলাকা বালিকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। কুরবানীর পর সারা জেলা থেকে চামড়া মজুত হয় এই গ্রামে। সেখানে সাদারন মানুষ থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী,মাদ্রাসা কতৃপক্ষ গরুর চামড়া নিয়ে আসেন বালিকান্দিতে।

লাখ টাকার ভেতরে গরুর চামড়া সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০থেকে ৩০০টাকায়। অথচ সরকার নিধারিত দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা।এনিয়ে দিশেহারা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা, তারা  জানান- মূল পুঁজি ওঠা তো দূরের কথা,প্রক্রিয়াজাতকরণের লবণ ও পরিবহণ খরচই উঠবে না তাদের।

চামড়ার ব্যবসা এখন পুরো সিন্ডিকেটের হাতে। প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এখন জিম্মি। সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। আর চামড়ার ব্যবসা করবেন না বলেও অনেকে জানান। চামড়ার বাজারকে একটি চক্র নিয়ন্ত্রন করার ফলে ৪০০টাকার চামড়া কিনে বিক্র করতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা এর চেয়ে বেশি দাম দিতে নারাজ।

বড় গরু তেকে মাজারি গরুর চামড়া প্রতি দেড়শত থেকে তিন শত টাকা দাম ধরা হচ্ছে। অথচ সেই চামড়া প্রকৃত দামে বিক্রি করলে চার গুন বেশী দাম হওয়ার কথা। কিন্তু তারা সেটি পাচ্ছেন না। আর ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না। ফলে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে, কেউ নদীতে ফেলে দিচ্ছেন।

এবিষয়ে কুরবানী দাতা কয়েকজন জানান- পশুর চামড়া নিয়ে হতাশা  কোরবানি দাতারা। অধিকাংশ চামড়া এতিমখানাতে দিয়ে দিচ্ছেন। আর এতিমখানা কতৃপক্ষ সেই চামড়া বালিকান্দিতে এনে বিক্রি করতে গিয়ে মৌসুমী সিন্ডিকেটদের কারনে উচিৎ   দাম পাচ্ছেনা। এবিষয়ে চামড়া প্রক্রিয়াকাজাত কাজে নিয়েজিত কয়েকজন বলেন- তারা যেহেতু চামড়া কিনে আবার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। লবনের দাম ট্রান্সপোট খরচ সব কিছু বাড়তি। তাছাড়া চামড়া নষ্ট না হওয়ার জন্য তারা লবন দিয়ে রাখতে হয়। আবার সেটা ঢাকাতে পাঠাতে গিয়ে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। ফলে ট্যানারি পযন্ত পৌছতে গিয়ে যে খরচ সেটি তোলা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায় থেকে কম দামেই চামড়া কিনতে হয় তাদের।

এবিষয়ে আজমল খান, সহ সভাপতি. মৌলভীবাজার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি তিনি বলেন- গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার মূল্য কম। তাই এবার কম চামড়া কিনেছি। বাজারে কম ট্যানারি মালিক এসেছেন। তাই কম মূল্যেই চামড়া বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যাপারীরা। এখান থেকে কিনে লাভে ট্যানারিতে বিক্রি করবেন। স্থানীয়রা ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছি ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

আবু সুফিয়ান,সহ সভাপতি দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাসিট্র, মৌলভীবাজার তিনি বলেন-চামড়া ব্যবসায় এমন মৌসুমী সিন্ডিকেট এবং দাম না উঠা নিয়ে প্রশাসনের জরুরি ভিত্তিতে মনিটরিং করা প্রয়োজন। কারন সরকারের বেধে দেয়া দাম অনুযায়ী চামড়া বিক্রি করতে হবে। কেউ সেটা না করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। চামড়া খাতের উন্নয়নে দরকার সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রয়োজনীয় উদ্যেগ গ্রহনে আসা প্রয়োজন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩, ০০:২৫
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও