প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ২৬০ বাংলাদেশি আমেরিকানের চিঠি

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন ২৬০ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নাগরিক। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ঠিকানায় পাঠানো ঐ চিঠিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশী আমেরিকানরা (এবং কানাডিয়ানরা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান এবং মাননীয় বারোজন কংগ্রেসম্যানের সমর্থনে এ চিঠিটি পাঠাচ্ছি, যারা বাংলাদেশে বর্তমানে ধ্বংস হওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ১২ জন কংগ্রেসম্যানের চিঠির সমর্থনে দুইশত ষাট বিশিষ্ট বাংলাদেশি আমেরিকান বিবৃতি দিয়েছেন। ১৬ জুন নিউইয়র্ক থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশি আমেরিকানরা এ বিষয়ে তাদের মনোভাব স্পষ্ট করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি ঘোষিত নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটি চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গত দেড় দশকের একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতি, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোট কারচুপির কারণে গণতন্ত্র আজ বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। বঞ্চিত মানুষের মধ্যে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, গুম-খুন-বিচারহীন হত্যার শিকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

জনগণ ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতার অভাব মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে ধ্বংস করেছে। চলমান স্বৈরাচার রাষ্ট্রকে মারাত্মক আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। দেশকে অরাজনৈতিক করার জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে বিরোধী দলের সদস্যদের হত্যা করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক সমাবেশ ও মতামত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উপেক্ষা করে সরকার আরেকটি কারচুপির পরিকল্পনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র এ পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ সুগম করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বাচনে যেতে পারে এবং ভয় ছাড়াই তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন ভিসা নীতিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে, ১৭ মে এবং ৮ জুন, উভয় দলের মোট ১২ জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান তাদের দুই অংশের চিঠিতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে জোরালোভাবে দাবি জানান। বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতি দমনের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের বিষয়টিও তাদের দাবিতে উঠে এসেছে। তারা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এসব সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী বলে মন্তব্যকারীরা মনে করেন।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন ও স্বার্থকে উপেক্ষা করে তাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রমাগত উসকানি দিয়ে আসছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান শীর্ষে। পোশাক আমদানিতে এক নম্বর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশে। এদেশে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। করোনার সময় বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ১১.৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দিয়েছে দেশটি। দুর্যোগ ও দারিদ্রের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়িয়েছে। আমরা বাংলাদেশি আমেরিকানরা মনে করি হাসিনা সরকারের আচরণ দেশের জনগণের সমর্থন ও স্বার্থের পরিপন্থী। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশি আমেরিকানরা সমর্থন ও স্বাগত জানায়। সর্বশেষে চিঠিতে সাক্ষরকারী ২৬০ জন বাংলাদেশী আমেরিকানের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ০০:৪৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও