মহান রাব্বুল আলামীন হজ্জের জন্য মাস সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘হজ্জের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের ওপর হজ্জ আরোপ করে নিলো, তার জন্য হজ্জে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা ভালো কাজের যা করো আল্লাহ তা জানেন এবং পাথেয় সংগ্রহ করো, নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। আর হে বিবেকসম্পন্নগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৭)।
এই আয়াতে কারীমায় হজ্জের উত্তম পাথেয় বলতে তাকওয়া বা আল্লাহভীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, মানুষের ব্যক্তি ও সমষ্টি জীবনে ইসলামী জীবনাদর্শ বাস্তবায়ন সম্পূর্ণভাবে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ওপর নির্ভরশীল। তাকওয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তির পক্ষে ইহজগতে সৎ ও কল্যাণকর কাজ করে পরজগতে মুক্তি ও নিস্কৃতিলাভ সম্ভব নয়। কারণ, মানুষের মন মজ্জাগতভাবে সব সময় মানুষকে অসৎ ও অনিষ্টকর কাজ করার জন্য ওয়াসওয়াসা দেয় এবং আল্লাহদ্রোহিতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। কাজেই তাকওয়া ও আল্লাহভীতি ছাড়া এসব কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা মোটেই সম্ভব নয়।
তাই, হজ্জ আদায়ের প্রাক্কলে তাকওয়া ও আল্লাহভীতিকে উত্তম পাথেয় হিসেবে গ্রহণ না করলে সুষ্ঠুভাবে হজ্জ আদায় করা সম্ভব হবে না। এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বেশ কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। যেমনÑ (ক) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা যে, আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করেছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’। (সূরা হাশর : আয়াত ১৮)। (খ) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’, (সূরা তাওবাহ : আয়াত ২১৯), (গ) ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই সফলকাম’, (সূরা নূর : আয়াত ৪২)। (ঘ) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও যারা সৎকর্মশীল’। (সূরা নাহল : আয়াত ১২৮)।
আর তাকওয়া অবলম্বন করার সুফল সুদূরপ্রসারী। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের পরওয়ারদিগারকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান’। (সূরা মুলক : আয়াত ১২)। অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: ‘আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল’। (সূরা নাযিয়াত : আয়াত ৪০-৪১)। এখানে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানো বা স্বীয় প্রতিপালকের অবস্থানকে ভয় করার বিষয়টি দু’ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। যথাÑ (এক) স্বীয় প্রতিপালকের সামনে হাজির হয়ে হিসাব নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে, এ বিশ্বাস পোষণ করে প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে যে নিজেকে হেফাজত করেছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (দুই) প্রতিপালক ও রবের যে সুমহান মর্যাদা তাঁর এ উচ্চ মর্যাদার কথা স্মরণ করে সে অন্যায় অশ্লীল কাজ এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থেকেছে সে জান্নাতে যাবে। এরই বিশ্লেষণাত্মক বিবরণ হাদীস শরীফে উক্ত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ পর পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় করো, কেননা এ দু’টি কাজ দারিদ্র্য ও গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন রেত লোহার মরিচা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর মকবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’। (জামেয়ে তিরমিযী : হাদীস ৩/৮১০)।
সর্বশেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩, ০১:৩২
পাঠকের মন্তব্য