জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি বলেছেন, দলীয় গু-াবাহিনী দিয়ে নির্বাচনের কেন্দ্র দখল করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা কুক্ষিগত করে ফেলেছি। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলেই ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের হাত-পা সরকারের কাছে বাঁধা। এই কমিশন কারচুপির অভিযোগে গাইবান্ধায় একটি উপ-নির্বাচন বাতিল করেছে। সেই নির্বাচনের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলো অনেকে। কিন্তু কারোরই শাস্তি হলো না। অভিযুক্ত অনেকেই নাকি পুরস্কৃত হয়েছে। পরবর্তীতে সেই নির্বাচন আবার হলো ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই। নির্বাচন কমিশনকে মূলত অসহায় ও অকার্যকর করা হয়েছে। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের এবার বিদেশিদের চাপে সরকার বেকায়দায় পড়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিটি সরকারই নির্বাচন ব্যবস্থা নিজেদের আয়ত্তে রাখতে চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারাই আইন পরিবর্তন করে, দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। নির্বাচন এলেই বিরোধীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে। কখনো সেই আন্দোলন সফল হয়েছে, কখনো হয়নি। এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন সফল হবে কিনা, ভবিষ্যতে দেখা যাবে। ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা নিজেদের আয়ত্তে এনে সরকার গঠন করতে চাইবে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
জিএম কাদের বলেন, এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদেশিদের একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে। বিদেশিদের এই চাপ সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে, নির্বাচন পর্যন্ত। তিনি বলেন, যে দলই ক্ষমতায় যায়, তারাই ক্ষমতা ভোগ ও অপব্যবহার করে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কথা তাদের মনে থাকে না। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্ন এলেই, তারা জনগণের রায় ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে চায়।
জবাবদিহিতা নিয়ে জাপা চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদরা কখনোই স্মরণ করে না যে, জনগণই দেশের মালিক, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকলে দুর্নীতি, দুঃশাসন, বৈষম্য, অত্যাচার, টাকা পাচার ও শোষণ থাকে না। জবাবদিহিতা থাকলে বরং উন্নয়ন স্থায়িত্ব হয়, দেশ উন্নত হয় এবং দেশের মানুষ উন্নয়নের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। ক্ষমতায় গেলেই লাগামহীনভাবে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণকে তোয়াক্কা না করা- এগুলোই ঘটে।
জিএম কাদের বলেন, নেতৃত্বের কারণে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আদর্শ নয়। লোভ-লালসা ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে রাজনীতি চলছে। ব্যবসা ও লুটতরাজের জন্যই যেন রাজনীতি। এটা থেকে আমরা বের হতে পারছি না। আমাদের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরাও যেদিকে সুবিধা পায়, সেদিকেই চলে। দেশ ও নীতি-নৈতিকতার কথা কেউ ভাবে না। এটা শুধু বর্তমান সরকারের আমলেই নয়, এর আগে যারা ছিল, তারাও একই কাজ করেছে।
সর্বশেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ০১:১৩
পাঠকের মন্তব্য