রাজ্যের পরিস্থিতিকে লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া বা সিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করে মণিপুরের একজন সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, তার রাজ্য এখন ‘স্টেটলেস’– যেখানে মানুষের জীবন ও সম্পত্তি ইচ্ছেমতো কেড়ে নেওয়া চলে।
দুদিন আগেই দেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর কে রঞ্জন সিংয়ের ইম্ফলের বাসভবন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আরও বহু বিজেপি নেতা-মন্ত্রীকেও আক্রমণের নিশানা করা হচ্ছে।
মণিপুরের পরিস্থিতির জন্য বিজেপির রাজনীতিকে দায়ী করে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, মণিপুর যে জ্বলছে এবং সেখানে একের পর এক প্রাণহানি হচ্ছে, সেই ব্যর্থতার দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন।
এদিকে দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ নাগরিক সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী এক যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছেন, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতিই মণিপুরে এই সহিংসতার সূচনা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই সংকট নিয়ে মুখ খুলে জবাবদিহি করতে হবে– এই দাবিও জানানো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
গত মাসে মণিপুরে মেইতেই ও নাগা-কুকি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যে রক্তাক্ত সংঘাত শুরু হয়েছিল তা সাময়িকভাবে থিতিয়ে এলেও গত তিন-চারদিনে তা আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) রাত দশটা নাগাদ বিষ্ণপুরের কোয়াকটা শহরে ও চূড়াচাঁদপুর জেলার কাংভাই গ্রামে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে প্রায় চার-পাঁচশ রাউন্ড ফায়ারিং করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তখন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে গুলির ঘটনা ঘটেই চলেছে। তারা আরও বলছেন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকরা এক এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন এবং তারপর সংঘবদ্ধভাবে সরকারি সম্পত্তি বা নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা চালানোর বা জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় মধ্যরাতেও টহল দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে রঞ্জন সিংসহ বহু বিজেপি নেতার বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে।
রাজ্যের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা এবং বিদ্যুৎ ও বনমন্ত্রী টি বিশ্বজিৎ সিং যে বিধানসভা কেন্দ্রে থেকে জিতে এসেছেন, সেই থংজুতে বিজেপির প্রধান দপ্তরটিও হামলাকারীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যের একমাত্র নারী ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও কুকি নেত্রী নেমচা কিপগেনের ইম্ফলের বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার সময় তিনি অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না।
সর্বশেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩, ১৩:২৫
পাঠকের মন্তব্য