সিলেট সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধেয়ে আসছে বন্যা। গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে এবং ভারতে ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটা হবে স্বল্পমেয়াদি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা নিয়ে গতকালের প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উজানে অর্থাৎ ভারতে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রæত বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যে সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে সেগুলো হলো, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা, মগড়া ইত্যাদি। এসব নদীর পানি দ্রæত বেড়ে বিপদসীমা পার হয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এসব জেলার হাওর ও নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও ধরলা অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে এ নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে দ্রæত বাড়তে পারে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, জুন মাসের জন্য বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে বলা হয়, জুন মাস দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা, তিস্তাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যমুনা নদী বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। আগামী দুই সপ্তাহ, গঙ্গা-পদ্মা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আগামী দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। উজানে ভারি বর্ষণের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর জন্য অববাহিকাভিত্তিক ধারণাগত পূর্বাভাসও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বর্তমানে স্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর বর্তমানে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় থাকায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে জুন মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল উল্লেখযোগ্যহারে বাড়তে পারে এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এ অববাহিকার পানি সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ধরলাসহ অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে, উজানে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে স্বল্পমেয়াদি ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রæত বাড়তে পারে এবং বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি পদ্মায় প্রবেশ করায় এ নদীর পানি সমতল বাড়ছে এবং যা জুন মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, এ সময়ে পানি সমতল বিপদসীমা পার হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, জুনের শেষার্ধে বাংলাদেশর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ও তৎসংলগ্ন উজানে আসাম, মেঘালয় ও বরাক অববাহিকায় সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এরই মধ্যে উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রæত বাড়ছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী পাঁচদিন দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এ সময়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সাতদিন উপক‚লীয় অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, তবে এ সময়ে কোনো ঘ‚র্ণিঝড় বা জলোচ্ছ¡াসের সম্ভাবনা নেই।
সর্বশেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩, ০১:২৭
পাঠকের মন্তব্য