দেশের রাজনীতি বিদেশিদের হাতে

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

বিশ্বের কোনো দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এতো মাতামাতি হয়েছে এমনটা কখনো দেখা যায়নি। এমনকি বিগত শতকের ৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র রাশিয়ার নির্বাচন নিয়ে এতো মাতামাতি হয়নি। অথচ বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেটাই দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়াসহ প্রভাবশালী দেশগুলো জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক মানের মডেল নির্বাচন’ দেখার জন্য তারা মুখিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে নির্বাচন ইস্যুতে নাইজেরিয়া, উগাÐার কাতারে ফেলে বাংলাদেশের জন্য ‘নতুন ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে। যা শাসক দলের রাজনীতিকদের মধ্যে নয়, প্রশাসনে কর্মরত আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শাসন দলের অনুগত ব্যবসায়ী, এমপি যারা বৈধ-অবৈধভাবে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন তাদের আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে দেশটির প্রেসিডন্টে জো বাইডেনের কাছে চিঠি দিযেছে ৬ প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান। চিঠিতে বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও মানবাধিকার লংঘন বন্ধে প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগ নেয়ার আহŸান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের মতোই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভ‚মিকা রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।

এদিকে মার্কিন স্যাংশন ও নতুন ভিসানীতি ইস্যুতে শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের উপপরিচালক ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরা জানি। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের বর্ণবাদী বৈষম্য, অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা, মাদকের বিস্তার নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) চোখ বন্ধ করে রাখে। তারাই আবার গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশ এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে হস্তক্ষেপ করছে।’

২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর ভারত নির্মোহভাবে বিশ্বদরবারে আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে দুতিয়ালি করলেও এবার সে অবস্থা নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আগে ঢাকাকে দিল্লির চোখে দেখলেও এখন সরাসরি দেখছে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভিসানীতি ইস্যুতে ভারত আর আওয়ামী লীগের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেন-দরবার করবে না। তবে আগামী ২২ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন দিল্লি অনুগত বাংলাদেশের নেতারা। তাদের প্রত্যাশা দাদা যদি একটু চেষ্টা করতেন। তবে গতকালও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো দেশ বা সংস্থার হস্তক্ষেপ যুক্তিযুক্ত নয়। বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬ জানুয়ারি গণতন্ত্রের নামে যা করল, আমরা তো সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করিনি। ৬টি প্রাণ ঝরে গেল। যিনি হেরে গিয়ে আজ পর্যন্ত সেটা মেনে নেননি। হেরে গেছেন, এটা আজ পর্যন্ত তিনি তা স্বীকার করেননি। বিদেশি চাপ বাড়ছে : দেশের গণতন্ত্র কার্যত খাদের কিনারে। ২০১৪ সালের প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচন হওয়ার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের বস্ত্রহরণ শুরু হয়। অবশ্য ওই বিতর্কিত নির্বাচনের পর টানা তিন বছর বিনা ভোটের এমপির নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেননি। জনরোষের ভয়ে পুলিশ নিয়ে চলাফেরা করতেন। এমনও নজির রয়েছে নির্বাচিত এমপি সারে ৪ বছর নির্বাচনী এলাকায় পা রাখেননি। শেখ হাসিনা তাদের বকাঝকা করেছেন। অনেক এমপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই দৃশ্যপট পাল্টে যায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল দল অংশগ্রহণ করায় নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রহরায় ব্যালটে সিল মেরে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করা হয়। অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় নির্বাচিত এমপিদের জনগণের পিটুনির ভয়ে পালিয়ে থাকতে হয়নি; কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল রাতের ভোটের নির্বাচনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত রাতের ভোট নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছেন। তবে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দুতিয়ালি করে সরকারকে গ্রহণযাগ্য রেখেছে। আলোচনা রয়েছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রকে এই বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল ভারত যে, ২০১৮ সালের নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। ফলে বাংলাদেশকে দেখভালের চৌকিদারির দায়িত্ব ভারতকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনের পর ভারত সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা পাল্টে যায়। সে জন্যই এবার ভারতকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে। কার্যত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের গণতন্ত্র তথা জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্ছিত করার কারণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় সে লক্ষ্যে বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ নিয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচনের বিষয়য়াদি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন; রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একই ইস্যুতে আলোচনা করছেন।

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে যারাই বাধা দেবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এর আগেও র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কয়েকজন এমপিকে মার্কিন ভিসা দেয়নি। গত ২ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দফায় দফায় ঢাকা সফরে এসে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতেও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ডেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিøঙ্কেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে জো বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য মডেল নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের সব দেশ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। এরপর অনেক দেনদরবার হয়েছে। ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন, বিবৃতি দিয়েছেন, বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, এমনকি কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইট করে জানিয়েছেন। ইউরোপী ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন কিনা। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে বৈঠক করেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে গিয়েও সিইসিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন।

বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার মধ্যেই নির্বাচন ইস্যুতে দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিয়েছেন ৬ প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান। চিঠিতে বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও মানবাধিকার লংঘন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহŸান জানান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভ‚মিকা রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। একইসঙ্গে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ ও চলমান রাজনৈতিক সংকটে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার আহŸান জানিয়েছেন তারা।

দেশে দেশে আলোচনা : যুক্তরাষ্ট্রের শুধু ৬ কংগ্রেসম্যান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ এমপি নয়; বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদে আলোচনা হয়েছে। সেমিনার-সিম্পোজিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিতর্ক হয়েছে। গণতন্ত্র তথা জনগণের ভোটের অধিকার না থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত দুটি গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাংলাদেশের ভোটের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে আলোচনা হয়েছে; যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ডিবেট হয়েছে, কানাডার সংসদে আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি আলোচনায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্বের বড় বড় আন্তর্জাতিক সেমিনার, সম্মেলন ও সিম্পোজিয়ামগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার, গুম, ক্রসফায়ার, অপহরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত, বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের যারা অংশ নিয়েছেন তারা প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসেন সমস্যার সমাধান করা হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তো এক সেমিনারে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে এসেই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করবেন, ক্রসফায়ার, গুম বন্ধ করবেন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কূটনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন একের পর এক দায়িত্বকাÐজ্ঞানহীন কথাবার্তা এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের শিশু সুলভ বালখিল্যতায় বিদেশিরা বিক্ষুব্ধ হন। বিদেশিরা ধরেই নিয়েছেন বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা মিথ্যা কথা বলতে ও প্রতিশ্রæতি দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি বিøঙ্কেনের একটি বক্তব্য, ২০২২ সালের আগস্টে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটের ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন হয়নি’ বক্তব্য, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় ওই সব খবর ‘ফেইক’। পরিকল্পিতভাবে সরকারের অনুগত ব্যক্তিরা এসব প্রচার করেছে।

নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশিদের চাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুললেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকার কোনো ধরনের বিদেশি চাপে নেই।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি ও অসামঞ্জস্য আছে দাবি করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘এই ধরনের চিঠি অতীতেও এসেছে, আগামীতে আরো বড় আকারে আসতে পারে। জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে।’ এদের চেয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইইউ পার্লামেন্টের ৬ সদস্যদের বিবৃতিটি দেখে মনে হয়েছে, বিএনপি বিবৃতি দিয়েছে। এটি বিএনপির ইইউ শাখার বিবৃতির মতোই হয়েছে। ইইউ পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের এ বিবৃতি ভিত্তিহীন ও অনাকাক্সিক্ষত।’

শেখ হাসিনার প্রতি চীনের সমর্থন : মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েই কথা বলেছেন এমন নয়। তিনি কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বড় একটি অংশের হয়ে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গেøাবাল টাইমসকে তিনি এ কথা বলেছেন। ওই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ গতকাল ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে প্রশ্নোত্তর আকারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের উপপরিচালক ওয়াং ওয়েনবিনের মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, স¤প্রতি আমরা জানতে পেরেছি যে, বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি ধাঁধার মতো দেখতে পেয়েছেন। আর নিষেধাজ্ঞা যেন একটা খেলার মতো। তিনি আরো বলেছেন, যেকোনো দেশের সরকারকে উৎখাতের ক্ষমতা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ ভীত নয়। যেসব দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনা বন্ধ করতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে চীনের মন্তব্য কি? জবাবে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরা জানি। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের বর্ণবাদী বৈষম্য, অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা, মাদকের বিস্তার নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দেশ (ইংগিত যুক্তরাষ্ট্র) চোখ বন্ধ করে রাখে। তারাই আবার গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশ এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে হস্তক্ষেপ করছে। শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশি জনগণের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েই কথা বলেছেন এমন না। তিনি কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বড় একটি অংশের হয়ে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে। চীন এবং বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভ‚খÐের অখÐতা রক্ষা, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক স্বাধীন নীতি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় এমন উন্নয়নের পথ অনুসরণে সমর্থন করি। সব রকম আধিপত্য এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অন্য দেশগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। একই সঙ্গে আমরা জাতিসংঘকেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা জোর দেয়া আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের মৌলিক নিয়ম এবং মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে কাজ করব।

সর্বশেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩, ০১:১৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও