পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা পাকিস্তানের রাজধানীতে ওলটপালট হয়েছে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে। দেশের রাজনীতির এক কঠিন মুহূর্তে মূখ্য ভূমিকা পালন করল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। নজিরবিহীন এক আদেশে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি ইমরান খানকে দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদলত। দু’দিন আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গন থেকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ ইমরান খান আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় হাজির হতেই আদালতে এসেছিলেন। এরপর এ দু’দিনে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। সংঘাত-সহিংসতায় অগ্নিগর্ভ দেশটি। পাকিস্তানের রাজনীতি এখন উত্তাল। শাহবাজ শরিফ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ইমরান খানকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে বিদায় করতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। দখলে নিয়েছে রাজপথ। আক্রমণের শিকার হয়েছে সামরিক স্থাপনা। যেটা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
ইমরান খানের আইনজীবীরা গতকাল আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরেন যে তাকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় প্রধান বিচারপতির নির্দেশে তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল তখন ইমরান খানকে বলেন, ‘আপনাকে গ্রেফতার করা অবৈধ’। এসময় ইমরান খান বিচারকদের বলেন যে, তাকে হাইকোর্ট থেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাকে ‘লাঠি দিয়ে পেটানো’ হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পরেই সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং সহিংসতায় ১০ জন প্রাণ হারান। এসব বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এসময় রাষ্ট্রীয় ও সামরিক স্থাপনাতেও ভাঙচুর চালানো হয়। ইমরান খানের গ্রেফতারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালত থেকে তাকে মুক্তির আদেশ দেয়া হলো। গত বছরের এপ্রিল মাসে জনাব খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে তিনি ক্ষমতা হারান। পাকিস্তানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তার গ্রেফতারকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করার পরে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শীর্ষ আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল এ নির্দেশ জারি করেন। এর আগে আদালত ইমরানের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে তার আবেদনের শুনানি শুরু করে। আগের দিন, সিজেপি, বিচারপতি মুহাম্মদ আলী মাজহার এবং বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহসহ তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ ইমরানকে আদালতে হাজির করার জন্য জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোকে নির্দেশ দেন। ‘আদালত আজ একটি উপযুক্ত আদেশ জারি করবে’।
সিজেপি শুনানির সময় বলেন, আদালত বিষয়টি সম্পর্কে ‘খুব সিরিয়াস’ ছিল। সিজেপি পিটিআই প্রধানকে আজ (শুক্রবার) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, পিটিআই-এর মুরাদ সাইদ সমর্থকদের শুক্রবার ইসলামাবাদে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছেন যদি ‘ইমরান খান বৃহস্পতিবার মুক্তি না পান’।
গতকাল প্রধান বিচারপতিসহ তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরানের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন মোহাম্মদ আলী মাজহার ও আতহার মিনাল্লাহ।
শুনানির শুরুতে ইমরানের একজন আইনজীবী হামিদ খান শীর্ষ আদালতকে বলেন, তার মক্কেল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) একটি মামলায় আগাম জামিন চাইতে এসেছিলেন। আইনজীবী বলেন, যখন ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়, তখন তার বায়োমেট্রিকের কাজ চলছিল। এ সময় আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্যরা ইমরান খানের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাকে গ্রেফতার করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতের নথি থেকে দেখা যাচ্ছে, এই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য নেই। আইনজীবী আদালতকে বলেন, বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আপিল করা যাচ্ছে না। তখন বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, ইমরান সত্যিই আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকছিলেন। ‘কীভাবে একজনকে ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়’ -জানতে চান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতের একটি সম্মান আছে। অতীতের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পার্কিং থেকে একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছিল এনএবি। আদালত তখন গ্রেফতারের নির্দেশ প্রত্যাহার করেছিলেন।
প্রধান বিচারপতি তখন ইমরানের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কতজন রেঞ্জার্স সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে? জবাবে আইনজীবী জানান, পিটিআই প্রধানকে গ্রেফতার করতে ‘১০০ রেঞ্জার্স সদস্য আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকেন’। আইনজীবী আদালতের কাছে জানতে চান, আদালত প্রাঙ্গণে ৯০ জন একসঙ্গে প্রবেশ করলে আদালতের কি মর্যাদা থাকে? আদালত চত্বর থেকে কীভাবে একজনকে গ্রেফতার করা যায়? ইমরানের আইনজীবী বলেন, অতীতে আদালতের ভেতরে ভাঙচুরের অভিযোগে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে তাকে গ্রেফতার করার অর্থ কী?
এ আইনজীবী আরো বলেন, এনএবি ‘আদালত অবমাননা’ করেছে। গ্রেফতারের জন্য তাদের আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হতো। আদালতের কর্মীরাও লাঞ্ছিত হয়েছেন। ইমরানের আইনজীবী এ ঘটনায় পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেলকে তলব করার সুপারিশ করেন। প্রধান বিচারপতি বন্দিয়াল জোর দিয়ে বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য সবার আদালতে আসার সুযোগ থাকতে হবে এবং যে কেউ আদালতের দারস্থ হতে যাতে নিরাপদ বোধ করেন।
বুধবার জাতীয় জবাবদিহি আদালত (অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি কোর্ট) ইমরান খানের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি এখন জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর (ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরো-এনএবি) জিম্মায় রয়েছেন। এর আগে ইমরানের বিরুদ্ধে ১ মে এনএবির জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল চেয়ে আদালতে যান তিনি। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ‘বেআইনি’ ঘোষণার আবেদন জানাতে আদালতে যান।
আদালতের এ ঐতিহাসিক রায় নিয়ে চলছে এখন নানা পর্যালোচনা। শাহবাজ শরিফের সরকার এখন কী করবে? সেনাবাহিনীর ভূমিকাই বা কী হবে? সুপ্রিম কোর্ট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি আদালতের অবিচল আস্থা আবারো প্রমাণিত হলো। এসব ঘটনা যখন ঘটছে তখন পাকিস্তানের জনগণ ফের রাস্তায় উল্লাস করছে।
পর্যবেক্ষকরা ইমরান খানকে জোরপূর্বক ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রেফতারের ঘটনাটিকে সেনাবাহিনীর মধুর প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন। খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল নাজির আহমেদের নির্দেশেই ইমরানকে তার হুইল চেয়ার থেকে উঠিয়ে হাইকোর্টের বায়োমেট্রিক্স রুমে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহ নেই শাহবাজ শরিফের সরকার কেবল সামনে থেকে কাজ করছে। পেছনে কলকাঠি নাড়ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সব দেশেরই সেনাবাহিনী আছে। কিন্তু পাকিস্তানে ভিন্ন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। ইমরানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের অবিশ্বাসের জন্ম হবে। মাঝখানে পিটিআই জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম হবে। ইমরান খান যেভাবে ঘৃণার রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন এর জন্য অনেকেই তাকে সমর্থন করেন না। কিন্তু নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে যেভাবে তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেটাও কেউ সমর্থন করেন না। পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে ভিন্ন সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন কর্মরত অফিসারের মা প্রকাশ্যেই বলেছেন, আমি একজন সম্মানিত সৈনিকের মা হতে চাই। একজন অসাম্মানিত, ঘৃণিত জেনারেলের নয়।
এর আগে আদালত চত্বর থেকে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেফতারের ফলে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দেশটির প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ইস্যুতে বৃহস্পতিবারই যথাযথ একটি অর্ডার ইস্যু করবে আদালত। এ বিষয়ে আদালত খুবই সিরিয়াস। তিনি আরও বলেছেন, আদালত থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে আদালত অবমাননা করেছে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি)।
জবাবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব অভিযোগ করেছেন, আদালতের সঙ্গে ইমরান খানের ‘লাভ অ্যাফেয়ার্স’ বা প্রেমের সম্পর্ক আছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, যখনই তার কাছে কোনো ওয়ারেন্ট নিয়ে যাবেন, তখন কোনো জীবন বা অঙ্গই আর নিরাপদ থাকে না। যদি আহত পুলিশ সদস্যরা, যারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য জীবনকে সামনে বাজি রাখেন, যদি তারা ন্যায়বিচার না পান, যে সেনা সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেন, যদি তিনি ন্যায়বিচার না পান, পক্ষান্তরে ওই ব্যক্তি- যে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন, তিনি যদি ছাড় পান, তাহলে দেশ শুধুই জ্বলবে। আর কিছু নয়। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট তাকে ছাড় দেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাকে রিমান্ডে পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে দ্রুতগতির ছাড় দেয়ার ঘটনা।
প্রধান বিচারপতির পিটিআইয়ে যোগ দেয়া উচিৎ -মরিয়ম নাওয়াজ : পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ ইমরান খানের মুক্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়ালের কঠোর সমালোচনা করেছেন, প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দলে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
টুইটারে এক কঠোর সমালোচনায় মরিয়ম দাবি করেছেন যে, প্রধান বিচারপতি জাতীয় কোষাগার থেকে ৬০ বিলিয়ন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজন ব্যক্তির সাথে দেখা করে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন এবং এ কথিত অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে আরো বেশি আনন্দিত হয়েছেন। মরিয়ম দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য প্রধান বিচারপতিকে দায়ী করেন। পিটিআই প্রধানকে উল্লেখ করে, তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে, শীর্ষ বিচারক এ দুর্বৃত্তের জন্য ঢাল হয়েছেন এবং দেশে আগুনে আরো ইন্ধন যোগ করছেন।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন যে, প্রধান বিচারপতি বান্দিয়ালকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত এবং তার শাশুড়ির মতো পিটিআইয়ে যোগদান করা উচিত। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেফতারকে বেআইনি বলে ঘোষণা এবং আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মরিয়মের মন্তব্য এসেছে।
গ্রেফতারকে ‘বৈধতা’ দেয়া আইএসপিআরের কাজ নয় - ফাওয়াদ চৌধুরী : ডিরেক্টর-জেনারেল ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারের ‘বৈধতা; ইস্যুটি ডিজির জন্য নয়।
বুধবার সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের জারি করা একটি বিবৃতি অনুসারে - পিটিআই প্রধানের গ্রেফতারের একদিন পর ইমরানকে ‘এনএবি বিবৃতি এবং আইন অনুসারে’ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) থেকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় পিটিআই প্রধানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়ে গিয়েছিল।
ফাওয়াদ বলেন, ‘ইমরান খানকে গ্রেফতার বেআইনি ও অসাংবিধানিক। ইমরান খান প্রথমবার জেনারেল ফয়সাল নাসিরের নাম উল্লেখ করেননি। হত্যাচেষ্টার পর ইমরান খান বহুবার তার নাম উল্লেখ করেছেন যার জন্য তার সন্তুষ্টির জন্য তদন্ত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা হয়নি’।
ইমরান বারবার একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে ৩ নভেম্বর, ২০২২-এ ওয়াজিরাবাদে একটি সমাবেশের সময় তার জীবনের উপর হত্যা প্রচেষ্টার সাথে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন যেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি যখন তিনি তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তখন আইএসপিআর তার ওপর তিরস্কার করে বলেছে যে. পিটিআই প্রধান কোনো প্রমাণ ছাড়াই একজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ’ করেছেন।
সোমবার ইমরানের গ্রেফতারের আগে আইএসপিআর এক দিন বলেছে, ‘এ বানোয়াট এবং বিদ্বেষপূর্ণ অভিযোগ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, শোচনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। এটি গত এক বছর ধরে একটি ধারাবাহিক প্যাটার্ন যেখানে সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্ররোচনা এবং চাঞ্চল্যকর প্রচারণার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে’।
ফাওয়াদ বলেন যে, আইএসপিআরকে ইমরানের গ্রেফতারের পরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে বাস্তবে দেখা উচিত এবং তাদের বুঝতে হবে যে, ‘একটি ভয়ানক খেলা চলছে’।
তিনি বলেন, ‘জনগণ ও সেনাবাহিনীকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আইএসপিআরের বক্তব্যের পর সরকার ইমরান খানকে গ্রেফতার করেছে। ফাওয়াদ বলেন, ‘পিটিআই ভোটাররা দরিদ্র- এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর, যেখানে সেনাবাহিনী মধ্যবিত্তের সবচেয়ে সংগঠিত গোষ্ঠী। সেনাবাহিনী পিটিআই দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা শ্রেণীগুলোর একটি।
ফাওয়াদ বলেছেন, ‘পিটিআই এবং সেনাবাহিনীকে একে অপরের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করা জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র’।
দলের সিনিয়র নেতা বলেছিলেন যে পিটিআই ২২০ মিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের মধ্যে অনেক লোক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বে যদি সমস্ত সিনিয়র নেতৃত্বকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। তা হলে তিনি প্রশ্ন করেন, কাকে সুযোগ দেওয়া হবে? ফাওয়াদ বলেছেন যে পিটিআই নেতৃত্ব আগের দিনের ঘটনার নিন্দা করেছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র : ডন অনলাইন, ট্রিবিউন, বিবিসি বাংলা।
সর্বশেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩, ০০:৩২
পাঠকের মন্তব্য