দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে এপ্রিলে। রপ্তানি আয় সাড়ে ১৬ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। এ দুই খাতে আয় কমায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ বাড়বে। একই সঙ্গে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমার শঙ্কা রয়েছে। সব মিলে অর্থনীতিতে অস্থিরতা আরও বাড়বে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে তথ্যপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ৭০ শতাংশই আসছে রপ্তানি থেকে। রেমিট্যান্স থেকে আসছে ২৮ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য খাত থেকে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত রপ্তানি ও রেমিট্যান্স দুটিই কমে যাওয়ায় এ খাতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার এবং রেমিট্যান্স থেকে আয় হয়েছে ১৬৮ কোটি ডলার। দুই খাত মিলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৫৬৪ কোটি ডলার। এর বিপরীতে ফেব্রুয়ারিতে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলার। এর সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার। হজের কারণে চলতি মাসে আরও প্রায় ৫০ কোটি ডলার বাড়তি খরচ হবে। এসব মিলে মোট খরচ হবে ৫৭৪ কোটি ডলার। এ কারণে ১০ কোটি ডলারের ঘাটতি থাকবে। এর বাইরে বিদেশভ্রমণ ও অন্যান্য সেবা খাতেও বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে।
এদিকে অচিরেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ একসঙ্গে শতকোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সরকার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাড়বে। সব মিলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। মঙ্গলবার রিজার্ভ ৩ হাজার ৯৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আকুর দেনা পরিশোধ হলে এটি আরও কমে যাবে।
সূত্র জানায়, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যয় কমানো সম্ভব হলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিরতা আনা সম্ভব হচ্ছে না, উলটো বাড়ছে। এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। এর মধ্যে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমে গেলে এ চাপ আরও বাড়বে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি কমার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবেও ঘাটতি কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। মার্চে আসে ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশ। গত বছর এপ্রিলে এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। সে হিসাবেও প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার। ওই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সও কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে ১ টাকা। ফলে এখন প্রবাসীরা প্রতি ডলারে পাবেন ১০৮ টাকা। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা মিলে পাবেন ১১০ টাকা ৭০ পয়সা।
এদিকে এপ্রিলে রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। এপ্রিলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫ কোটি ডলার, আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৭৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ওই সময়ে অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্জিত হয়েছিল ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে মার্চ ও এপ্রিলের আমদানি ব্যয় বাবদ যোগ হবে আরও কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার। সব মিলে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩৩৯ কোটি ডলার। এর মধ্য থেকে বৈদেশিক ঋণ, হজের খরচ ও অন্যান্য সেবার অর্থ পরিশোধের পর বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব ঘাটতিতে চলে যাবে। রিজার্ভ থেকে অর্থ দিয়ে এ ঘাটতি মেটাতে হবে। ফলে রিজার্ভও কমবে।
মঙ্গলবার থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়ানোর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এক লাফে এর দাম দেড় টাকা বাড়িয়েছে। এ কারণে আমদানিতেও ডলারের দাম এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে। ফলে আমদানি খরচ আরও বাড়বে। এতে দেশের ভেতরে আমদানি পণ্যসহ শিল্পপণ্যের দামও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ৩ মে ২০২৩, ২৩:৪৬
পাঠকের মন্তব্য