নীলফামারীর ছেলে নাহিদ, সিলেটে মৃত নাটক সাজিয়ে শেষ রক্ষা হলো না তার। শেষ পর্যন্ত জীবিত অবস্থায় আটক করলো সিলেট জেলা পুলিশ। মৃত নাটক মঞ্চায়নে নিজ বিছানায় রক্ত বর্ণে রাঙিয়েছিল নাহিদ। কিন্তু হদিস মেলেনি লাশে। কোথাও নেই লাশ! তারপর শুরু হলো লাশ উদ্ধার কাহিনী। অবশেষে লাশ নয়, জীবিত নাহিদ আটকের সাথে সাথে বেরিয়ে এলো তার অতীত অপরাধ কাহিনী। সেই কাহিনী চাপিয়ে রাখতে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে নাম-ঠিকানা আড়াল করে বসবাস করছে সিলেটে। জুটিয়েছে কেয়ারটেকারের কাজও। কিন্ত কথা বলে সত্যের মৃত্যু নেই। সেই সত্য বেরিয়ে এলো কথিত খুন ঘটনার তদন্তে।
গত ৩১ মার্চ ভোর রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়ন পূর্বপার গ্রামের মো. আব্দুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার নাহিদ ইসলাম (২৮) খুন হয়েছেন বলে পুলিশকে তথ্য জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন। তার অকুস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু রক্ত সদৃশ দাগ স্পষ্ট হলেও লাশে কোন অস্তিত্ব দেখতে পায়নি পুলিশ। এরপর ঘটনার ৪০ ঘণ্টার মাথায় এ ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পারদর্শিতা র ে দেখায় সিলেট জেলা পুলিশ। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ঘটনার কুশীলব সেই কেয়ারটেকারকে। আটকের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, মৃত্যুর নাটক সাজিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন যুবক কেয়ারটেকার।
গতকাল রোববার দুপুরে এক আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত শুক্রবার ভোর রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, মাথিউরা ইউনিয়নের অন্তর্গত মাথিউরা পূর্বপার গ্রামের মো. আব্দুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার নাহিদ ইসলাম (২৮) খুন হয়েছেন। এমনকি রক্তের দাগে ঘর ভর্তি। খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানার একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে বিছানা, ঘরের মেঝে এবং বারান্দা রক্তে সয়লাব থাকলেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না লাশ। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এলাকা। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকা- মনে হওয়ায় এর রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের আটকে বিয়ানীবাজার থানার একটি গোয়েন্দা দল শুরু করে অনুসন্ধান কার্যক্রম। অবশেষে প্রাপ্ত গোয়েদা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার খুন হওয়ার নাটক সাজানো নাহিদকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের একটি দল।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত নাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর ধরে বিয়ানীবাজারের ওই এলাকায় আছেন তিনি। কিন্তু তার প্রকৃত পরিচয় জানতেন না কেউ। নাহিদের বাড়ি নীলফামারীতে এবং সেখানে অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় বিয়ানীবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পুলিশ জানতে পারে, নাহিদ মূলত অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন এবং এতে ঋণী হয়ে পড়েন বড় অঙ্কের টাকা। এরপর কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম পরিবর্তন করে স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে বিয়ানীবাজারের ওই বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ নেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তার নাম তাজুল ইসলাম।
তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার বড়ভিটা পূর্বপাড়া গ্রামের হোসেন আলী ্ও আম্বিয়া বেগম দম্পতির পূত্র। এদিকে, নাহিদ নিখোঁজ হওয়ার পর তার ঘর তল্লাশি করে একটি ডায়েরি পায় পুলিশ। যাতে অনেক দেনা-পাওনার হিসাব লিখে রেখেছিলেন নাহিদ। এছাড়া তল্লাশি করে তার ঘরে একটি বালতিতে ও মগে রং গুলিয়ে রাখার আলামত পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নাহিদকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সর্বশেষ আপডেট: ২ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৪৫
পাঠকের মন্তব্য