চলতি বছর সোহাগ পরিবহনের স্ক্যানিয়া মডেলের একটি অভিজাত বাস থেকে ১১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় নিয়মিত অভিযান। উদ্ধার হয় ইয়াবা।
র্যাবের অভিযানে গত এক বছরে ৬১ জন ড্রাইভার ও হেল্পারকে মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তারা দেশের ৩৫টি বিলাসবহুল (মার্সিডিজ বেঞ্জ, স্ক্যানিয়া, হুন্দাই ইউনিভার্স) বাসে কর্মরত ছিলেন। এসব ঘটনায় ব্যবহৃত শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, এস আলম পরিবহন, সাউদিয়া পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এনা পরিবহনসহ কয়েকটি নামি দামি কোম্পানির বাস জব্দ করা হয়।
দুই কোটি টাকার সোহাগ পরিবহনের বাস থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত হেলপার জসীম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। তিনি জানান, চাকরির আড়ালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাদক (ইয়াবা) ক্রয় করতেন। পরে ওই মাদক তার কোম্পানির বাস ব্যবহার করে অভিনব উপায়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করতেন।
গত ২৫ জুন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। সাত হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় গাড়িচালক আব্দুল হালিম ও সহকারী রনি মিয়াকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে জানান, এক বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত তারা। ইয়াবাপ্রতি তারা সাত থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত আয় করতেন।
গত এপ্রিলে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী গ্রীন লাইনের বাস থেকে সাত হাজার ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। হাবিবুর রহমান নামে ওই যাত্রী ইয়াবাগুলো পলিথিনে মুড়িয়ে পেটে বহন করছিলেন।
র্যাবের তদন্তে জানা যায়, মাদক পাচারকারীরা নিরাপদ হিসেবে বর্তমানে বিলাসবহুল পরিবহনগুলো ব্যবহার করছেন। বিলাসবহুল বাসগুলোতে ভাড়া অনেক বেশি, উচ্চ-মধ্যবিত্তরা এসব বাসে যাতায়াত করেন। সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব বাসে নজর দেবে না বলে ধারণা তাদের।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে তারা শ্যামলী পরিবহনের আটটি, হানিফ পরিবহনের চারটি, সোহাগ পরিবহনের তিনটি, সৌদিয়া পরিবহনের দুটি, লন্ডন এক্সপ্রেস, এনা পরিবহন, এস আলম সার্ভিস, কেয়া পরিবহন, স্পেশাল সার্ভিস, বনলতা ও তুবা লাইনের একটি করে বাস জব্দ করা হয়েছে। বাসগুলোর মাধ্যমে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে নিয়মিত ইয়াবা পাচার হতো।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করায় মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন রুটে মাদক পাচার করছেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তারা বর্তমানে বিলাসবহুল বাস বেছে নিয়েছেন। এছাড়া বাসের মালিকরা চালক ও সহকারীদের নিয়োগের সময় তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা নেন না। জমা নিলেও সেগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেন না। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের নজরদারিতে রাখতে পারছেন না।
তিনি বলেন, নিয়োগের আগে বাসচালক এবং তাদের সহকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা উচিত।
সম্প্রতি রাজধানীতে আসা কয়েকটি অভিজাত বাসে অভিযান পরিচালনা করেন র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী। এছাড়া বেশ কয়েকজন চালক এবং তাদের সহকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। মহিউদ্দিন ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, লম্বা জার্নির অভিজাত বাসগুলোতে সাধারণত মাদক পাচার হয়ে থাকে। চালক ও সহকারীরা এসব বাসে মাদক পাচার নিরাপদ বলে মনে করেন। এ বিষয়ে নিয়মিত আমাদের নজরদারি রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা সবসময় যাচাই-বাছাই করেই চালক ও হেল্পার নিয়োগ দেই। এরপরও তারা বাড়তি কিছু টাকার লোভে অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বাসশ্রমিকদের এ ধরনের অপরাধ বন্ধে নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চালক ও সহকারীদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পেলে আমরা নিজেরাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। সম্প্রতি আমরা এমন কয়েকজন অপরাধীকে ধরতে র্যাবকে সহযোগিতা করেছি। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৪৯
পাঠকের মন্তব্য