সীমান্ত এলাকা থেকে ব্রিটিশ শাসনামলের ম্যাগনেটিক পিলার খুঁজে বের করতে পারলে বিক্রি করা যাবে শত কোটি টাকায়। এমন গল্প শুনিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী দীঘিরপার গ্রামের শেখ সালেহ আহমদের ছেলে আলী হোসেনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে একটি প্রতারক চক্র।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলী হোসেন তাদের সঙ্গে সপ্তাহে ৩-৪ দিন সীমান্ত এলাকায় পিলার খুঁজতে বের হতেন। এ জন্য ওই চক্রের লোকেরা তাকে দৈনিক ১ হাজার টাকা করে দিত। পিলারটি নিয়ে আলী হোসেনের আগ্রহ তৈরি হলে তারা তাকে ম্যাগনেটিক পিলারের নমুনা হিসেবে প্লাস্টিকের একটি জিনিস দেয়।
নমুনা পেয়ে নিজেও ম্যাগনেটিক পিলারের খোঁজে নামেন আলী হোসেন। এরই মাঝে তার এক আত্মীয় নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে একটি ধাতব বস্তু খুঁজে পায়, যা দেখতে ওই প্রতারক চক্রের দেওয়া নমুনার মতো। আলী হোসেন শত কোটি টাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওই বস্তুটি কিছু টাকা দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নেন।
আলী হোসেন ম্যাগনেটিক পিলার ভেবে ওটাকে খুবই যত্নের সঙ্গে আগলে রাখেন। তবে ওই বস্তুটি ম্যাগনেটিক পিলার ছিল না- ওটা ছিল বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার। ঘরে বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার রাখার দায়ে সম্প্রতি র্যা ব গ্রেফতার করে আলী হোসেনকে। এখন কারাগারে তিনি।
বুধবার সিলেট প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আলী হোসেনের স্ত্রী রেহানা বেগম এমন বর্ণনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে রেহানা বেগম দাবি করেন তার স্বামী নির্দোষ ও নিরপরাধ। তিনি জানান, যখন তার স্বামী প্লাস্টিকের নমুনা পেয়েছিলেন তখন থেকেই জিনিসটিকে যত্নে রেখেছিলেন। ম্যাগনেটিক পিলার সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। রকেট লঞ্চার পাওয়ার পর ঘরে থাকা নমুনার সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি ওটাকে ম্যাগনেটিক পিলারই ভেবেছিলেন। এর মধ্যে একদিন ক্রেতা সেজে র্যা ব সদস্যরা এসে এটির দরদামও করেন। তারা এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিতে চায়। আলী হোসেন জিনিসটির দাম চান পাঁচ কোটি টাকা। তখন র্যা ব সদস্যরা জানান এটি একটি ভয়ংকর অস্ত্র। তখনই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়।
আলীর স্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, যদি সামান্যতম ধারণা থাকত তাহলে কি ওটা আমাদের ঘরে রাখতাম? যেখানে আমাদের বাচ্চারাসহ আমরা সবাই একত্রে থাকি। আমাদের জীবনে কখনো মিসাইল দেখিনি, ম্যাগনেটিক পিলারও দেখিনি। আমরা শুধুমাত্র ওই নমুনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাস করি যে এটাই ম্যাগনেটিক পিলার। ওই জিনিসটির বিস্ফোরণ হলে তো ঘরের লোকদেরই বিপদ হওয়ার কথা।
রেহানা বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামী আলী হোসেন কারাগারে থাকায় তাদের দিনাতিপাত করাই রীতিমতো দুঃসাধ্যই হয়ে পড়েছে। শ্বশুরের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা কোনো কিছুই চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার স্বামীর মুক্তির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আলী হোসেনের বৃদ্ধা মা রাজিয়া বেগম ও আলী হোসেনের তিন সন্তানও উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০০:৫২
পাঠকের মন্তব্য