ডেঙ্গু জ্বর সেরে গেলে করণীয়

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তির রেকর্ড ভেঙে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুধু হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২৪ হাজার ৮০৪ জন রোগী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৭ হাজার ৩৮৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি সাত হাজার ৩৯৮ জন।

গত একদিনে সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৭০ জন অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৭৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। চলতি বছর একদিনে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তির নতুন রেকর্ড।

রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বিরাজমান আবহাওয়া যেমন কখনও প্রখর রোদ, আবার কখনও বা থেমে থেমে বৃষ্টি। এতে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার জন্ম বেশি হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু মশা নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে মশার ওষুধ ছিটানোসহ ডেঙ্গু সম্পর্কিত নানা সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হাসপাতলে ডেঙ্গু সন্দেহে জ্বর নিয়ে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু ভিড় করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবার যাদের ডেঙ্গু হচ্ছে তাদের মধ্যে জ্বর খুব একটা বেশি উঠছে না। আবার উঠলেও দুই-তিন দিনের মধ্যেই নেমে যাচ্ছে। আর ডেঙ্গুর প্রবণতাও আগের বছরগুলোর মতো নয়, এমনকি লক্ষণও ভিন্ন।

কারণ আগে এডিস মশা কামড়ালে প্রচণ্ড জ্বর হতো কিন্তু এবার অনেক ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা খুব বেশি হতে দেখা যাচ্ছে না। এবার যা হচ্ছে চিকিৎসকরা তার নাম দিয়েছেন ‘শকড সিনড্রোম’। এ কারণে এবার অল্প জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর ইসলাম বলছেন, তিন-চার দিনে জ্বর কমে আসার পরই মূলত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জটিলতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রক্তের উপাদান কমে যাওয়া কিংবা রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা জ্বর চলে যাওয়ার পরই দেখা যায়। অনেকে মনে করেন জ্বর কমে গেলে আশঙ্কা থাকবে না। আসলে কিন্তু তা নয়। জ্বর কমে গেলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই ভয়ের কিছু থাকবে না।

তানভীর ইসলাম বলেন, যেসব জটিলতা সাধারণত দেখা যায় তা হলো: রক্তের ভেতরের তরল অংশ বের হয়ে আসা, রক্ত ঘন হয়ে যাওয়া কিংবা রক্তের প্রেসার কমে যাওয়া- এর চিকিৎসা একটাই স্যালাইন নেয়া বা প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দেয়া।

তবে রক্তের প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্লাটিলেট অতিমাত্রায় কমে না গেলে এ নিয়ে ব্যবস্থাও নিতে হয় না। প্লাজমা লিকেজ বা রক্তের তরল অংশ কমে যাওয়ার কারণে সমস্যা হয়। তাই প্রয়োজনীয় স্যালাইন দেয়ার পাশাপাশি ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, লেবুর শরবত এসব প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে হবে যাতে প্রেসার কমে রোগী শক সিনড্রোম পর্যন্ত না যায়।

আর এটুকু করা গেলেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন ডা. তানভীর ইসলাম। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রাজীব কুমার সাহা বলছেন, তরল খাবার ঠিকমতো খেলে ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। জ্বর চলে গেলে রোগীকে সচেতনভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে, তাহলেই আর সমস্যা হবে না।

ডা. তানভীর ইসলাম বলছেন, এ রকম কোনো সম্ভাবনা নেই। জ্বর চলে গেলে ভাইরাসটিও আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে। এরপর ভাইরাসের যেসব প্রতিক্রিয়া বিশেষ করে রক্তের তরল উপাদান কমে যাওয়া তার চিকিৎসা ঠিকমতো হওয়াটাই এর সমাধান।

তিনি বলেন, যেটুকু সময় জ্বর থাকে শুধু সে সময়টুকুই ভাইরাসটা সচল থাকে। এরপর অ্যান্টিবডি তৈরি হলে ভাইরাসটা আর থাকার সুযোগ নেই। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট উন্নত হলে ভাইরাস আর থাকে না।

এর ঝুঁকিগুলো কী?

ডা. রাজীব কুমার সাহা বলছেন, রোগী সচেতন হলেই ঝুঁকি এড়ানো যায়। কিন্তু বিলম্ব হলে ঝুঁকি তৈরি হয়। মোটকথা জ্বর চলে গেলই যে ভালো হয়ে গেলেন তা নয়। পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে সর্বসাকুল্যে ভর্তি হয়েছেন মাত্র দুই হাজার ২৮৭ জন। এছাড়া জুলাই মাসে ১৫ হাজার ৬৫০ জন এবং চলতি আগস্ট মাসের গত চারদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৯৬৭ জন।

সর্বশেষ আপডেট: ৫ আগস্ট ২০১৯, ২২:০৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও