ডিম নিয়ে পুরোপুরি স্বস্তি না ফিরতেই আবার লাগামহীন হয়ে পড়েছে পণ্যটির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দাম নেওয়া হচ্ছে আরো বেশি।
গতকাল বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মনোপলি ব্যবসার মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারণ করে জনগণকে জিম্মি করলে কোনোভাবেই তা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, অতি মুনাফাকারীদের কোনো ছাড় নেই। ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে কোথাও সিন্ডিকেট থাকলে তা দূর করা হবে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারদর নিয়ে প্রতিদিন যে প্রতিবেদন তৈরি করে, তাতেও বলা হয়েছে ডিমের দাম বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাবেই, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু কেন বাড়ছে, ডিমের দাম?
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পোলট্রি ফিডসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাহলে ডিমের দাম কেন বাড়বে না? একটি ডিমের উত্পাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ আছে।
এদিকে ডিমের পাশাপাশি মাছ, সবজি, চিনিসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামই বাড়তি। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষদের। তারা অনেক কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চড়া মাছের বাজার :হঠাত্ করেই বাজারে মাছভেদে দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মা-ইলিশ রক্ষা এবং প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য চাপ পড়েছে অন্য মাছের ওপর। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে বলে তারা জানান। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের রুই, কাতল কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩১০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে ট্যাংরা ৫৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা, বেলে মাছ সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৮০ টাকা এবং শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
৫০ টাকা কেজির নিচে সবজি নেই
মাছ-মাংসের দাম বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতা বাড়ে সবজির ওপর। কিন্তু এখন সেই সবজির দামও চড়া। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করল্লা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। এ হিসাবে ছোট একটি মিষ্টিকুমড়ার দাম পড়ে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া, কাঁকরোল ৬০ টাকা, টম্যাটো ১৪০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁপের দামটা তুলনামূলক কম আছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। গতকাল টিসিবি জানিয়েছে, প্রতি কেজি পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজার চড়া প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের সবজি বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমের আগে সবজির বাজার চড়া থাকে। তবে নভেম্বর থেকে শীতকালীন আগাম জাতের সবজি বাজারে আসা শুরু হবে। তখন সবজির দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি।
অস্থির চিনির বাজার :অস্থির চিনির বাজারও। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়তি। এছাড়া পরিবহন ও অন্যান্য খরচও বেড়ে গেছে। টিসিবি জানিয়েছে, গত বছর এই সময় প্রতি কেজি চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ৮০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৫ টাকা।
সর্বশেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৩১
পাঠকের মন্তব্য