সাইনবোর্ডে লিখা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ভিতরে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসা একব্যক্তি। ছদ্মবেশী দিরহাম নিয়ে যাওয়া হল তার কাছে। দরদাম করে বিক্রি করা হলো ৫০ দিরহাম। নাম জানতছ চাইলে তিনি বললেন তার নাম আব্দুল খালিক সিতন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রো:। তিনি বল্লেন দেশ-বিদেশে যে কোন টাকা এক্সচেঞ্জ করতে তিনি সক্ষম, এছাড়া বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এনে দিতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই।
প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অবাধে চলছে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ডলারের রমরমা বাণিজ্য চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। সারাদেশে অভিযানের মধ্যেও মৌলভীবাজারে চলছে এই রমরমা ব্যবসা।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ম্যানেজ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার পৌর শহরের বেরিরপাড় এলাকার রয়েল ম্যানশনে গিয়ে দেখা যায় মোবাইলের চার্জার, টাইলস, ও বিভিন্ন দোকানের আড়ালে একাধিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ এর ব্যবসা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ নামে একটি মাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে অনন্ত শতাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্র বিদেশ থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা কম দামে প্রবাসীদের কাছ থেকে কিনে। যখন দাম বেড়ে যায় তা আবার বেশি মূল্যে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ বিক্রি করে দেয়। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার বৃহৎ একটি অংশ কালো টাকা হিসেবে আড়ালে রয়ে যায়। এই চক্রের সঙ্গে ঢাকার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রাহক পরিচয় দিয়ে শাহ মোস্তফা টেলিকম ও তরফদার এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী নুবেল তরফদার টিটুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আজ (বুধবার) ১১৫ টাকা করে ডলার চলছে। বেরিরপার তরফদার এন্টারপ্রাইজে চলে আসেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে প্রথমে অস্বীকার করলেও কথা বলার এক পর্যায়ে স্বীকার করেন।
ডলার ব্যবসায়ী রুমন আহমদের সঙ্গে কথা হলেও তিনিও ডলার ব্যবসার কথা স্বীকার করেন।
মৌলভীবাজার জেলায় প্রতিদিনই লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুদ্রা নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে এখানে এসে প্রতারণার শিকার হন তারা।
সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ী সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ এর মালিক সৈয়দ ফয়ছল আহমদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে সুনামের সঙ্গে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করছি। কিন্তু অবৈধভাবে ১৫/২০ বছর ধরে লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করছে একটি চক্র। ওরা কিভাবে ব্যবসা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালোই জানেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তালিকা তৈরি করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিয়েছি তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
সর্বশেষ আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২২, ২১:৩২
পাঠকের মন্তব্য