শতাব্দীর ঐতিহ্যধন্য ছারছীনা শরীফ

ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষদিকে পূর্ব বাংলায় হিন্দু জমিদারদের প্রভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভ‚তি ও জাতীয় মূল্যবোধ ছিল বিলীন প্রায়। মুসলমানরা তাদের স্বকীয় তাহাযীব-তামাদ্দুন ছেড়ে হিন্দুধর্মের অনুকরনে নামের আগে “শ্রী” ব্যবহার, লুঙ্গির পরিবর্তে ধূতিপরা, মেয়েদের শিথিঁতে সিদুর দেয়া, তিথিলগ্ন মান্য করা এবং ঢাক-ঢোল ও কাঁসা বাজিয়ে উলু-উলু ধ্বনিতে অংশ গ্রহন করা। এসবই ছিল সে সময়কার পূর্ব বাংলার মুসলমানদের ওপর অনেকটা বাধ্যতামূলক। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্ব-ধর্ম প্রচার থেকে শুরু করে শিক্ষা-দীক্ষা, ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরী-নক্রী জায়গা-জমিসহ সব কিছুর ওপর আধিপত্য ও ক্ষমতা ছিল হিন্দুদের হাতে। ভারতের বৃটিশ আধিপত্যবাদীদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে হিন্দু জমিদার ও জোতদার শ্রেণির লোকেরা রাজ্যহারা ও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে এ ভাবেই গোলামীর অক্টোপাসে আবদ্ধ করে রেখেছিল। তৎকালীন দক্ষিণ বাংলার মুসলমানদের পরিস্থিতি এতটাই করুন ও নাজুক ছিল যা বর্ণনাতীত।
বৃটিশের মুসলিম নির্যাতন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হাজী শরীয়াত উল­াহর প্রতিষ্ঠিত ‘ফরায়েজী আন্দোলনের’ এতদঞ্চলের ধারক ও বাহক ছিলেন মুন্সী জহির উদ্দীনের পরিবার। এ পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করেন ছারছীনা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর কিংবদন্তির মহাপুরুষ আধ্যত্মিক সাধক, শাহ্সূফী নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.)। তার পরশ ছোয়ায় এদেশে ইসলামী রেনেসাঁর সূচনা হয়। খতম হয়ে যায় বৃটিশ রাজত্ব, চেতনা ফিরে পায় অবচেতন মুসলিম সমাজ, ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের ফলে দূরীভূত হয় সকল কুসংস্কার ও গোঁড়ামী এবং স্বাধীন সার্বভৌম পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র এ বাংলাদেশের মানুষ প্রাপ্ত হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী নিষ্ঠাবান মুসলমানের খেতাব। এসব প্রাপ্তির পিছনে ছারছীনা দরাবার শরীফের অবদান প্রাত:স্মরণীয়।
বরিশাল থেকে ৩৭ কি.মি. পশ্চিমে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার সন্ধ্যা নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত ছারছীনা গ্রামটি। এ গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম আকন্দ পরিবারে ১৮৭৩ খৃীষ্টাব্দে পিতা মুন্সী ছদর উদ্দীনের কুটিরে মাতা যোহরা বেগমের কোলে ইসলাম প্রচারের বার্তা নিয়ে আর্বিভ‚ত হন পূন্যবান তাপস “হেরার নূর নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.)। প্রায় দুইশত বছর আগে ১৮২১ খ্রী. ফারায়েজী আন্দোলনের নেতা ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুরের হাজী শীরীয়ত উল­াহ ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এ অঞ্চলে আসলে, নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) এর দাদা মুন্সী জহির উদ্দিন এবং একই এলাকার মরহুম হাজী সইজুদ্দিন মিয়া তার কাছে শিষ্যত্ব গ্রহন করে ইসলাম ধর্ম প্রচার কাজে আত্ম-নিয়োগ করেন। এ সময় ইসলাম প্রচার ও ধর্মীয় শিক্ষাসহ পূর্ববাংলায় ইসলাম ধর্মকে শক্তিশালী করতে তিনি তার নিজ বাড়িতে মুসাফিরখানা তৈরি করেন। যা আজ মুসলিম বিশ্বে ছারছীনা দরবার শরীফ। ইসলাম শিক্ষা কেন্দ্রের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হয়ে এক আধ্যাত্মিক শিক্ষা-নিকেতন হিসেবে সুপরিচিত। মুন্সী জহির উদ্দীন (রহ.) এর সাথে তদীয় পুত্র মুন্সী ছদর উদ্দীনও ইসলাম প্রচারের কাজে আত্ম-নিয়োগ করেন। তাদের ইসলাম ধর্ম প্রচারে হাজার-হাজার আত্ম-বিস্মৃৃত মুসলমান ইসলামের সঠিক দীক্ষা পেয়ে নিষ্ঠাবান মুসলমানে রুপান্তরিত হয়। কৈশরে শাহ্সূফী নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.)ও ১৩/১৪ বছর বয়সে ১৮৮৫ সালে নিজের লেখাপড়ার অবসরে দাদা ও পিতার অনুগামী হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তাবলীগী সফর করে ব্যপক পরিচিতি ও সুনাম-সুখ্যতি পেয়েছিলেন। পরিণত বয়সে তিনি যে একজন মহান সংস্কারক রূপে আবির্ভূত হবেন এর পূর্বাভাস তার মধ্যে তখন থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছিল। শাহসূফী নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) পরবর্তী কালে ইসলাম প্রচারে তাবলীগী সফর সহ শহর-নগর ও গ্রাম-গঞ্জে হাজারো ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অরাজনৈতিক দীনী সংগঠন ‘বাংলাদেশে জমইয়াতে হিযবুল­াহ্ ও ছাত্র হিযবুল­াহ গড়ে তোলার প্রায়াস পান। ১৫ বছরের নেছার উদ্দিনকে পিতা ছদরউদ্দিন আহমদকে (রহ.) পার্শবর্তী মগুরা গ্রামের দলিল উদ্দিন সিকদারের কন্যা ছাহেরা খাতুনের সাথে বিবাহ দিয়ে পবিত্র হজ্জ্ব পালনে যান এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর দাদা মুন্সী জহির উদ্দিনের সান্নিধ্যে তিনি ইসলাম প্রচার কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিছুদিন পর দাদা জহির উদ্দিন (রহ.)ও ইন্তেকাল করেন। এরপর তিনি বিধবা মাতা যোহরা বেগমের তত্বাবধানে ইসলাম প্রচার কাজে নিয়োজিত থাকেন।
দাদা ও পিতার ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় নেছার উদ্দিন পড়াশুনা করতে থাকেন। মাদারীপুরের একটি প্রাথমিক মাদ্রাসায় তিনি পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর ঢাকার হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন অধ্যায়নের পর নেছার উদ্দিন কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে তিনি হুগলি মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন এবং বৃত্তি সহকারে জামায়াতে-উলা পাস করেন। ঐ মাদ্রাসায় অধ্যয়ন কালে ১৮৯৫ খ্রি. সালে ফুরফুরা শরীফের পীর হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী আল কোরাইশী (রহ.) এর হাতে বাইয়াত হন। এ বাইয়াত গ্রহণের পর অল্পদিনের মধ্যেই নেছার উদ্দিন আহমদ সনদ প্রাপ্ত হন এবং পীর খেতাবে ভূষিত হয়ে সমাজের হাদী হন। তারই প্রচেষ্ঠায় উনিবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের হিন্দুদের পূজা পার্বনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ এ শর্ষিণা স্থানটি আজ উপমহাদেশের মধ্যে ইসলাম শিক্ষা ও ধর্ম প্রচারের বহুল প্রচারিত একটি নাম ছারছীনা শরীফ। পীর নেছার উদ্দিন পীর (রহ.) এর জীবনী থেকে জানা যায়, মাদারীপুরে পড়াশুনা অবস্থায় তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। এ সময় স্ত্রী ছাহেরা খাতুনের গর্ভে জন্ম নেয়া দুই ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রী ইন্তেকাল করায় ১৯০৫ খ্রি. সনে তিনি ৩৩ বছর বয়সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা গ্রামের চৌধুরী আব্দুল ওয়াফী সাহেবের কনিষ্ঠ কন্যা মোসাম্মাৎ আফছারুন্নেছাকে বিবাহ করেন। এ স্ত্রীর গর্ভে ৮ ছেলে ও ৬ কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তাদের মধ্যে হযরত মাওলানা শাহ্ আবু জাফর মোহাম্মাদ সালেহ ও শাহ্ মোহাম্মাদ সিদ্দীক পরবর্তীতে বড় ও মেঝ পীর নামে খ্যাত হন। শাহ্সূফী নেছার উদ্দিন (রহ.) ঝালকাঠী জেলার কাঁচাবালিয়া গ্রামের মোঃ রমজান উল­াহ গাজী সাহেবের কন্যা ছমেদুন্নেছাকেও বিয়ে করেন। ছমেদুন্নেছার কোল জুড়ে ৪টি কন্যা সন্তান জম্ম নেয়।
শৈশবকাল থেকেই দাদা মুন্সী জহির উদ্দীন আকন নাতি নেছার উদ্দিনকে সাথে নিয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন। ধর্ম প্রচার ও নসীহতের জন্য ১৭ বছর বয়সে ছারছীনার প্রতিষ্ঠাতা পীর শাহ্সূফী নেছার উদ্দিন (রহ.) ১৮৯০ খ্রি. সালে মু’মিন-মুসলমানদের একত্রিত করতে বছরে দুই বার অগ্রাহায়নের ১৩.১৪,১৫ ও ফল্গুনের ২৮.২৯. তারিখ ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রচলন করেন। যা ছারছীনা দরবার শরীফে আজও চালু আছে। বর্তমানে নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) এর এন্তেকাল দিবসে ১৬,১৭ ও১৮ মাঘ আরো একটি মাহফিল করা হয়ে থাকে। এবং ফাল্পুনের মাহফিলে সাথে ২৭ তারিখ একদিন বর্ধিত করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে লাখ-লাখ মুসল­ী ও আউলিয়ায়ে কেরামের আগমনে মাহফিলগুলি এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। এবং আল­াহ,আল­াহ্ যিকিরের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে স্বরূপকাঠীর প্রাণকেন্দ্র ছারছীনা দরবার শরীফ। ১৯০৫খ্রি. সনে শাহ্ সুফী নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) একখানা গোলপাতার দোচালা ঘর নির্মাণ করেন। ঐ ঘরের একপাশ কুতুবখানা এবং অন্যপাশ মুসাফিরখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। তখন থেকেই পীর নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) ব্যাপক ভাবে দ্বীন ইসলাম প্রচারে মঠবাড়িয়া উপজেলার গুদিঘাটায় খানকাহ্ স্থাপনসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় দীন ইসলাম প্রচারের কাজ করতে আরম্ভ করেন। হযরত পীর কেবলার পান্শী নৌকায় হেদায়েতী ছফর শুধু ওয়াজ-নসীহতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি সমাজের নানান সমস্যারও সমাধান করতেন। ঈমান আকীদা, ইসলামের রীতিনীতি ও আমল-আখলাক ইত্যাদি বিষয় শিক্ষাদানে তিনি ১৯১২ খ্রি. সালে গোলপাতার সেই কুটিরে প্রতিষ্ঠা করেন কেরাতিয়া মাদরাসা। ঐ মাদরাসার প্রথম শিক্ষক ছিলেন পীর কেবলার ভগ্নিপতি হাফেজ আলহাজ আব্দুর রশিদ। এ কেরাতিয়া মাদরাসা উদ্বোধন করেন ফুরফুরা শরীফের পীর কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্সূফী আবু বকর সিদ্দিকী আল কোরাইশী (রহ.)।
ছারছীনার ইতিহাস অতি প্রচীন ও গবেষনায় বিষয় হলেও যতটুকু জানা যায় তা হলো,“প্রায় দু’শ বছর আগে বৃটিশ শাসন ও হিন্দুদের প্রভাবে এদেশে ইসলাম শিক্ষার অবস্থা ছিল খুবই করুন। ইসলাম ধর্ম ধ্বংশের প্রায় শেষ প্রান্তে উপস্থিত হয়েছিল। ঠিক এমনি অবস্থায় নিগৃহিত মুসলমানদের জাগ্রত করার জন্য ১৯১৫খ্রি. সালে দক্ষিণাঞ্চলের মুসলমানদের কুরআন শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে উক্ত ছারছীনায় ৬২জন ছাত্র নিয়ে উক্ত কেরাতিয়া মাদরাসায় পীর শাহ্সূফী হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) মক্তব স্থাপন করেন। ঐ মক্তবের প্রথম শিক্ষক ছিলেন মরহুম ক্বারী মোর্শেদ আলী। এর কিছু দিন পরে ভান্ডারিয়ার এমদাদ আলী সাহেব এবং মৌলভী মির্জা আলী এই তিনজন শিক্ষক মাদরাসাকে জামায়াত নিয়মে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে আরবী,বাংলা ও ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরে ক্রমেই ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির কারনে ১৯১৭খ্রি. সনে পীর কেবলা নিজ বাগান বাড়িতে শত হাত লম্বা গোলপাতার ছাউনি বিশিষ্ট ‘ফাতেহিয়া বোর্ডিং’ নামে ছাত্রাবাস স্থাপন করেন। ১৯১৮খ্রি. সালে ঐ মক্তব বা মাদরাসাটিতে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসার সিলেবাস অনুযায়ী জামায়াত নিয়মে তা’লীম প্রদান শুরু হয়। এ নিয়মের আওতায় এসেই এ মাদ্রাসার নামকরণ করা হয় ‘ছারছীনা দারুসুন্নাত আলিয়া মাদরাসা’। ১৯১৯খ্রি. সালে উক্ত কাঠের কুটিরে কুতুবখানা রেখে মাদরাসার জন্য নূতন ভবন নির্মান করা হয়। পীর কেবলা মাদরাসা ও মক্তবে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাত্রদের থাকা ও খাওয়ার জন্য ১৯২০খ্রি. সালে গোলপাতার ছাউনি বিশিষ্ট ফাতেহিয়া বোর্ডিংটি আরো প্রসারিত করেন। বর্তমানে সুউচ্চ পাকা ভবনের এ লিল্লাহ বোর্ডিংটি বিশাল আকারে উন্নত করে এককালীন প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রের থাকা ও লেখাপড়ার উপযোগী করা হয়েছে। ১৯১৫খ্রি. সাল থেকে ১৯২৭খ্রি. সাল পর্যন্ত সময়কে এ মাদরাসার উন্নতির প্রথম স্তর বলা হয়। সসংশ্লিষ্ট ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক ১৯২৭খ্রি. সালে ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলিয়া মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভাপতি এবং পীর সাহেব কেবলা হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন (রহ.) সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পরেই মাওলানা লুৎফুল হক চৌধুরী মাদরাসার প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯২৮খ্রি. সনে উলা-জামাত খোলা হয়। তবে ১৯২৭খ্রি. সনের ২৯ জানুয়ারী মাসে মাদরাসা প্রথম মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয় এবং ১৯৩৭খ্রি. সনে জামাতে উলার স্থায়ী মঞ্জুরী পায় । প্রায় শত বছর পরে হলেও কেরাতিয়া মাদ্রাসাটিই আজ ইসলাম প্রচার ও ইসলামী শিক্ষার শিক্ষাপীঠ হিসেবে উপ-মহাদেশে বহুল আলোচিত একটি নাম ‘ছারছীনা দারুছুন্নাত আলীয়া মাদরাসা’ নামে পরিচিত। প্রধান মন্ত্রীর সহয়াতায় ১৯৩০খ্রি. সালে ৮০ হাত দৈর্ঘ ও ২০ হাত প্রস্ত মাদ্রাসা ভবন নিমার্ণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন হযরত পীর সাহেব কেবলা। ১৯৩১খ্রি. সালে ফুরফুরা শরীফের পীর আ‘লা হযরত মাওলানা শাহ্সুফী আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) এর মোবারক হস্ত দ্বারা ইট র্স্পর্শ করায়ে মাদরাসার নির্মান কাজ আরম্ভ করনে। ১৯৩২খ্রি. সালে এই ভিত্তি প্রস্তরের মধ্য দিয়েই ছারছীনায় প্রথম পাকা দালান নির্মিত হয়। সরকারী ডিক্লিয়ারেশন সূত্রে জানা যায় পীর নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) নিজ বসত বাড়ির জন্য সামান্য কিছু জমি রেখে বাকী সব জমি ১৯৩৪খ্রি. সালের ১৬ জানুয়ারী রেজিষ্ট্রী দলীলের মাধ্যমে ছারছীনা মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দেন। মাদরাসায় ছাত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৩৫খ্রি. সালে দ্বিতল আবু বকর সিদ্দিক হল, একতলা সুফী ফতেহ আলী হল নির্মিত হয়। এর পরে মাদরাসার আয়তন আরো বড় হতে লাগলো। ১৯৩৮ সালের ১২ ফ্রেব্রæয়ারী এ মাদরাসায় হিফজুল কুরআন বিভাগ চালু করা হয়। জামায়াতে উলা পাশ করার পর কলিকাতা ছাড়া পূর্ব বাংলায় টাইটেল পড়ার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পীর কেবলা ঐ বছরেই ১৮ সেপ্টেম্বর ছারছীনায় ১ম বর্ষের টাইটেল ক্লাস চালু করেন এবং ১৯৩৯খ্রি. সালে দ্বিতীয় বর্ষ পড়ানো শুরু করেন। ১৯৪০খ্রি. সনে কলিকাতার ডিরেক্টর জনাব মাওলা বক্সের নিকট পীর সাহেব কেবলা টাইটেল বিভাগ খোলার আবেদন করলে অবিভক্ত বাংলার প্রধান মন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং ব্রটিশের ছোট লাট ভারতের গর্ভনর মি. জন হার্বার্ট আর্থার মাদরাসা পরিদর্শনে আসেন। ভিজিটের পর ওই বছরই শুধুমাত্র ছারছীনা মাদরাসা হতে প্রাইভেট টাইটেল পরীক্ষার্থীদের কলিকতা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেন। ১৯৪১খ্রি. সালে পীর কেবলা উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ট প্রখ্যাত আলেম ও ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট গোল্ড মেডালিস্ট হযরত মাওলানা মো. তাজাম্মুল হোসাইন খাঁনকে ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলিয়া টাইটেল মাদরাসার সর্ব প্রথম প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে নিয়োগ দেন। এ সময়ে পূর্ব বাংলার শিক্ষামন্ত্রী মোয়জ্জেম হোসাইন ছারছীনা পরিদর্শন করে যে রিপোর্ট পেশ করেন তাতে বলা হয, ‘এ মাদরাসা ভবিষ্যাতে বাংলার জামে আজাহারে পরিণত হবে’। হাদীসের শিক্ষার্থীগন বাড়তে থাকলে পীর কেবলা ভারতের দেত্তবন্দ মাদরাসায় দুইজন মুহাদ্দিস চেয়ে চিঠি পাঠালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপমহাদেশের তখনকার সর্বশ্রেষ্ট ও সুবিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নিয়াজ মাখদুম তুর্কীস্থানী (খোতানী হুজুর) যিনি দেত্তবন্দ মাদরাসায় দাওয়ায়ে হাদীসে ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়েছিলেন এবং মুহাদ্দিস আবব্দুস্ সাত্তার বিহারী যিনি দেত্তবন্দ মাদরাসায় দাওয়ারে হাদীসে ফাষ্ট ক্লাশ সেকেন্ড হয়েছিলেন, প্রেরণ করেন। এই দুইজন যুগশ্রেষ্ট মুহাদ্দিস ও প্রিন্সিপাল তাজম্মুল হোসাইন খাঁন মাদরাসায় মান-সম্মত পাঠদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর থেকে ছারছীনার অধিকাংশ প্রাইভেট টাইটেল পরীক্ষার্থীগন কৃতিত্বের সাথে পাশ করতে থাকায় দেশ-বিদেশে ছারছীনার নাম ছডিয়ে পড়ে। একই বছর পীর নেছার উদ্দিন আহমদ(রহ.) বাঙালী হাজীদের জন্য পবিত্র মক্কায় একটি রিলিফ ফান্ড গঠন করেন এবং উক্ত ফান্ড থেকে মদীনা শরীফে একটি মুসাফিরখানাও প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম রাখা হয় নেছারিয়া মুসাফিরখানা। ১৯৪২খ্রি. সনে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক চিরচরত্ত আইন রহিত করে পূর্ব বাংলায় সর্ব প্রথম ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলিয়া মাদরাসায় টাইটেল ক্লাশ খোলার অনুমতি পাবার ব্যবস্থা করেন। ১৯৪৩খ্রি. সনে পীর কেবলা ‘জম্ইয়াতে হিযবুল­াহ’ নামে একটি ইসলামী অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও ছারছীনা শরীফ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। দেশব্যাপী এ সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে। এরপর ১৯৪৪খ্রি. সালে ছারছীনায় টাইটেল মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়। এর ৬ বছর পর ১৯৫০খ্রি. সালে ছারছীনা আলিয়া মাদরাসায় টাইটেল পরীক্ষার সেন্টার মঞ্জুর হয়। ১৯৪৫খ্রি. সনে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সুন্নাত তরীকা মোতাবেক আমলের নিমিত্ত শাহ্সূফী নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) ‘এহইয়ায়ে সুন্নাত বোর্ড ’ গঠন করেন। মাদরাসার এসব অবিস্মরণীয় সফলতার বাস্তবায়ন দেখে বিমুগ্ধ হয়ে যেসব নামী-দামী ব্যাক্তি বর্গ ভিজিটে নোট দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলেন,-ফুরফুরা শরীফের পীর হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী আল কোরাইশী (রহ.), পীর বাদশা মিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, খাজাঁ নাজিম উদ্দিন, স্পীকার মো. তমিজ উদ্দিন খান, শিক্ষামন্ত্রী মোয়াজ্জেম হোসাইন, মাওলানা রুহুল আমীন, ম্যাজিস্ট্র্যেট মি. টাফলেন ব্যারেটসহ আরো অনেকে। শেষোক্ত ব্যাক্তি তার রিপোর্টে লিখেছিলেন,“এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাদেশিক গর্ভনর হতে আরম্ভ করে জেলা অর্গানাইজার পর্যন্ত ছোট-বড় বহু লোক কর্তৃক পরিদর্শিত হয়েছে। তবে তাদের মারফত যে সাহায্য ও সহযোগিতা এ মাদরাসায় হয়েছে তা অতি নগন্য। এখানে অলৌকিক শক্তিমান একজন মানুষ বিস্ময়কর ক্ষমতা নিয়ে বসে আছেন, সরকার ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিক বিষয়ে কোন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে এই অসাধারণ শক্তিমান মানুষটি সর্ব-প্রকার সেবার জন্য প্রস্তুত আছেন”। ১৯৫০খ্রি. সনে পীর কেবলা ছারছীনা দরবার শরীফে হজ্জ্ব অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন স্থানের ১৪০১ জন ভক্ত মুরিদান হজ্জযাত্রী নিয়ে রিজার্ভ ষ্টিমার মোজাফফরী জাহাজ যোগে হজ্জে গমন করেন এবং হজ্জ পালন শেষে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ইতোপূর্বে বহুবার হ্জ্জ পালন করলেও এটাই ছিল তার জীবনের শেষ হজ্জ। এ সময়ে তার একান্ত সঙ্গী ছিলেন প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা তাজাম্মুল হোসাইন খাঁন। ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, পীর সাহেবের মৃত্যুর সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, তিনি ততোই তার জ্যোষ্ঠ্য পুত্র শাহ্ আবু জা’ফর মুহাম্মদ ছালেহ ও প্রিন্সিপ্যাল তাজাম্মুল হোসাইন খাঁনের সঙ্গে মন খোলা ভাবে ছারছীনা দরবার, মাদরাসা ও ইসলাম ধর্মের উন্নতির বিভিন্ন দিক নিয়ে এবং দীনী শিক্ষাধারাকে মজবুত করার উদ্দেশ্যে আলোচনা করছিলেন। ১৯৫১খ্রি. সাল হুজুর কেবলার মাদরাসার উন্নতির বছর হলেও উক্ত বছরকে পীর কেবলার অসুন্থাতার জন্য গভীর দুঃখ, বেদনা ও কঠিন সমস্যার বছর বলে অভিহিত করা হয়েছে। ১৯৫২খ্রি. সনের ৩১ জানুয়ারী রোজ বৃহস্পতিবার পীর শাহ্সূফী নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) নিজ বাড়ীতে ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন ( ইন্না লিল্লাহী অয়াইন্নাইলাইহে রাজীউন)। ছারছীনা জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে শুক্রবার তাকে দাফন করা হয়। দরবার শরীফের মসজিদের দক্ষিন পার্শ্বে ২৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট প্রস্ত হলুদ রঙ্গের যে দোতালা ছাত্রাবাসটি পীর নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) এর অমর কীর্তির স্বাক্ষর বহন করত বর্তমানে তা মসজিদ স¤প্রসারণের জন্য ভেঙ্গে ফেলে একই ডিজাইনে ছয়তলা বিশিষ্ঠ ভবন করা হয়েছে। মাদরাসা ভবন ও মসজিদের মাঝখানে পীর সাহেব কেবলার মাজার শরীফ অবস্থিত। পাঠক ছারছিনা দরবার শরিফের সংক্ষিপ্ত এ ইতিহাসে জানা অজানা অনেক তথ্য মনের অজান্তে ত্রæটি হতে পারে। লেখার বাহিরে আপনার জানা কিছু তথ্য থাকলে অবশ্যই জানাবেন। আমার মোবাইল নম্বর- ০১৭১২-৯১৫০৭৬।
ছারছীনার প্রথম পীর সাহেব কেবলার মুত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ্যপুত্র পীর শাহ্ আবু জা’ফর মোহাম্মদ সালেহ (রহ.) গদ্দিনশীন হন এবং দরবার শরীফসহ মাদরাসার যাবতীয় দায়িত্বভার গ্রাহন করেন। তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর শাহ্ আবু জা’ফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.)এর আমলে ছারছীনা দরবার শরীফের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এ সময়ে ছারছীনায় স্বল্প পরিসরের টিনের ঘর গুলোর স্থলে সারি সারি ধবল প্রাসাদসম বহুতল বিশিষ্ট অট্রালিকারাজী শোভা পায়। প্রথম পীর নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.)আমলে নির্মিত আবু বকর সিদ্দীকী হলের পশ্চিমে মূঈনুদ্দীন চিশ্তী হল হল, আলফেসানী হল ও নেছার হল ও ৩৩০ফুট দৈর্ঘ্য নূতন মাদরাসা ভবন তার অমর কীর্তি। এসব গুলোই নিপুন কারুকার্যে পূর্ণ। তবে এ সময়ের বিস্ময়কর যে সাফল্য তাহলো, দরবার শরীফের সীমানার স¤প্রসারণ। যা বর্তমানে মাহফিল ময়দান হিসেবে লক্ষ লক্ষ লোকের জমায়েত সামাল দিচ্ছে।
দ্বিতীয় পীর হযরত মাওলানা শাহ্ আবু জা’ফর মোহাম্মাদ ছালেহ (রহ.) এর সময়কাল ছারছীনা দরবার শরীফের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত। কেননা তিনি ছিলেন ইসলামী অঙ্গনের প্রাণ পূরুষ। তিনি বৃটিশের থেকে স্বাধীনতা লাভের সময়ে মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাস ভূমির দাবীতের পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি সিলেটকে পাকিস্তালে অর্ন্তভ’ক্ত করতে মাসাধিক কাল সেখানে অবস্থান করে রেফারেন্ডামের সময়ে জনগন যাতে পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয় সেজন্য প্রচারণা চালান। করিমগঞ্জে তার গাড়ীতে পাথর নিক্ষেপ করা হলেও তিনি হতোদ্দম হন নাই। সেদিন পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তরভূক্ত হয়েছিল বলেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বরূপকাঠী পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ফারুক সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় হযরত পীর ছাহেব কেবলা এতদঞ্চলে সর্ব প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে এবং প্রশিক্ষিত করতেও ভূমিকা রাখেন। স্বয়ং মরহুম মেয়র সেই প্রশিক্ষনে ট্রেনিং গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। পরবর্তীতে অবশ্য পরিস্থিতির আলোকে তিনি নীরব ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হন। স্বাধীনতার পর তাকে কিছুদিন বরিশাল জেলখানায় নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হলেও তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমানিত হয়ে বেকসুর খালাস পান। তার সময়কালে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইসলামী অঙ্গনের যাকিছু অর্জন হয়েছে তাতে ছারছীনার দ্বিতীয় মরহুম পীর কেবলার অবদান প্রাত:স্মরণীয়। সেনাবাহিনীর হাফ প্যান্টের পরিবর্তে ফুল প্যান্ট, স্কুলে ইসলামিয়াত পাঠদান বাধ্যতামূলক করা, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা, রেড ক্রসের নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট রাখা ইত্যদি তাঁর একক বিরল ব্যক্তিত্বের অবদানে সিক্ত। ছারছীনার দ্বিতীয় মরহুম পীর সাহেব কেবলার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে। তিনি হাজার হাজার মাদরাসা কায়েম, পোষকতা প্রদান, মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮০খ্রি. সালে তাঁকে স্বাধীনতা দিবসের স্বর্ণ পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ প্রায়ই তার শরণাপন্ন হতেন। ছুটে আসতেন ছারছীনায়।
৩৮ বছর গদ্দীনসীন থাকার পর ১৯৯০খ্রি. সালের ১৩ ফেব্রæয়ারী তিনি এন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় পীরের এন্তেকালের পর তাঁর পুত্র হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ বর্তমান গদ্দীনসীন পীরও পূর্বসূরীদের যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান পীর সাহেবের আমলে ছারছীনা দরবার শরীফ ও মাদরাসার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। বিশাল ছয়তলা ছালেহিয়া ছাত্রাবাস, সুপরিসর সাততলা মসজিদ, ৩১৮ফুট মিনার, নূতন আবু বকর সিদ্দীকী হল,দ্বিতল ডাইনিং হল, ক্যাম্পাসের মধ্যে কয়েক কি.মি. পাকারাস্তা, নূতন স্টেইজ, এবং দ্বিতীয় পীর সাহেবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা ইত্যাদি তার উলে­খযোগ্য অবদান।
তবে বর্তমান হযরত পীর সাহেব কেবলার যুগান্তকারী অবদান হচ্ছে দীনিয়া মাদারাসা। বৈষয়িক শিক্ষার মাত্রাতিরিক্ত চাপ, পারিপার্শ্বিক অনৈসলামিক চাল-চলনের ছোঁয়া এবং কিতাবী শিক্ষার অধ:পতন ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা যখন বিপন্ন প্রায়, তখন বর্তমান গদ্দীনসীন পীর সাহেব কেবলা স্বীয় পিতার রোপিত দারুল উলুম নেছারিয়া কদীম নেসাবের মাদরাসাকে ব্যপকতা দান করে জামেয়ায়ে নেছারিয়া দীনিয়া নামে দাওরায়ে হাদীস ও ইফতা পর্যন্ত মডেল মাদরাসা স্থাপন করে দেশব্যাপী হাজার হাজার দীনিয়া মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যদ্বারা আকীদা ও আমলে হক্কানী ও কিতাবী আলেম তৈরী হবার ধারা পূনরুজ্জীবিত হচ্ছে।
বর্তমানে ছারছীনায় একটি সরকারি মিনি হাসপাতাল, পূবালী ব্যাংক, একটি অডিটোরিয়াম, একটি ডাকবাংলা ও এখানে আয়োজিত তিনটি মাহফিলের নছীহত শোনার জন্য চতুর্থ দিক মিলে তিন কি.মি. বিশিষ্ট মাঠ, উজু ও গোসলের জন্য অভিনব কায়দায় কৃত্রিম জলধার, ফোয়ারা, সন্ধ্যা নদীর পাশ ঘিরে ছারছীনার চারদিকে বেষ্টনীসহ বহুতল বিশিষ্ট ছোট-বড় ১৮টি পাকা ভবন ও পাকা রাস্তায় ঘেরা গোটা ছারছীনা দরবার শরীফ ক্যাম্পাস। এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের সহযোগিতা পেলে এটা ইসলাম শিক্ষার পাশপাশি উপমহাদেশের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞাদের ধারণা। ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল ড. সৈয়দ মুহা. শরাফত আলী জানান, বর্তমানে ছারছীনায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্র ও শতাধিক শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন। ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগমন করে থাকে। তারা বিশুদ্ধ আকীদা, সুন্নতী আমল ও ইলমে দীন শিক্ষা করে আদর্শবান সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠছে। ছারছীনা দরবার ও তৎসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ সর্বদাই দলীয় রাজনীতি মুক্ত। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের ছোয়াচ্ হতে দূরে অবস্থান করে সর্বদা শান্তি-নিরপত্তা এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাদের অবস্থান সকল নাজুক পরিস্থিতি ও মূহুর্তে অত্যান্ত সফলতার সাথে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ৭ জুলাই ২০২১, ১৮:৩৯
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও