হৃদয় (২৫) ও রিয়া মনির (২১) বিয়ে হয়েছে শনিবার। সোমবার স্বজনেরা নবদম্পতিকে নিয়ে কনের বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে বিআরটির প্রকল্পের গার্ডার পড়ে তাদের প্রাইভেটকারের ওপর।
প্রাইভেটকারে আরোহী ছিলেন সাত জন বলে স্বজনরা জানায়। তারা হলেন- হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। শুধু বেঁচে গেছেন হৃদয় ও রিয়া। নব দম্পতিকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনেরা জানান, শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তারা সোমবার ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়।
রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডারের নিচে আটকে পড়া প্রাইভেটকার থেকে ২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে, তার মধ্যে আটকে থাকা মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নিহতরা হলেন রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, মহাসড়কে বিআরটিএ প্রকল্পের একটি ক্রেন (নম্বর- ৭০৮০) বক্সগার্ডার ওঠানোর সময় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডার প্রাইভেট কারের (ঢাকা মেট্রো গ-২২-৬০০৮) ওপর পড়ে। এতে শিশুসহ ছয়জন গুরুতর আহত হয়। গাড়িতে থাকা হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামের দুজনকে আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের ভাষ্যমতে, প্রাইভেট কারের ভেতরে রুবেল, ঝর্ণা এবং দুই শিশু জান্নাত ও জাকারিয়া চাপা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ভেতর থেকে তাদের উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, প্রাইভেটকারটির মধ্যে এখনও পাঁচজন আটকে রয়েছেন। তার মধ্যে দু’জন শিশু ও দু’জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়াও একজন বয়স্ক লোক ছিলেন, যিনি গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়ির সবাই নিহত হয়েছেন। গাড়ির সিটে এক নারীর কোলে একটি শিশুকে পিষে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া ওই নারীর নিচের অংশ গার্ডারের নিচে আটকে রয়েছে। তাদের উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা চলছে।
নিহতের পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমার বোনের বিয়ের বৌভাত শেষে বোনের শ্বশুর গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় গাড়িতে আরোহী ছিলেন মোট সাত জন। এর মধ্যে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজন গাড়িতে আটকে রয়েছে।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল জসীম উদ্দীন মোড়ে আড়ংয়ের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরার পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে আছি। গাড়ি থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভেতরে আরও দুইজন থাকার আশঙ্কা করছি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, পাঁচজনের মরদেহ গাড়ির ভেতরেই চাপা পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা ভালো।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, এই ক্রেন দিয়ে গার্ডারটি তোলার সময় সেটি ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। আর তাতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর কাজ চলতেছিল। প্রাইভেটকার নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন ক্রেনটির এক পাশ উল্টে গার্ডারটি ছিটকে গাড়ির ওপরে পড়ে যায়। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।
দুর্ঘটনার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার ভেঙে পড়েছে খয়েরি রঙের একটি প্রাইভেটকারের ওপর। ভারী গার্ডার মাঝ বরাবর পড়ায়, প্রাইভেটকারটি একদম চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। রাস্তায় জমাট রক্ত দেখতে পাওয়া যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িটি উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও দেখা যাচ্ছে।
গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।
সূত্র : নতুন সময়
সর্বশেষ আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২, ২২:২৮
পাঠকের মন্তব্য