বরগুনা পাথরঘাটার সহযোগীদের নিয়েই নিরাপদে কোটি টাকার ইয়াবা চালান

বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও তালতলী এলাকার বেশ কয়েকজন ট্রলার মালিক ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকা থেকে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবরণ কেন্দ্রে বেশ কিছু ট্রলার আসে। এসব ট্রলার নোঙর করা হয় পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটসহ আশপাশের এলাকায়। বঙ্গোপসাগরে টহল ও নজরদারি কম থাকার কারণে এসব ট্রলারেই ইয়াবার চালান বড় বড় চালানগুলো আসে। পরে সময় সুযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে রাজধানীতে চালান করে দেয়া হয়। রাজধানীগামী লঞ্চ ও সড়কপথে এসব চালান ঢাকায় চলে যায়।

২ এপ্রিল বরগুনা থেকে ঢাকাগামী সপ্তবর্ণা নামের একটি লঞ্চে ঢাকা সদরঘাট টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে ৫০ কোটি টাকার ৮ লাখ ইয়াবার একটি চালান উদ্ধার করে র‌্যব। এসময় পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদের র‌্যাবের কাছে তারা এর সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ট্রলার মালিকের নাম প্রকাশ করে। আর এর অর্থায়ন করে দেশের বাইরে থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ী।

বর্তমানে তরমুজের মৌসুম চলছে। বরগুনা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মহিপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ট্রাকে করে সড়কপথে ও ইঞ্জিনচালিত বোটে নৌপথে তরমুজের চালান রাজধানীসহ উত্তারাঞ্চলে চলে যায়। এসব তরমুজের চালানের সঙ্গে ইয়াবা চালান করে দেয়া হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইয়াবার একটি বড় চালান নৌ পথে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর নৌ রুটের লঞ্চ ব্যবহার করার চেয়ে ট্রলার ও কাভার্ড ভ্যান এবং ট্রাকযোগে রাজধানীতে ইয়াবা চালান করে দেয়া হয়। টেকনাফ হয়ে ট্রলারযোগে আসা চালান ট্রলার থেকে ট্রলারে হাতবদল হয়ে নৌ পথেই মাছধরা ট্রলারে বরগুনা পটুয়াখালী এলকার সমুদ্রতীরবর্তি এলাকায় ডেলিভারি করা হয়। সড়ক ও নৌ পথে চালান করে দেয়ার জন্য স্থানীয় একটি চক্রের সহায়তা নেয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। বিনিময়ে নির্র্দিষ্ট পরিমাণ উৎকোচ অথবা ইয়াবা পেয়ে যান স্থানীয় সহায়তাকারীরা। তারা সহযোগীদের মাধ্যমে এলাকায় এসব ইয়াবা বিক্রি করেন।

স্থানীয় সহযোগীদের মধ্যে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের একজন ঘাট শ্রমিক নেতা, বরিশালের একজন শ্রমিক মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা, যিনি ওয়ান ইলেভেন পরবর্তি সময়ে পাথরঘাটায় এসে ব্যবসা শুরু করেন, পাথরঘাটার কয়েকজন প্রভাবশালী ট্রলার মলিক, বরগুনা সদরের চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী, তালতলি উপজেলা দু’জন জনপ্রতিনিধি ও তাদের সহযোগী কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

মূল ব্যবসায়ীরা নেপথ্যে থেকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কিছু তরুণ ও নারীদের ব্যবহার করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে এক এক রুটে আলাদা আলাদা লোক কাজ করে থাকে। চালান সফলভাবে ডেলিভারি দিতে পারলেই নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেয়া হয় তাদের। ইয়াবা ব্যবসায় প্রবাসে থেকে অর্থায়ন হয়। অর্থায়নের সঙ্গে কারা জড়িত আটক ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে নাম প্রকাশ করেছে। বরগুনা ও পাথরঘাটার কিছু প্রবাসী ব্যক্তি রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পেছনে ইয়াবায় অর্থায়ন এমনও ধারণা করা হচ্ছে।

বরগুনার এসপি মারুফ আহমেদ বলেন, আমরা নৌ পথে, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে ইয়াবার চালান ডেলিভারি ও নৌ এবং সড়ক পথে রাজধানীতে ইয়াবা চালানের সঙ্গে কারা জড়িত এসবের তথ্য সংগ্রহ চলছে। পাশাপাশি এ কাজে স্থানীয় যারা সহায়তা করে আসছে তাদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুতই এ রুট বন্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯, ১৪:২৪
মুক্তিবাণী

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও