মৌলভীবাজারের টানা ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ৭ উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ।
কুলাউড়া ও বড়লেখা পৌর শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। এছাড়া পানিতে মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বিশেষ করে জেলার বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সদর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়া সদরসহ ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে জেলার জুড়ী উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এই উপজেলার ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের তথ্যমতে, পুরো জেলায় ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ হাজার মানুষ ও ১০ হাজার গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং ৬০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বড়লেখা পৌর এলাকাসহ ১০টি ইউনিয়ন, রাজনগরের ৪টি, শ্রীমঙ্গলের ৫টি এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুলাউড়া আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাউড়া উপজেলার ইসলামগঞ্জ এবং জুড়ীর নার্সারি ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা পরিষদের প্রশাসক, পৌর মেয়র, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ, ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিনিধিসহ জেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতিবৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য ভূমিধস এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ক আলোচনা হয়।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকাল পর্যন্ত জেলার সব নদী ও হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, পানিবন্দিদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ক্যাপশনঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় ভেলা দিয়ে পানিবন্দি মানুষ ও গবাদিপশু উদ্ধার করা হচ্ছে
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় পানিবন্দি মানুষ গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২২, ২৩:১১
পাঠকের মন্তব্য