সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যা করা রায়হানের মা সালমা বেগম চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করছেন, রায়হান হত্যা মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চুনাই লাল আত্মহত্যা করেছেন। অপর সাক্ষী হাসানকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যাতে সাক্ষী না দেন।
চুনাই লালের বাসা থেকে যুবক রায়হানকে ধরে নেওয়া হয়েছিল আর ফাঁড়িতে নেওয়ার পর রাতভর নির্যাতন-কান্নার আর্তনাদের সাক্ষী হলেন হাসান। রোববার রায়হান হত্যা মামলার শুনানিতে আসা রায়হানের মা সালমা বেগম আদালতপাড়ায় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আলী মাহমুদ জানান, সাক্ষী চুনাই লাল আত্মহত্যা করেছেন এটা সত্য। গত ১ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের তদবির করা হয়েছিল। আমরা ময়নাতদন্ত করেই লাশ দিয়েছি।
সালমা বেগম বলেন, সুস্থ নিরপরাধ আমার ছেলে রায়হানকে কাষ্টঘরের চুনাই লালের ঘর থেকে ধরে নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে নিয়ে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশ। ধরে নেওয়া এবং রাতভর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার সাক্ষী চুনাই লাল ও হাসান।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষীর মধ্যে চুনাই লাল নাকি দুই মাস আগে আত্মহত্যা করেছেন। অপর সাক্ষী হাসান বন্দর ফাঁড়ি সংলগ্ন কুদরত উল্লাহ মার্কেটের দোতলা থেকে রায়হানকে নির্যাতন ও তার কান্না শুনেছিল। তাকেও সাক্ষী না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই হাসানই আমাদের জানিয়েছিলেন নির্যাতনে রায়হান মারা গেছে। হুমকিতে থাকা হাসান এখন ঢাকায়।
রায়হানের মা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুই সাক্ষীরই যেখানে এমন অবস্থা সেখানে আমিসহ আমার পরিবার মোটেও নিরাপদ নয়। আসামিরা জেলে থাকলেও পুলিশের প্রভাবশালী লোক। জেলে থাকলেও তাদের প্রভাব খাটাচ্ছে। তারা জেল থেকে বেরুলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, তাই তাদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
গত বছরের ১১ অক্টোবর যুবক রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ হেফাজতে নিহত রায়হানের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। পুলিশের পর পিবিআই তদন্ত করে মামলার চার্জশিট দেয়।
চলতি বছরের ৫ মে মামলার পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। এতে অভিযুক্ত করা হয় পাঁচ পুলিশসহ ৬ জনকে। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান এখনো পলাতক।
সর্বশেষ আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:২৬
পাঠকের মন্তব্য