* স্থানীয়দের ভাষ্য: ইকবাল ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত
* দশ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন : দাবি মায়ের
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় আলোচিত যুবক ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঘোরাঘুরির সময় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন ইকবাল হোসেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এ ঘটনা স্বীকার করেন।
এদিকে স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন, গ্রেফতার ইকবাল হোসেনকে একজন মাদকাসক্ত বলে সবাই জানে। সে একজন ভবঘুরে যুবক।
অন্যদিকে ইকবালের মা আমেনা বিবি পুলিশকে জানিয়েছেন, তার ছেলে ১০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দীঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখার পর হনুমানের মূর্তি থেকে গদা সরিয়ে নেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন ইকবাল হোসেন। তবে কার নির্দেশে তিনি এ কাজটি করেছেন, তা এখনো জানাননি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকার সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবালকে আটক করে পুলিশ। খবর পেয়ে রাতেই কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকারের নেতৃত্বে কুমিল্লা থেকে রওনা দেয় পুলিশের একটি টিম। গতকাল দুপুরে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে এনে প্রাথমিকভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়ার দীঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কুরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় নয় মামলায় ৭৯১ জনকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে সংঘষে বেশ কয়েকজন মানুষ নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে কুমিল্লার পুলিশ বুধবার মণ্ডপের আশপাশসহ নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামে ওই যুবককে শনাক্তের কথা জানায়।
পুলিশের তথ্যমতে, একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এক যুবককে রাত ২টার পর স্থানীয় দারোগাবাড়ী শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) এর মাজার থেকে বেরিয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়, তখন তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল। এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির ওই পূজামণ্ডপে থাকা হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা ছিল। তখন হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদাটি পাওয়া যায়নি। সিসিটিভির আরেকটি ভিডিওতে হামলার দিন নানুয়া দীঘির পাড়ে উত্তেজিত জনতার সাথেও দেখা গেছে ইকবালকে। পুলিশ বলছে, এক সময় রঙ মিস্ত্রির কাজ করা ইকবালকে এলাকাবাসী একজন ‘ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত’ হিসেবে জানে। আর ইকবালের মা আমেনা বিবির ভাষ্য, তার ছেলে দশ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশ কর্মকর্তারা ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলার আশা করলেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত তা নিয়ে সংশয়ী।
বৃহস্পতিবার তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হলো.. টিভির মাধ্যমে দেখলাম তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল.. ‘ভবঘুরে’। কখনো কখনও এরকম যাদের ধরা হয়, কখনও বলে ‘পাগল‘, না হয় ‘ভবঘুরে’। এ ভবঘুরে কী করে পবিত্র কুরআন শরিফ চিনল? যদি ভবঘুরে হয়ে থাকে নতুন বই কোত্থেকে আনল? কে দিল? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরাল, যাতে হাতের কিছু না হয়, সেখানে আবার পবিত্র কুরআন শরিফটা দিয়ে দিল?- এটা কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এই ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, চক্রান্তকারীরা এর পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৫:০৪
পাঠকের মন্তব্য