শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ দুয়ার খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

# প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলছে
# মেডিকেল খুলছে ১৩ সেপ্টেম্বর
# নবেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা
# বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পরীক্ষা শুরু
# ১৫ অক্টোবরের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস শুরু করতে পারবে

প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে। আগের ঘোষণা অনুসারেই নবেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল কলেজগুলো খোলার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সশরীরে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৫ অক্টোবর খোলার ঘোষণা দেয়া হলেও এখন তারা চাইলে খুলতে পারবে। আগামীকাল রোববার আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত বছরের মার্চে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাঝে কয়েকবার খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর কার্যকর হয়নি। গত ১১ আগস্ট থেকে উঠে গেছে লকডাউন। ১৯ আগস্ট থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোও খুলে দেয়া হয়েছে। এরপর শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছুই খোলা রয়েছে। গত ২৬ আগস্ট সবশেষ ঘোষণায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ রয়েছে, খুললেও করোনা আক্রান্তের আশংকা রয়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই। এ দিকে দিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জোরালো হচ্ছিল। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকসহ সর্ব মহল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানানো হচ্ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবারের তথ্য অনুসারে, দেশে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগের দিন এই হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলেই করোনা বৃদ্ধি পাবে তা প্রমাণিত নয়। গত বছর আমেরিকার ফ্লোরিডায় একটি চমকপ্রদ গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে জানা যায়, মার্চে জরুরি অবস্থা জারির পর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসে স্কুল পুনরায় খোলা হয়।

সে সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যায়। দেখা যায়, স্কুল খোলা থাকার সময়টায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় সংক্রমিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ স্কুলের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে, বাকি ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছে কমিউনিটি ও সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে। আর উচ্চমাধ্যমিকের বা ১২ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাত্র ১১ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, বাকিটা এসেছে সামাজিক মেলামেশা থেকে। ফ্লোরিডার গবেষণা বলছে, স্কুল খোলার কারণে যেসব শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তার খুব সামান্য দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো। স্কুল-কলেজগুলো খোলার জন্য আমরা আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ১২ সেপ্টেম্বর তারিখকে আমরা নির্ধারণ করেছি।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আসছে নবেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে সরকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। এছাড়া ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। আগামী দিনে আরও কমবে। ফলে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ছুটি রয়েছে, তা আর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। ফলে আমরা চাইলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো, যদি এর মধ্যে আর বড় কোনো সমস্যা না হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে সঠিক মনিটরিংও নিশ্চিত করা হবে।

শিক্ষার্থীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়া প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিকাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত এ টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের পরিবারের সদস্যদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠক : বৃহস্পতিবার রাতে কোভিড প্রতিরোধ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠকেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়। কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ পরে বলেন, আমরা মনে করছি যে দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, এটা আমাদের করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় ভালো কাজ করেছে। এখন আমার মনে হয় সবদিক বিবেচনা করে স্কুল, কলেজ, বিশবিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারাবিশ্বে যে জনস্বাস্থ্যবিধি চালু আছে সেগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

কাল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক : রোববার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এ তথ্য জানান। মন্ত্রণালয়ের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) কোনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথসভা করবে ১ সেপ্টেম্বর।

সর্বশেষ আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:৪১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও