চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মাদক মামলাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলার আরেক অভিযুক্ত হলেন পরীমনির সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম দীপু।
আজ শুক্রবার সকালে বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার র্যাব যে তিনটি মামলা করেছে, তার মধ্যে পর্নগ্রাফি আইনে করা মামলা ছাড়া দুটি মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশ পেয়েছে।”
বুধবার রাতে ঢাকার বনানীতে পরীমনির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই অভিনেত্রী এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব।
এরপর অভিযান চলে বনানীতে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাড়িতে। সেখান থেকে রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে র্যাব আটক করে নিয়ে যায়।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বিকালে উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পরীমনি ও রাজের বাড়িতে ‘মদ ও মাদকদ্রব্য’ পেয়েছেন তারা। পরীমনির একটি মদের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও তার মেয়াদ ছিল না। এছাড়া রাজকে গ্রেপ্তারের সময় কম্পিউটারে ‘পর্ন কনটেন্ট’ পাওয়া গেছে।
এরপর গ্রেপ্তার চারজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, বনানী থানায় দায়ের করা হয় মাদক আইনে দুটি এবং পর্নগ্রাফি আইনে একটি মামলা।
র্যাবের করা জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘বিপুল পরিমাণ মদ এবং আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়। আর রাজের ফ্ল্যাট থেকে মদ ও ইয়াবার সঙ্গে ‘সেক্স টয়’ এবং একটি সাউন্ড বক্স জব্দ করার কথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চারজনকে আদালতে তোলা হলে মাদক আইনের দুই মামলায় চারজনকে চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ।
পরীমনির পক্ষে তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেন বিচারক।
রাজ ও সবুজ আলীকে পর্নগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানান বনানীর ওসি নূরে আযম মিয়া।
তিনি বলেন, পর্নগ্রাফি আইনে করা এ মামলার তদন্তভার এখনও বনানী থানা পুলিশের হাতেই আছে।
নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি ঢাকার চলচ্চিত্রে পরীমনি নামে অভিষিক্ত হন ২০১৫ সালে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
আর রাজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য রাজ অভিনয়ও করেন।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরীমনির চলচ্চিত্র জগতে অবস্থান তৈরিতে প্রযোজক রাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর চলচ্চিত্র জগতে পা দিয়েই তিনি অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন।
“পরীমনির বাসায় মিনিবারকে ঘিরে যে সব পার্টি হত, সেখানে অ্যালকোহল সরবরাহ করত রাজসহ কয়েকজন।”
‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ প্রতিষ্ঠানটি ‘অনৈতিক কাজে’ ব্যবহার করা হত জানিয়ে তিনি বলেন, “তার কম্পিউটারে যে পর্নগ্রাফিক কনটেন্ট এবং বিকৃত যৌনাচারের যে আলামত পাওয়া গেছে, সেগুলো সে কোন কাজে লাগাত, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।”
এর আগে মঙ্গলবার ‘ডিজে পার্টি’ আয়োজনের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শরিফুল হাসান (মিশু হাসান) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব সদরদপ্তরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসা থেকে উদ্ধার করা মদ ও মাদক দেখানো হয়।র্যাব সদরদপ্তরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসা থেকে উদ্ধার করা মদ ও মাদক দেখানো হয়।তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই পরীমনি ও রাজের বাড়িতে অভিযান চলে বলে কমান্ডার আল মঈন জানান।
তিনি বলেন, “মিশু হাসান ও জিসানের সহযোগিতায় ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে রাজ। এই সিন্ডিকেট রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে থাকে।”
র্যাব মুখপাত্র বলেন, “এসব পার্টি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও হয়ে থাকে। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। এসব অবৈধ অর্থ রাজ ঠিকাদারি ব্যবসা ছাড়াও শোবিজ জগতে ব্যবহার করতেন।”
এসব ব্যবসায় অর্থ জোগানদাতা কয়েকজন সম্পর্কে রাজ তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে আল মঈন বলেন, “তার দেওয়া তথ্য আমরা যাচাই করে দেখছি।”
সর্বশেষ আপডেট: ৬ আগস্ট ২০২১, ১২:০১
পাঠকের মন্তব্য