সিলেটে করোনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। দুই সপ্তাহের লকডাউনের শেষদিনে গতকাল করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৯ জনের। সব মিলিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লকডাউনের ফলাফল আরও ৪-৫ দিন পর পাওয়া যাবে। এতে হয়তো রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তের হার কমতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এ জন্য পশুর হাটকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যবিধিকে পুরোপুরি মেনে চলার তাগিদ তাদের। করোনার শুরু থেকে গত ১৬ মাস ধরে সিলেটে করোনায় মৃত্যু হচ্ছে।
কিন্তু গত ১৩ দিনের মৃত্যু অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সিলেটে আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে। এক সঙ্গে রোগী বাড়ার কারণে আইসিইউতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। টানা দুই সপ্তাহের লকডাউনের শেষ দিনেও এসে সিলেটে আইসিইউর জন্য হাহাকার চলছে। সরকারি হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এ দুটি হাসপাতালে আইসিইউর জন্য রোগীদের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আইসিইউ’র জন্য। হঠাৎ করে সরকারি ভাবে আইসিইউ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
সিলেটের ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ উন্নতমানের ক্লিনিক মিলিয়ে সিলেটে আইসিইউ বেড রয়েছে ৬৫টির মতো। এসব হাসপাতালেও রয়েছে আইসিইউ সংকট। তদবির করেও মিলছে না আইসিইউ বেড। এ কারণে সিলেটে দিন দিন রোগী মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৩ দিনে সিলেটে রেকর্ড সংখ্যক ৬৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এর বাইরে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে, উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যার কোনো হিসাব কারও কাছে নেই। এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল সিলেটে রেকর্ড সংখ্যক ৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃতদের মধ্যে ৭ জনই সিলেট জেলার। বাকি দু’জন হচ্ছে মৌলভীবাজারের। গতকাল শনাক্ত হওয়া ৪৩৩ জনের মধ্যে সিলেট জেলায় ২০৪ জন, সুনামগঞ্জে ৩২, হবিগঞ্জে ৯৮ ও মৌলভীবাজারে ৩৪ জন। এ ছাড়াও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৫ জনের শরীরে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। সিলেটে করোনায় ১৬ মাসে মৃত্যু হওয়া ৫৪৩ জনের মধ্যে সিলেট জেলায় ৪৩৭, সুনামগঞ্জে ৩৯, হবিগঞ্জে ২৪ ও মৌলভীবাজারে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট বিভাগে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত সংখ্যা সিলেট জেলায়ই বেশি। এ কারণে বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলাকেই করোনার ‘হট স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সিলেটে এখনো আক্রান্তের সংখ্যা অন্য তিন জেলার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। ফলে সিলেটকেই নিয়ে চিন্তা বেশি। আর মৃত্যুর সংখ্যা সিলেটে বেশি। করোনার স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সিলেটে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বেশি।
দুই সপ্তাহের করোনার লকডাউনের পূর্বে সিলেট শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়েছে করোনা। এ কারণে সিলেটের ১৩টি উপজেলায়ই করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে উপজেলাগুলোতে শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। প্রথম দিনে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। সিলেট নগরে মর্ডানার টিকা গ্রহণ করেছেন প্রায় ১৭ শ’ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান টিকাদান কর্মসূচি সফল হলে সিলেটে করোনার ঊর্ধ্বগতি ও মৃত্যুর মিছিল থামানো হয়তো সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ঈদে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে। নতুবা ঈদের পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
সর্বশেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১, ০০:৪১
পাঠকের মন্তব্য