কুয়াকাটা লতাচাপলি ইউনিয়ানের একটি মৌজা। অনেকে সাগরকন্যা নামেও ডাকেন। কুয়াকাটা বিশে^ এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। বৈশিষ্ট্যটি অন্য যে কোন সমুদ্র সৈকত থেকে কুয়াকাটাকে স্বতন্ত্র করেছে।
শীতের অতিথি পাখিদের জন্য কুয়াকাটা- অভয়াশ্রম। এক সময় এর নাম কুয়াকাটা ছিল না। কুয়াকাটার অধিবাসীরা মিষ্টি পানির অভাব অনুভব করার এক পর্যায় কেউ কেউ পুকুর খুড়ে পানি জড়ো করার ব্যবস্থা করতে লাগলো। এভাবে একটি-দুটি করে লোকজন যখন অনেক পুকুর/কুয়া খনন করলো তখনই স্বাভাবিক নিয়মে স্থানটি তার নতুন নামে আতœপ্রকাশ করলো কুয়াকাটা হিসাবে। কুয়াকাটা নামকরণের সঠিক দিনক্ষণ আমাদের অজানা রয়ে গেছে। তবে এই তথ্যটিকে সঠিক বলে মনে করা হয়।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৪৬ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছিল কুয়াকাটায় আমাদের এই শিক্ষা সফর। EST-1204 (Earth Science ll Sessional) নং কোর্সের অধীনে আমরা গিয়েছিলাম এই শিক্ষা সফরে। এ নিয়ে ৪র্থ বারের মত কুয়াকাটায় আমার এই শিক্ষা সফর। সাথে ছিল সহকর্মী জনাব তাপস কুমার চক্রবর্তী। অঞ্চলটি বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। পটুয়াখালীতে দেখার মত অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, ‘রাখাইন পল্লী’, হীড বাংলাদেশ (কুয়াকাটা), সুটকী পল্লী, লেবুর বন, লাল কাকড়ার দ্বীপ, ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, কাউয়ার চর, গঙ্গামতির চর, ৩৬ ফুট উচু বৌদ্ধ মন্দির, মিস্ত্রিপাড়ার রাখাইন তাত পল্লী, কুয়াকাটা ইকো-পার্ক, কুয়াকাটার কুয়া, ঝিনুক লেক, দয়াময়ীর মন্দির, কমলা রানীর দিঘি (কলাইয়া), ওশান পার্ক, সত্যেন সেন এর জন্ম স্থান ও পর্যটন সহায়তা কেন্দ্র।
গত ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ বেলা আনুমানিক ৬টার দিকে বাবলু পরিবহনের গড়াক গাড়িতে যবিপ্রবি ক্যাম্পাস হতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গাড়িটি যশোরের মনিহার হয়ে নড়াইলের মধ্যদিয়ে গোপালগঞ্জের কালনাঘাট পার হয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার মধ্যদিয়ে বরিশাল পৌছাল। আমাদের গাড়িটি রাত আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পটুয়াখালীর ‘পায়রা নদীর’ উপর লেবুখালী ফেরি পার হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকে কুয়াকাটার দিকে। পরের দিন সকাল আনুমানিক ৪টা ২০ মিনিটে আমরা পৌঁছালাম পটুয়াখালীর হোটেল ক্যাসেল ড্রীম-এ। সেখানে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ৮টা ২০ বেজে গেছে। এরপর ফ্রেশ হয়ে আমরা মায়ের দোয়া রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টুরিষ্ট স্পট কুয়াকাটায় প্রথম বার এসেছিলাম ২০০৯-১০ সেশনের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ৩২০ কিলোমিটার এবং পটুয়াখালী শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। বালুর সৈকতটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ কিলোমিটার প্রস্থ। এই সৈকত থেকে সূর্যদয় এবং সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। কুয়াকাটার বালুতে প্রচুর পরিমাণ মাইকা থাকে। কুয়াকাটা এমন একটা জায়গা সেখানে হিন্দু-বৌদ্ধ তীর্থ যাত্রীরা রাশপূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা উদযাপন করতে আসে। সমুদ্র সৈকতটি কুয়াকাটার কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত।
রাখাইন পল্লী : ১৮/০৪/২০১৭ তারিখ সকালে নাস্তার পর সবাই মিলে কুয়াকাটার ‘রাখাইন পল্লীর’ মার্কেটে যে যার মত শপিংয়ে বের হলো। আমিও কিছু কেনাকাটা সারলাম। ওখানেই প্রায় ১২টা বেজে গেল। স্থানটিতে এর আগেও চারবার আসা পড়েছে। রাখাইন পল্লীর পাশে শুকনো মাটির উপর রয়েছে প্রায় ২০০ বছর পুরোনো একটি নৌকা। এই নৌকাটি প্রতœতত্ত অধিদপ্তরের জন্য এক বিশাল আবিষ্কার। এই স্থানটি সমুদ্র সৈকতের গাঁ-ঘেষে অবস্থিত। ‘রাখাইন পল্লী’র পাশের্^ রয়েছে বৌদ্ধবিহার। রাজা শসাংঙ্কের মূর্তি ও চুমদ্রী দেবীর মূর্তি দেখা মিলবে সেখানে। কুয়াকাটার বৌদ্ধ মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত রয়েছে রাখাইন পল্লী। কথিত আছে এই রাখাইনরা বার্মা থেকে এসে পটুয়াখালিতে বসতি স্থাপন করেছে। তারা সাধারণত হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রাখাইন পল্লীতে রয়েছে একটি তাত মার্কেট। সেখানে সাধারণত মেয়েরা দোকানদারী করে। তাঁরা সাবলীল ভাবে দোকান চালিয়ে যাচ্ছে। ইদানিং কালে দেখা যায় রাখাইন পল্লীর মেয়েরা স্কুল কলেজে লেখা পড়া করছে এবং নিজেকে সাবলম্বী করে তুলছে। কিছু কিছু রাখাইন মেয়েরা দেখতে খুব সুন্দর এবং তাঁরা অনেকে ভদ্র ভাবে কথা বলে।
হীড বাংলাদেশ (কুয়াকাটা) : ১৮/০৪/২০১৭ তারিখে এই নিয়ে ২য় বারের মত এখানে আসা। কুয়াকাটার হীড বাংলাদেশের অফিসটি হতে পারে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। হীড বাংলাদেশের রেস্ট হাউজটি ৩ তালা বিশিষ্ট যার উপরের তলায় রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা এবং নিচতলা ফাঁকা। ফাকা যায়গায় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে রান্না করার ও খাওয়া দাওয়ার বিশাল ব্যবস্থা। বর্তমান অফিসটি রাখাইন পল্লীর খুব কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত।
শুটকী পল্লী : ১৮/০৪/২০১৭ তারিখে সুটকী পল্লী ভ্রমণ ছিল আমার জীবনে প্রথম। কুয়াকাটার প্রধান সমুদ্র সৈকত থেকে লেবুর চরে যেতে সমুদ্রের পাড়ে অবস্থিত শুটকী পল্লী। এই সুটকী পল্লীতে রয়েছে মাছ শুকানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। এই মাচায় শুকানো হয় ছোট মাছ। কিন্তু বড় বড় বাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আড়া, সেখানে শুকানো হয় বড় বড় মাছ। এই জায়গায় প্রচুর মাছ শুকানো হয় বলে এই এলাকার নাম দেওয়া হয়েছে শুটকী পল্লী। শুটকী পল্লীর চারপাশে খুব বেশী মাছের গন্ধ।
এই শুটকী পল্লীতে কাজ করে বাংলাদেশের দরিদ্র প্রকৃতির মানুষ। পুরুষেরা সাধারণত গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে কিনারে নিয়ে আসে। কিনারের বাড়িগুলোতে অবস্থানরত মেয়েরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে শুটকী পল্লীর দূরত্ব ২ কিঃ মিঃ। এখানে সাধারণত ভ্যান, অটো ও মোটর সাইকেলে যাওয়া যায়।
সর্বশেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ০০:১৮