ইউরো কাপের প্রথম সেমিফাইনালে জমজমাট লড়াই উপহার দিলো স্পেন ও ইতালি। যেখানে টাইব্রেকারে গিয়ে শেষ হাসি হাসল ১৯৬৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ইউরো কাপের সর্বোচ্চ তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল আজ্জুরিরা।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে প্রথম সেমি-ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ গোলে ছিল সমতা। পরে অতিরিক্ত যোগ করা সময়েও গোল করতে পারেনি কোনো দল। যার ফলে দ্বারস্থ হতে হয় টাইব্রেকারের। যেখানে ৪-২ ব্যবধানে জিতে ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে টেনে নিয়েছে ইতালি।
টাইব্রেকারে মানুয়েল লোকাতেল্লির নেওয়া ইতালির প্রথম শট ঠেকিয়ে দেন উনাই সিমোন। কিন্তু নিজেদের প্রথম শট উড়িয়ে মেরে সুযোগটা নষ্ট করেন দানি ওলমো।
এরপর ইতালির আর কেউ ব্যর্থ হয়নি। পরের তিন শটে একে একে বল জালে পাঠান আন্দ্রেয়া বেলোত্তি, লিওনার্দো বোনুচ্চি, ফেদেরিকো বের্নারদেস্কি। স্পেনের দুই ও তিন নম্বরে সফল শট নেন জেরার্দ মোরেনো ও থিয়াগো আলকান্তারা। কিন্তু তাদের চতুর্থ জন মোরাতার শট ঠেকিয়ে দেন জানলুইজি দোন্নারুমা। এরপর জর্জিনিয়ো ঠাণ্ডা মাথায় ঠিকানা খুঁজে নিলে শুরু হয় ইতালির উদযাপন।
ম্যাচের শুরু থেকে দেখা মেলে স্পেনের চিরচেনা ফুটবল। প্রথম ১৫ মিনিটে ৭৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রাখা দলটি সুযোগও পায় প্রথম; তবে ডি-বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি মিকেল ওইয়ারসাবাল।
একটু একটু করে গুছিয়ে উঠতে থাকে ইতালি। এর মাঝেই ২৫তম মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে দানি ওলমোর শট ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে এই একবারই দোন্নারুমার পরীক্ষা নিতে পেরেছে স্পেন।
বিরতির ঠিক আগে গিয়ে গোলে প্রথম শট নিতে পারে ইতালি; চোটে ছিটকে যাওয়া লিওনার্দো স্পিনাস্সোলার জায়গায় খেলা এমেরসনের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া প্রচেষ্টা ক্রসবারে বাধা পায়।
দ্বিতীয়ার্ধেও একইরকম দাপটে শুরু করা স্পেন ৫২তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সের্হিও বুসকেতসের শট ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে যায়। পাল্টা আক্রমণে পরের মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয় ইতালি, চিয়েসার প্রচেষ্টা ফেরান সিমোন।
খেলার ধারার বিপরীতে ৬০তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে গোল আদায় করে নেয় ইতালি। মার্কো ভেরাত্তির বাড়ানো বল ডি-বক্সের মুখে রুখে দিয়েছিলেন এমেরিক লাপোর্ত, কিন্তু বল চলে যায় চিয়েসার পায়ে। দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে জায়গা বানিয়ে একটু বাঁকানো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ইউভেন্তুস ফরোয়ার্ড।
পাঁচ মিনিট পর স্পেনকে আবারও হতাশ করেন ওইয়ারসাবাল। কোকের দারুণ ক্রস ছয় গজ বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়েও মাথা ছোঁয়াতে পারেননি রিয়াল সোসিয়েদাদের এই ফরোয়ার্ড।
পিছিয়ে পড়ার পরই ফেররান তরেসকে বসিয়ে মোরাতাকে নামান কোচ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দেশের মানুষেরই দুয়োর শিকার হওয়া এই স্ট্রাইকারের দারুণ নৈপুণ্যে সমতায় ফেরে স্পেন। ওলমোকে বল বাড়িয়ে ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে, ফিরতি পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নিখুঁত শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।
৯৮তম মিনিটে অনেক দূর থেকে ফ্রি কিকে ক্রস না বাড়িয়ে গোলে শট নেন ওলমো। বিপদ হতে পারতো, তবে সতর্ক ছিলেন দোন্নারুমা। টাইব্রেকারেও বিশ্বস্ত হাতে দলকে এনে দেন ফাইনালের টিকেট।
আগের পাঁচ ম্যাচে ৯০ মিনিটে মাত্র একটি ম্যাচ জেতা স্পেনের মূল দুর্ভাবনা ছিল সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা। মাঝের দুই ম্যাচে পাঁচটি করে গোল তারা করেছিল বটে; কিন্তু আগের ম্যাচেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮টি শট নিয়েও জালে বল পাঠাতে পেরেছিল মোটে একবার, সেটিও আবার আত্মঘাতী।
এখানেও সেই ব্যর্থতায় হেরে বসল দলটি। বল দখল ও আক্রমণে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল তারা। গোলে শট নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাই; তাদের ১৬ শটের ৫টি ছিল লক্ষ্যে। যেখানে ইতালির শট মাত্র সাতটি, অবশ্য এর চারটিই ছিল লক্ষ্যে।
শেষ দিকের খেলা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। নির্ধারিত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে জেগে ওঠা ইতালি অতিরিক্ত সময়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে ভীতি ছড়ানোর মতো তেমন কিছুই করতে পারেনি। তবে তাকে কী, ফাইনালের টিকেট তো তাদের হাতেই।
সর্বশেষ আপডেট: ৭ জুলাই ২০২১, ১০:২৭
পাঠকের মন্তব্য