বিহারে ক্রমেই বাড়ছে ‘অস্বাভাবিক বিয়ে’

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

ভারতের বিহারে অস্বাভাবিক বিয়ে এখন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। অস্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াচ্ছেন যেসব যুগল, তারা পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বা পার্টনারের বৈবাহিক অবস্থার তোয়াক্কা করছেন না।

মতের সঙ্গে মতের মিল হলেই মন দেয়া-নেয়া হচ্ছে। তার পরিণতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন তারা। এমনই এক স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটেছে মুজাফফরপুর জেলার ভাউরা কালান গ্রামে। সেখানে এক শাশুড়ি পালিয়ে গেছেন নিজের জামাইয়ের সঙ্গে। এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতো না পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ওই যুগল যখন বাড়ি ফিরে যান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর, তখন পরিবারের সবাই হতাশ। ওই শাশুড়ি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন- তিনি তার জামাইকে (মেয়ের স্বামী) বিয়ে করেছেন। এই ঘটনা ওই এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ওই নারীর মেয়ে এর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা আরকে সিং। তিনি বলেছেন, ওই নারীর মেয়ে নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন দ্বিতীয় বিয়ের। তাতে বলেছেন, তাকে তালাক না দিয়েই তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আরকে সিং বলেন, আমরা তদন্তে গেলাম। আমাদের সামনে ওই নারী ও তার নতুন স্বামী (জামাই) কোর্টে বিয়ের সার্টিফিকেট দেখালেন। ওই নারী ও তার নতুন স্বামী দাবি করেন, তারা বিবাহিত জীবনে খুব সুখী। এখন পুলিশ এ বিষয়ে আইনগত দিক বিবেচনা করছে।

উল্লেখ্য, ওই নারী এক বছর আগে তার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেন এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের পর ওই যুবক তার স্ত্রীকে নিয়ে ভাউরা কালানে শ্বশুরবাড়িতেই অবস্থান করতে থাকে। এরইমধ্যে, জামাইয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে ওই শাশুড়ি।

আরো একটি অস্বাভাবিক বিয়ের খবর পাওয়া গেছে বিহারের জামুই জেলায়। সেখানে এক যুবক তার মামীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। স্থানীয় আদালতে তাদের বিয়ের ভিডিও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, আদালতের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মামীর মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছে। এরপরই তার ওই মামী তার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ চাইছেন। এই যুবককে শনাক্ত করা হয়েছে চন্দন কুমার (২২) নামে। তিনি মুম্বইয়ের একজন অটোচালক। সেখানে তিনি তার এক মামার সঙ্গে বসবাস করতেন।

চন্দন স্বীকার করেন, তিনি তার মামীর প্রেমে পড়ে গেছেন। মহারাষ্ট্র সরকার দ্বিতীয় ঢেউ করোনার সময় যখন লকডাউন ঘোষণা করে, তখন চন্দন, তার মামা ও মামী মিলে তাদের জামুই এলাকার যথাক্রমে রতনপুর এবং মননপুরের গ্রামের বাড়ি চলে যান। চন্দনের মামা তার স্ত্রী ও চন্দনের মধ্যে গোপন সম্পর্কের বিষয় জানতেন না। লকডাউনের মধ্যে চন্দন নিজের বাড়ি ছেড়ে মননপুরে গিয়ে মামার বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। এতেও তার মামা কিছু ঠাহর করতে পারেননি।

২৬শে জুন নিজের স্ত্রী এবং চন্দনকে তিনি ঘরের মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলেন। এরপর তিনি তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপরই চন্দন তার মামীকে বিয়ে করে। তাকে নিয়ে চলে যায় মুম্বই।

এর মধ্যে আবার বিহারের রোহতাস জেলার একটি পরিবার হতাশায় ডুবে যায়। তারা জানতে পারে, তাদের পরিবারের এক সদস্য গোলু কুমার একজন হিজড়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এক বছর আগে একটি নাচের অনুষ্ঠানে নন্দিনী কুমারির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গোলু কুমারের। তখন থেকেই তারা একে অন্যের প্রেমে পড়ে যায়। ফলে তারা গোপনে বিয়ে করে ফেলে। পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে। কারগাহর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে থাকে তারা। গোলু কুমারের এক কাজিন ছোটু কুমার বলেন, কারগাহর গ্রামে গোলু কুমারের ভাড়া বাসার সন্ধান পাওয়ার পর আমরা তাকে সাসারাম শহরের বাড়িতে নিয়ে আসি। তাকে একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু গোলু কুমার নন্দিনী কুমারিকে সব সময় বার্তা পাঠাতে থাকে। এক পর্যায়ে নন্দিনী চলে যান গোলু কুমারের বাড়িতে এবং সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেন। ছোটু কুমার আরো বলেন, গোলু কুমারকে নন্দিনী ত্যাগ করতে রাজি না হওয়ায় গোলু কুমারের মা অচেতন হয়ে পড়েন।

পাটনা সিভিল কোর্টের একজন সুপরিচিত আইনজীবী রমেশ কুমার সিং বলেন, বর্তমানে বিহারে এমন বৈষম্যমূলক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বিয়ে একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছেন। আইনগত দিকের চেয়ে বিষয়টি অধিক পরিমাণে সামাজিক। অনেক মানুষ তাদের নিজেদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি মোটেও মাথায় নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে যে বা যিনি ভিকটিম হচ্ছেন তারা আইনগত বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা দ্বিতীয় বিয়ে করার আগে বিচ্ছেদের বিষয়টিও ভাবছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি পঞ্চায়েত পর্যন্ত গড়ায়। তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেয়।

সূত্র : অনলাইন গালফ নিউজ।

সর্বশেষ আপডেট: ৫ জুলাই ২০২১, ১৩:০২
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও