করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে গতকাল লকডাউনে তৃতীয় দিনে সড়কে লোক চলাচল বেড়েছে। ব্যক্তিগত ও নানা কারণে গতকাল ঘর থেকে বের হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা রিকশায় গন্তব্যস্থলে গেছেন। গতকাল ঢাকার সড়কে মানুষ এবং যানবাহনের সংখ্যা আগের দুইদিনের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি ও ব্যারিকেড। কোনো কোনো স্থানে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সড়কে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। টহল ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের। ঢাকার বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যারাই বের হয়েছেন তারাই পড়েছেন পুলিশের জেরার মুখে। যারা বিনা প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তাদের ট্রাফিক আইনে জরিমানা ও মামলা দেয়া হয়েছে। দিনের শেষে সন্ধ্যার দিকে ঢাকার কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার দোকান বন্ধ করার জন্য অভিযান চালায় পুলিশ।
ঢাকার বড় তিন বাস টার্মিনাল মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়াও বাইরে থেকে আসা কোনো যানবাহনকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নজরদারি বসায় পুলিশ। এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বিধি লঙ্ঘন করে বাসার বাইরে আসায় ৬২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শনিবার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ৩৪৬ জনকে। তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। আর সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হওয়ার কারণে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অতিমারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে সাতদিনের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও পল্টন মোড় এলাকা ঘুরে সড়কে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। প্রধান সড়কগুলোতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র?্যাব’র কঠোর অবস্থান দেখা গেছে। তবে ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে মানুষের জটলা এবং কারণ ছাড়াই আড্ডা দিতে ও অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যারা বের হচ্ছেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
পুলিশ ও র্যাব’র চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সড়কে চলাচলকারী লোকজনকে কেন ঘর থেকে বের হয়েছেন? কোথায় যাচ্ছেন? কেন যাচ্ছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন সব উত্তর দিতে না পেরেছেন তাদেরকে আর্থিক জরিমানা এবং কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরজমিন গতকাল দুপুর ১১ টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর দেখা যায়। যারা সড়কে বের হয়েছেন তাদের সবাইকে বের হওয়ার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
তবে অধিকাংশই কোনো কারণ ছাড়াই বের হয়েছেন। এমনই একজনকে ঠেকিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথমে মা অসুস্থ এবং বারডেম হাসপাতালে ভর্তি বলে জানান। অবশ্য পরে স্বীকার করেন যে, কোনো কারণ ছাড়াই তিনি ঘর থেকে বের হয়েছেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় রিকশা থেকে এক ব্যক্তিকে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোথায় যাবেন? জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা সুলতানা খান হীরা তাকে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জরিমানাও করেন।
এ বিষয়ে মারুফা সুলতানা খান হীরা সাংবাদিকদের জানান, অনেকেই কোনো কারণ ছাড়াই বাইরে বের হচ্ছেন। সঙ্গে অযুহাত তো আছেই। যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শনিবার ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস খোলা থাকায় গার্মেন্টসকর্মীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা পায়ে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে গেছেন। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁও খোলার কথা বলা হলেও সেখানে নিষেধ ছিল যে, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কেউ বসে খেতে পারবে না। কিন্তু, অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বসে খেতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ আপডেট: ৪ জুলাই ২০২১, ০১:২৩
পাঠকের মন্তব্য