মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের রহস্য উন্মোচন হয়নি

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

* নাশকতার কোনো আলামত মেলেনি : আইজিপি
* সাধারণ বিস্ফোরণে এত ক্ষয়ক্ষতি হয় না: বিস্ফোরক পরিদফতর
* ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি আর ব্যবহার করা যাবে না : ফায়ার সার্ভিস
* তিতাস ও বিদ্যুতের সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি দুই কর্তৃপক্ষের

রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের রহস্য উন্মোচন হয়নি। বিস্ফোরণে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হয়ে অন্তত ১৪টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে গতকাল সোমবার আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে বিস্ফোণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় সাত-এ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পুড়ে গেছে। নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল ‘রাখিনীড়’ ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে এতবড় বিস্ফোরণের ঘটনার ব্যাপারে কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, ফায়ার সার্ভিস এবং ফরেনসিক বিভাগ। তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছেন। বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- মগবাজারের ঘটনাটি আসলে কী, তা এত সহজেই অনুমান করা সম্ভব না। তবে এটি কোনো নাশকতা নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিতাতস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেনি। ট্রান্সফর্মার বা এসি বিস্ফোরণের বিষয়ে বিদ্যুতের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)। তবে সাধারণ কোনো বিস্ফোরণে এত ক্ষয়ক্ষতি হয় না বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক পরিদফতরের এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস বিভাগ। গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। তারা সবাই বলেছেন-তদন্ত ছাড়া এতবড় বিস্ফোরণের ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি আলাদাভাবে তদন্ত করছে।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত সাতজনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চারজনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ঢামেক হাসপাতাল মর্গে এসে স্বজন ও পরিচিতরা এই চারজনের লাশ শনাক্ত করেন। বাকি তিনজনের লাশ আগেই স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন মণ্ডল (৩৩), আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), মুস্তাফিজুর রহমান (২৫) ও স্বপন মিয়া। নিহত রুহুল আমিনের ভগ্নিপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরের মাধ্যমে এ দুর্ঘটনার কথা জানতে পারি। পরে খোঁজ করে সকাল ৮টার দিকে মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করি।’ তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানায়। নিহত রুহুল আমিন ওই গ্রামের খবির মণ্ডলের ছেলে। তিনি বর্তমানে শান্তিবাগ পানির ট্যাংকি এলাকায় থাকতেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি এক কন্যাসন্তানের জনক।

নিহত আবুল কাশেমের ভায়রা জামাল উদ্দিন জানান, কাশেমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায়। বর্তমানে তিনি গাজীপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তিনি এক কন্যাসন্তানের জনক। নিহত মুস্তাফিজুর রহমানকে শনাক্তকারী আইয়ুব আলী জানান, মুস্তাফিজ কবি নজরুল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি মগবাজার এলাকায় ওষুধ কেনার জন্য গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হন। নিহতের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানায়। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। বর্তমানে তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকতেন। নিহত স্বপন মিয়ার লাশ শনাক্তকারী নুরুল ইসলাম জানান, স্বপন মিয়া পেশায় প্রাইভেটকারচালক। তার বাসা ৩০০/১ উত্তর নয়াটোলা হাতিরঝিল এলাকায়। স্বপন দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসিন সরদার বলেন, লাশ চারটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। একজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের স্বজনরা এলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে পাঁচজন এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি। তারা হলেন- নূরনবী (৩৫), ইমরান (২৫), রাসেল (২৭) জাফর ও কালু মিয়া (৩৩)। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন ও ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন ভর্তি রয়েছেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ঢামেক হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে সুবাস (৩২) ও শামীম (৩০) এবং ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে কামাল (৪২) ও হৃদয় (২৮) ভর্তি রয়েছেন।

নাশকতার আলামত মেলেনি, আইজিপি : ‘রাখিনীড়ে’ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ‘একমুখী’ উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এটা মনে হচ্ছে গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। যদি কোনও নাশকতার বিষয় থাকতো তাহলে বিস্ফোরণের ব্যাপকতা চারদিকেই ছড়িয়ে পড়তো। তারপরও এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভির পাশাপাশি পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। গতকাল সকালে মগবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এসময় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন। আইজিপি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা নিয়ে চলবে তদন্ত কাজ। ড.বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, বিস্ফোরণস্থলের আশপাশে গ্লাসের ভাঙা টুকরো ছাড়া অন্য কিছু আমরা পাইনি। ভেতরে মিথেন গ্যাস রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস তাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে আসলে ভবনের ভেতরে আরও গ্যাস রয়েছে কিনা- তা জানা সম্ভব হবে। সাংবাদিকদের আইজিপি আরো বলেন, বিস্ফোরণ কেন হল- সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি, পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বলা সম্ভব হবে। এসময় গ্যাস সিলিন্ডার নিয়মিত মেইনটেন্সের বিষয়েও কথা বলে আইজিপি। তিনি বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার মেনটেনেন্স না করা হলে এটা একটি বোমে পরিণত হয়।

সাধারণ বিস্ফোরণে এত ক্ষয়ক্ষতি হয় না : বিস্ফোরক পরিদফতরের এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস বিভাগের উপসচিব ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘শুধু গ্যাস লিকেজ কিংবা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো সাধারণ বিস্ফোরণে এত এক্সপ্লোসন বা ক্ষয়ক্ষতি হয় না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে এটা ডিফারেন্ট। এর পেছনে আরও কোনো কারণ থাকতে পারে। সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বিস্ফোরক অধিদফতর থেকে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রোববার সন্ধ্যায় আমাদের তিন পরিদর্শক পরিদর্শন করে গেছেন। আজ আমরা গ্যাস ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে বিস্ফোরণের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ঘটনাস্থলে হাইড্রোকার্বনের অস্তিত্ব পেয়েছি, যা ন্যাচারাল গ্যাস অর্থাৎ সরকারিভাবে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ ও কানেকশন করা হয়। এতো বড় বিস্ফোরণের কারণ কী, সেটা নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি।’ ‘বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিস্ফোরক পরিদফতরের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জমে এ বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করছে পরিদফতর। অনেকে অনেক ধরনের ধারণা ও মত পোষণ করছেন। আমরা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে সুস্পষ্ট কারণ বলতে পারব।’ লিকেজ বলতে কী অনুমান করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরক এককভাবে এমনি এমনি হয় না। আশপাশে যদি আগুন থাকে, সিগারেট বা কোনো স্পার্ক থেকে হতে পারে। ইলেকট্রিক্যাল এক্সপ্লোরেশন হতে পারে, গ্যাসলাইনে লিকেজ বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের আরও তদন্ত করতে হবে।’

আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি-ফায়ার সার্ভিস : বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা কি-না, তা তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ। বিস্ফোরণের ঘটনায় সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধানে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ও ক্রাইম সিন ইউনিট। এদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ করছেন। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, বিস্ফোরণটা মারাত্মক ছিল। প্রাথমিকভাবে নানা কারণ উঠে আসলেও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত না। আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো ফরেনসিকে পরীক্ষা করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের চৌকস দল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এরিয়া কর্ডন করে আলামত সংগ্রহ করছেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী পরিচালক (ঢাকা) ছালেহ উদ্দিন আহমেদের বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা, জমে থাকা গ্যাসে ভবনটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল। কোনো স্পার্ক হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের তদন্ত দল আলামত সংগ্রহ করছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সংগৃহীত আলামত বিশ্লেষণ শেষে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি আর ব্যবহার করা যাবে না : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী। রিপেয়ারিং করেও ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর ওপরে আরও দুটি ফ্লোর রয়েছে। এটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়ে যেতে পারে। সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনটির ভেতরে যাতে কেউ প্রবেশ না করেন। পরবর্তীতে কোনো ধরনের বিপদের সম্মুখীন যাতে কেউ না হয়। কোনো গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তসাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে।’ তিনি জানান, এই বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের যত ভবন ছিলো, সেগুলোর কাচ ভেঙে পড়া বা দেয়ালে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ভবনের মালিককে বিষয়টি জানানো হবে। এটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পক্ষ থেকে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আজ তদন্তের প্রথম দিন। কী কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে তা তদন্ত অগ্রসর হলে বলতে পারব। ঘটনাস্থল থেকে আমরা আলামত সংগ্রহ করছি। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এখানকার সমপর্যায়ের উপাদান থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জ ও মগবাজারের ঘটনার আলামতের সঙ্গে মিল রয়েছে। আমরা মগবাজারের ঘটনাটিও তেমন অনুমান করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্তের একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রযেছি। ঘটনাস্থল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করছি। এই তথ্যগুলো একত্রিত করে পর্যলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে যেতে পারব।’

তিতাসের সংশ্লিষ্টতা নেই, দাবি এমডির : বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের কোনো সংশ্লিষ্ট নেই বলে দাবি করেছে কোম্পানিটি।  গতকাল তিতাসের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর প্রথম আলোর কাছে এই দাবি করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ। মো. নুরুল্লাহ বলেন, শরমা হাউস ও তার দুই পাশের ভবনে তিতাসের কোনো গ্যাস–সংযোগ নেই। ঘটনাস্থলে এলপিজির সিলিন্ডার দেখতে পেয়েছেন তিতাসের তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আজ বেলা তিনটার পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় তিতাস গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (ভিজিল্যান্স) সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব তিতাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন। আর সদস্য তিতাসের বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সত্যজিত ঘোষ। তদন্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তিনি বলেন, তাঁরা তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

বিদ্যুতের কোনও সমস্যা পায়নি ডিপিডিসি : বিস্ফোরণের ঘটনায় স্থানীয় বৈদ্যুতিক লাইনে কোনও ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে এই ঘটনা ঘটেনি, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এ দাবি করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিল্ডিংটির আশেপাশের সব বৈদ্যুতিক তার, একটু দূরে থাকা ট্রান্সফরমার সবই ভালো অবস্থাতেই আছে। তবে বিল্ডিংয়ের ভেতরে এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সেখানে কোনও ধরনের বৈদ্যুতিক ত্রুটি হয়েছিল কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, মগবাজারের যে ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এমন হতে পারে না। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে দেখা গেছে, আমাদের বিদ্যুতের তারগুলো সব ভালো অবস্থাতেই আছে। ডিপিডিসির নর্থ জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আশরাফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে। এদিকে প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, আমরা বিস্ফোরণের পরপরই স্পটে যাই। বিল্ডিং এর বাইরের সব বৈদ্যুতিক তার, অনেক দূরে থাকা ট্রান্সফরমার সব ঠিক আছে। এখন বাড়ির ভেতরটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এসি থেকে এই ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গাটি পরিষ্কার করার পর আমরা খুটিয়ে দেখবো। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, এসি বিস্ফোরণের কারণে এত বড় বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজারের ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের ওয়্যারলেস গেট এলাকায়   ‘রাখিনীড়’ ভবনের শরমা হাউসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১, ২৩:৫০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও