পহেলা জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে ৭ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে এবার কোন মুভমেন্ট পাস থাকবে না। একবারে জরুরি সেবা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। গতকাল সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্ট্রিক্ট পর্যায়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তাই এবার আমরা খুবই স্ট্রিক্ট ভিউতে যাচ্ছি। বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ব্যাটালিয়ান পুলিশ ও বিজিবি। তারা টহলে থাকবে। তাদরকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বের হওয়া যাবে না, বাসায় থাকতে হবে সবাইকে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া বা বিদ্যুৎ, পানি এসব জরুরি সেবা সেগুলো চলবে।
মুভমেন্ট পাস না থাকলে বিশেষ প্রয়োজনে কেউ কীভাবে বের হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল বলেন, ধরেন দাফন-কাফন করতে হবে, সেটা তো বাসায় করা যাবে না, সে সময় বের হওয়া যাবে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, সেক্ষেত্রে বের হতে পারবেন।
লকডাউনে আর্মি, বিজিবি, ব্যাটেলিয়ান পুলিশ টহলে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ‘অথরিটি’ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ যাতে কোনোভাবেই বের হতে না পারে তারা তা ‘মনিটর’ করবে। আমরা সশস্ত্র বাহিনী বলছি, টহল দেবে। কেউ কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া তাদের কাজের মধ্যে থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা সারাদেশের স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ভিডিও প্রেজেন্টেশনে দেখছি দেশের একটা বড় অংশ রেড, অরেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কিছু বাস্তব কারণে ৩০ জুন পর্যন্ত করতে পারছি না। তবে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই স্ট্রিক বিধিনিষেধ আরোপ হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি চাঁপাইনাবাবগঞ্জে স্ট্রিকলি লক করে দেওয়াতে অনেক কমে গেছে। সাতক্ষীরাতেও ইম্প্রুভ করেছে। অর্থাৎ যেখানে যেখানে আমরা আইসোলেটেড করে দিয়েছি মুভমেন্ট রেস্ট্রিক্টেড করে দিয়েছি সেখানেই কমেছে। এখন ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই এরপর সরকার যদি মনে করে আরো সাত দিন দিতে হবে। সেটাও বিবেচনায় আছে।
তাহলে এই সাতদিন সাধারণ ছুটি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ছুটি থাকবে কেন? নিষেধাজ্ঞা। লকডাউন আর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য আছে। সব বন্ধ করে দিতে পারবেন না। জরুরি সেবা চালু থাকবে।পোশাক শিল্প বা রফতানিমুখী শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে কি না জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে আবার বসা হবে, হয়তো কালকেই বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
বিধিনিষেধে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোন ব্যবস্থা থাকবে কি না জানতে চাইলে বলেন, কেবিনেট বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যথাসম্ভব গতবছর যেটা করা হয়েছে সেটা চালু রাখতে। বিশেষ করে শহর এলাকায় বেশি সমস্যা হয় সেটাকে নজরদারিতে রেখে যথাযথ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন কৌশল সম্পর্কে বলেন, এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আগামীকাল বা পরশুদিন আবার বসব। সেখানে বিস্তারিত আলাপ হবে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে কি না জানতে চাইলে বলেন, সব থাকবে। আর্মি, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন পুলিশ তারা সবাই টহলে থাকবে। তাদেরকে যতটুকু সম্ভব যা দরকার, সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাদেরকে অথরিটি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে কোনোভাবেই মানুষ মেসিভভাবে বের হতে না পারে। কেউ কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে।
এবার কোন মুভমেন্ট পাস থাকছে কি না জানতে চাইলে বলেন, থাকবে না। এবার কোন মুভমেন্ট পাস থাকবে না। কেউ বের হতে পারবে না। সাতদিন সবাই ঘরে থাকবে। রিকশা চলবে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু না বললেও তিনি বলেন, কেউ বের হতে পারবে না।
৭ জুলাইয়ের পর আবারো লকডাউন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যেটা এক্সপেরিয়েন্স সেটা হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্ট্রিক্টলি ব্লক করে দেওয়ায় সংক্রমণ অনেক কমে গেছে। সাতক্ষীরায় ইম্প্রুভ করেছে। যেখানে যেখানে আমরা মুভমেন্ট রেসস্ট্রিক্ট করে দিয়েছি সেখানে ইম্প্রুভ করছে। সরকার যদি মনে করে আরও সাতদিন যেতে হবে, সেটাও বিবেচনায় আছে।
প্রসঙ্গত, দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৫ জুন কোভিড-১ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সারাদেশে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শার্টডাউন দেওয়ার সুপারিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ সময় বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা রাখা যাবে- সেক্ষেত্রে কর্মীদের নিজস্ব পরিরহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১, ১৩:৩৬
পাঠকের মন্তব্য