রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস গেট এলাকায় একটি ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আশেপাশের হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ৪৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিউটে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা কত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ, ফায়ার সার্ভি বা দায়িত্বশীল কেউ। এটি কিসের বিস্ফোরণ সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিস্ফোরণের শব্দ বহু দূর থেকে শোনা গেছে। বিস্ফোরণের ঘটনাটি আসলে কী তা ক্ষতিয়ে দেখছে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বিম্ফোররেণর পর ওই এলাকায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শত শত মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সড়কের দুই পাশের যান চলাচল।
স্থানীয়রা জানান, বিকট শব্দে বিস্ফোরণে এলাকা প্রকম্পিত হয়। এসময় আশেপাশের কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের পর ধসে পড়ে ভবনের দেয়াল, এসি ও জানালার গ্লাস। সড়কে চলাচলরত ৫/৭টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গ্লাস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ওই বাসগুলোর যাত্রীরাও আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের পর চূর্ণবিচূর্ণ হয় বাসের গ্লাস, স্টিয়ারিং উড়ে যায়। যাত্রীরা রক্তাক্ত হয়ে বাসের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন। আশেপাশের ভবন ও বাসের ভাঙা কাচ চারপাশে ছিটকে পড়ে। যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে তার দেয়াল ও আসবাবপত্র, এসি জানালা উড়ে যায়।
ঘটনাস্থলের পাশেই রয়েছে রাশমনো হাসপিটাল, বিশাল সেন্টার মার্কেট, উজ্জল হোটেল, মগবাজার প্লাজা, আগরা ও আড়ং এর শো’ রুম। বিস্ফোরণের ঘটনায় এসব স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ততম এই সড়কে বহু মানুষের দেহ পড়ে আছে। পড়ে থাকা এসব দেহগুলোর অনেকাংশই আগুনে পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে একজনকে মৃত দেখতে পেয়েছেন স্থানীয়রা। একটি শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর শিশুটির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
শফিকুল ইসলাম নামে একজন ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন, মগবাজার প্লাজার পাশের একটি ভবনের অনেকাংশ ভেঙে গেছে। সেখানে দেয়ালে বেশ কয়েকজন চাপা পরেছেন। স্থানীয় আবুল হোসেন জানান, বিকট বিস্ফোরণের শব্দে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তবে হতাহত মানুষের স্বজন ও শত শত মানুষের কারণে ঘটনাস্থলের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনাটি একেবারেই বড় কিছু হবে। অন্য একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাসের সিলিন্ডিার বিস্ফোরণের কথা কেউ কেউ বললেও আসলে তা নয়। কেননা একটি বাসের ভেতরের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলে দুই পাশের সড়কে কয়েকটি বাসের ব্যাপক ক্ষতি হয় কি করে? বিস্ফোরণে একটি বাসের সামনের অংশ ও বাম্পার ছুটে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় বাসের ভেতরে ও রাস্তায় পড়ে আছে। তাদেরকে লোকজন ধরে মগবাজার রেল গেটের কাছে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও দগ্ধ কয়েকজনকে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে যায়। রাস্তার ওপরে এসি, জানালার গ্লাস ও ক্ষতিগ্রস্ত বাসের যন্ত্রাংশ পড়ে আছে।
স্থানীয় নবিউল বলেন, মগবাজার প্লাজার পাশে একটি ভবন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন, ওই ভবনের পাশের ফার্স্টফুডের দোকান থেকেও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ জানান, ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকদিন ধরে ড্রেনের সংস্কার কাজ চলছে। তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস পাইপ লাইনের সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, আমরা একটি এসি বিস্ফোরণ হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। কেউ কেউ আবার ফোন করে বলেছে গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। এরশাদ হোসেন আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। হতাহতেরও সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের বলেন, সেখানে ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে শুনেছি। এখনও নিশ্চিত হতে পারছি না। পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম সেখানে আছে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১, ১৬:৫২
পাঠকের মন্তব্য