কঠোর বিধি নিষেধেও থামছে না মানুষের ঢাকায় আসা যাওয়া

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় লকডাউনের কারণে গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় লকডাউনের কারণে গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

কঠোর বিধি নিষেধেও থামছে না মানুষের ঢাকা আসা-যাওয়া। কারণে অকারণে বাইরের জেলার মানুষ ঢাকায় আসছেন। আবার অনেকেই ঢাকা ছেড়ে বাইরে যাচ্ছেন। তবে অনেকে অতি প্রয়োজনে ঢাকায় আসা যাওয়া করছেন। তাদের বেড়েছে ভোগান্তি। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারিতে এরকম সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও দলে দলে লোকজন ঢাকায় আসছেন যাচ্ছেন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ করার পরেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না মানুষের চলাচল। সব বাধা পার হয়ে দুর্ভোগ সয়ে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। আবার অনেকেই ঢাকাতে প্রবেশ করছেন। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ৭ জেলায় চলছে লকডাউন। এ কারণে দেশের দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে বাস মালিক সমিতি। কঠোর লকডাউনের মধ্যে বাস বন্ধ থাকলেও কিছুতেই সাধারণ মানুষদের যাতায়াত আটকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই অনেক মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করছেন, আবার রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা কারণে প্রাইভেটকারে বা হেঁটে ঢাকায় ঢুকছেন মানুষ। আবার বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় প্রাইভেটকার থামিয়ে যাত্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে যারা অতি প্রয়োজনে ঢাকায় আসা যাওয়া করছেন। আবার অনেকে বিনা প্রয়োজনেও আসা যাওয়া করছেন। বাগেরহাট যাবেন মোহাম্মদ আলামিন জানান, ধানমন্ডি থাকি।  বাড়িতে খুব জরুরি কাজ থাকায় যেতে হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ। অনেকের কাছেই শুনেছি আমিনবাজার আসলে নাকি কিছু না কিছু পাব বাড়ি যাওয়ার জন্য।  এখানে এসে সেটাই দেখছি।  মাইক্রোবাস, বা প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেল পাওয়া যাচ্ছে আরিচা পর্যন্ত যেতে।  তাই এখন প্রাইভেটকারে করে পাটুরিয়া ঘাটে যাব। কোনোভাবে ঘাট পার হয়ে ভেঙে ভেঙে চলে যাব বাগেরহাট।

রবিউল নামের আরেক যাত্রী বলেন, লকডাউন এখন মুখে মুখে, বাস্তবে নেই। অনেকেই সেই শুরু থেকেই লকডাউনের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। আবার ফিরেও আসছেন। কোনো সমস্যাই হচ্ছে না।  বাস বন্ধ রেখে কি লাভ। মানুষ কিছু ঠিকই যাচ্ছে।

পিরোজপুর থেকে আসা নাজমুল হোসেন বলেন, খুব সকালে প্রাইভেটকারে করে পিরোজপুর থেকে রওনা দিয়েছি। একটু চিন্তায় ছিলাম যে ঢাকা ঢুকতে দেবে কিনা পুলিশ বাহিনী।  কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে রাস্তায় কোথাও কোনো চেকপোস্ট দেখতে পাইনি।  কোনো পুলিশ থামায়নি আমাদের গাড়ি। খুব আরামেই চলে এসেছি।

রাজধানী ঢাকাতে ফাঁকা থাকলেও আমিনবাজার ব্রিজের ওপর থেকে তীব্র যানজট।  প্রাইভেটকার ও ট্রাকের জটে মানুষ পায়ে হেঁটেই আমিনবাজার পাড়ি দিচ্ছেন। অন্যদিকে ট্যাক্সি ও ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যাত্রী পরিবহন করছে। প্রাইভেটকারগুলো সুযোগ বুঝে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

আমিনবাজার এলাকায় দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা আসছে। রাজধানী থেকেও অনেক মানুষ যাচ্ছে।  আমরা কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছি না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।

এদিকে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হলেও, তা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। সীমান্তবর্তী জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করছে মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এমন বিধিনিষেধ সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে না রাজধানীতে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী। যার বেশিরভাগই ভারতীয় ডেল্টা ধরনের। তবে, এখন পর্যন্ত রাজধানীতে সংক্রমণ কিছুটা কম।

রাজধানীতে আসা একজন জানান, পঞ্চগড় থেকে এসেছি। ১০০০ টাকা টিকিট নিয়েছে। মাঝেমাঝে গাড়ি আটকেছে। আরো একজন বলেন, নওগাঁ থেকে ৯শ’ টাকার টিকিট কেটে বাসে উঠেছি। হাঁটুভাঙা নামিয়ে দিয়েছে, সেখান থেকে আরেকটা লোকাল বাসে উঠেছি।

আরেক যাত্রী বলেন, চান্দুরা থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত বাসে এসেছি। সেখান থেকে হেঁটে আসলাম। এক বৃদ্ধ বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে আসলাম। যেভাবেই হোক বের হয়েছি। লকডাউনের কিছুই তো পেলাম না। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন পরিবহণে আসার ফলে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর এসব যানবাহনও মানছে না চলাচলের শর্ত।

ভোগান্তির শিকার একজন বলেন, হেঁটে আসতে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কোন উপকার হচ্ছেনা, উল্টো জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। এক বাসচালক বলেন, জীবনে এরকম কষ্ট আর দেখি নাই। যাত্রীর প্রচুর চাপ, মানুষ তো যাবেই।

ঢাকাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় জানিয়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন বিধিনিষেধ ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ কমাতে পারবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান-উর রহমান মনে করেন, ‘আশেপাশের জেলাগুলোতে লকডাউন দিয়েছে। এতে সংক্রমণের তারতম্য হবেনা, সংক্রমণ কমানোর কোন সুযোগই নেই। আর বর্ডারে চাইলেও সরকার পুরোটা করতে পারবে না। মেইন রোড ব্যবহার না করে তারা অলিগলি দিয়ে ঢুকেছে। বলার সময় বলছে সংক্রমণ কমবে আসলে কোন সংক্রমণই কমবে না।’ সবাইকে আরো কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১, ১৮:৫০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও