আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে ইংল্যান্ডে পা রাখলেও বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিটা ভালো হল না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটা ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
মঙ্গলবার কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারল না বাংলাদেশ। মাশরাফিরা হারলেন ৯৫ রানের বড়সড় ব্যবধানে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লোকেশ রাহুল (১০৮) ও মহেন্দ্র সিং ধোনির (১১৩) দুরন্ত সেঞ্চুরিতে সাত উইকেটে ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ে ভারত।
জবাবে তিন বল বাকি থাকতেই ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। হারা ম্যাচে প্রাপ্তি বলতে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ফিফটি। তবে এখানেও আছে আক্ষেপ। দু’জনই হারিয়েছেন সেঞ্চুরির সুযোগ। লিটন দাস ৯০ বলে ৭৩ এবং মুশফিকুর ৯৪ বলে ৯০ রানে আউট হন। আগেরদিন অনুশীলনের সময় হালকা চোট পাওয়ায় কাল খেলেননি তামিম ইকবাল। তার অনুপস্থিতিতে ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন লিটন ও সৌম্য সরকার (২৫)।
এই জুটি ভাঙতেই জোড়া আঘাতে টালমাটাল বাংলাদেশ। দশম ওভারে টানা দুই বলে সৌম্য ও সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তৃতীয় উইকেটে ১২০ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিলেন মুশফিক ও লিটন। এরপর আবার জোড়া ধাক্কা। এবার টানা দুই বলে লিটন ও মোহাম্মদ মিঠুনকে ফেরান যুজবেন্দ্র চাহাল।
সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। জাঁকিয়ে বসেন ভারতের স্পিনাররা। একে একে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও মোসাদ্দেক হোসেনকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন কুলদীপ যাদব। সাব্বির ফেরেন আরেক স্পিনার জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে। ২১৬ রানে আট উইকেট হারানো বাংলাদেশকে ২৬৪ পর্যন্ত নিয়ে যান সাইফউদ্দিন (১৮) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৭)।
বিশ্বকাপে নামার আগে এই ম্যাচটি ছিল নিজেদের ঝালিয়ে নেয়া ও ঘাটতির জায়গাগুলো দেখে নেয়ার শেষ সুযোগ। সেই সুযোগটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ। টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুটা অবশ্য দারুণ করেছিলেন মাশরাফিরা। তবে শুরুর সাফল্য শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
রাহুল ও ধোনির সেঞ্চুরিতে সাড়ে তিনশ’ ছাড়িয়ে যায় ভারতের সংগ্রহ। নয়জন বোলার ব্যবহার করেও ভারতকে অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিং অনুশীলনটা তাই মোটা দাগে ভালো হয়নি টাইগারদের। দলের মূল চার পেসার অবশ্য খারাপ করেননি। রুবেল হোসেন দুটি এবং মোস্তফিজুর রহমান ও সাইফউদ্দিন নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
তবে ঝড় বয়ে যায় স্পিনারদের ওপর দিয়ে। দুই উইকেট পেলেও ছয় ওভারে ৫৮ রান দিয়েছেন সাকিব। মিরাজ পাঁচ ওভারে ৪০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। এছাড়া অনিয়মিত লেগ-স্পিনার সাব্বির ৩০ রানে নেন একটি উইকেট। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হয়েছিল ১০ মিনিট দেরিতে। মাত্র দুই বল হওয়ার পর ফের বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ থাকে মিনিটবিশেক।
শুরুতে বাংলাদেশের বোলারদের দাপটে ভারতের ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব ছিল দেখার মতো। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ১৯ রান। ২৫ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল চার উইকেটে ১২৩। কিন্তু রাহুল ও ধোনির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এরপর বাংলাদেশই উল্টো চাপে পড়ে যায়। বোলিংয়ে বাংলাদেশকে সেরা মুহূর্তটি উপহার দিয়েছেন সাইফউদ্দিন। বলটা ছিল মিডল স্টাম্পে। ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করেন বিরাট কোহলি। বল সোজা চুমু খায় অফ স্টাম্পে। সাইফউদ্দিনের উদযাপন ছিল দেখার মতো।
ডান পা’টা তুলে আনেন প্রায় বুক বরাবর। যোদ্ধার মতো। আর কনুইটাকে বানান ঢাল। কোহলির উইকেট বলে কথা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নেমেই এমন মহামূল্যবান উইকেট। এক স্বপ্নপূরণের দিনে আরেক স্বপ্নপূরণ। কোহলির আগে শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মাকে বড়শিতে গাঁথেন যথাক্রমে মোস্তাফিজুর ও রুবেল হোসেন। পাঁচ রানে ধাওয়ান, ৫০-এ রোহিত, ৮৩-তে কোহলি। বিজয় শংকর এলেন আর গেলেন।
এরপরই রাহুল-ধোনির প্রতিরোধ। ১৬৪ রানের জুটি গড়ে রাহুল যখন বিচ্ছিন্ন হন, তার নামের পাশে ১০৮ রান। ৯৯ বলে ১২টি চার ও চারটি ছয় মারা রাহুলের হন্তারক সাব্বির রহমান। রাহুলের প্রস্থানের পর ভারতের রানের চাকা সচল রাখেন এমএস ধোনি। আবু জায়েদকে ছয় মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহি। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের শেষ ওভারে ধোনিকে থামান সাকিব।
৭৮ বলে ১১৩ রানের দারুণ ইনিংসটি ধোনি সাজিয়েছেন আটটি চার ও সাতটি ছক্কায়। নিজের আগের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকেও (২১) ফেরান সাকিব। দিনেশ কার্তিক সাত ও রবীন্দ্র জাদেজা ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১ জুন ২০১৯, ০৫:২৮