* ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন -পুলিশ
দশ দিন আগে রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে নিখোঁজ আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের (৩১) খোঁজ মিলেছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ত্ব-হা রংপুরে তার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, আদনান ব্যক্তিগত কারণে গাইবান্ধায় এক বন্ধুর বাড়িতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন রংপুর মহানগর পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবু ত্ব-হা পুলিশকে জানিয়েছেন ঘটনার দিন রাজধানীর গাবতলী থেকে স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে চলে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনীতে এক বন্ধুর বাড়িতে। এরপর থেকে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ব্যক্তিগত কারণে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
এখানে তার সঙ্গে দুই সঙ্গী ছিলেন। তারা হলেন গাড়িচালক আমির উদ্দিন ও মুহিত। অপর সঙ্গী মুজাহিদকে বগুড়ায় রেখে যান। এক সঙ্গীকে নিয়ে অপরজনকে বন্ধুর বাড়িতে রেখে শুক্রবার বিকালে রংপুর মহানগরীর মাস্টার পাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন আবু ত্ব-হা। তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কোনও গোষ্ঠী কিংবা কেউ জড়িত ছিলেন না বলে আমরা ধারণা করছি। উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন আরও বলেন, খবর পেয়ে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দেশ কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী অথবা ষড়যন্ত্রমূলক কোনও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
কে এই আবু ত্ব-হা : আবু ত্ব-হার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ঢাকার গাবতলী থেকে তারা নিখোঁজ হন। আবু ত্ব-হার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরও তিনজন। এ আবু ত্ব-হার সঙ্গে আরও যারা নিখোঁজ হয়েছিলেন তারা হলেন- আব্দুল মুকিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ। আদনানের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আদনানের বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠান ও মাহফিলে তারা থাকতেন।
এই তিনজনের সঙ্গে আদনানের সখ্যতা ছিল। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুর, তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে-সন্তান রয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে নানার বাড়িতে বড় হন আদনান। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরীর নিউ শালবন এলাকায় বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে আদনান আরেকটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক। আদনান প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কোরআন শিক্ষার জন্য কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদরাসায় তালিম নেন। এ সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন।
ঢাকার পল্লবীর লালমাটিয়া এলাকার এক বাসায় থাকেন ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। ওই বাসার নীচতলার দুটি ফ্ল্যাটে একটি বালিকা মাদরাসা রয়েছে, আবু ত্ব-হা যার মূল উদ্যোক্তা। তার মা আজেদা বেগম ১১ জুন বিকালে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন, সেখানে বলা হয়, তার দুদিন আগে গাড়িতে করে তিন সঙ্গীসহ ঢাকা যাওয়ার পথে ‘নিখোঁজ হন’ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। তার খোঁজে স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র্যাব সদরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার, যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাবিকুন্নাহারের জমা দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, গত ৮ জুন রংপুর থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন আবু ত¦-হবা। তার সঙ্গে ছিলেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন ফয়েজ। গাড়িটিসহ এদের চারজনেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ত¦-হবা নিখোঁজ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কথা ঘুরতে থাকার মধ্যে সাবিকুন্নাহার বলেছিলেন, ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে আলেমদের একটি পক্ষের সঙ্গে তার মতবিরোধ তৈরি হয়। এসব কারণে তিনি পরিচিত আলেমদের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি।
বরং সাধারণ মানুষ ও অনুসারীরা আদনানকে ফিরে পেতে অনলাইনে অনেক বেশি সোচ্চার। সাবিকুন্নাহার জানিয়েছিলেন, রংপুরের বাড়ি থেকে ওইদিন বগুড়ায় একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার স্বামীর। এরপর ঢাকায় আসার কথা ছিল। বিকেল ৪টার দিকে রংপুর থেকে একটি গাড়িতে করে বগুড়ার উদ্দেশে বের হন তিনি। ওই গাড়িটির মালিক রংপুরের আমির উদ্দীন, তিনিই চালান। রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ফোনে তিনি জানান, দুটি মোটরসাইকেলে চারজন তার গাড়িটিকে অনুসরণ করছে।
পরে হয়তো ভয়ে বা উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি বগুড়ার সভায় যোগ না দিয়ে ঢাকার পথ ধরেন। রাত আড়াইটার দিকে গাড়ি গাবতলী পৌঁছেছে বলে স্ত্রীকে জানান ত্ব-হা। এরপর থেকেই আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। পরে ফেইসবুক লাইভে এসে সাবিকুন্নাহার বলেছিলেন, ত্ব-হা নিখোঁজ হওয়ার পর তার কাছে দুটি ‘সন্দেহজনক’ কল এসেছিল। একটা অপরিচিত নম্বর থেকে বলা হয়েছিল, আদনানকে ছাড়াতে টাকা লাগেবে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ওই নম্বর পরে বন্ধ পাওয়া যায়। আর অনেকদিন ধরে বন্ধ আবু ত্ব-হার একটি পুরনো নম্বর থেকেও ফোন করে একজন পুরুষ কয়েকবার জানতে চান, সাবিকুন্নাহার তার স্ত্রী কি না। কিন্তু সাবিকুন্নাহার তার পরিচয় জানতে চাইলে অপরপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। তবে ত্ব-হার হোয়াটসঅ্যাপ মাঝে মাঝে খোলা হচ্ছিল, অর্থাৎ কিছুক্ষণের জন্য অনলাইন থেকে আবারও অফলাইন হয়ে যাচ্ছিল বলে সে সময় জানিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। সাবিকুন্নাহার রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গেলেও তখন পুলিশ মামলা বা জিডি নেয়নি বলে জানিয়েছিলেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুদিন আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, আবু ত্ব-হাকে উদ্ধারে পুলিশ ‘কাজ করছে’।
আমাদের রংপুর অফিস জানায়, আবু ত্ব-হার প্রতিবেশী বিপ্লব মিয়া জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হাকে তার শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মন্ডলের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছেন তিনি। খোকন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের জানান,
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি নগরীর মাস্টারপাড়ায় তাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। রংপুরে ওয়াজ মাহফিল শেষে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে আবু ত্ব-হাসহ চারজন নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ ছিল। আবু ত্ব-হার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ঢাকার গাবতলী থেকে তারা নিখোঁজ হন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আবু ত্ব-হার সঙ্গে আরও যারা নিখোঁজ হয়েছিলেন তারা হলো আব্দুল মুকিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ। আদনানের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আদনানের বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠান ও মাহফিলে তারা থাকতেন।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান (৩১)। তার মা আজেদা বেগম। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুর, তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে-সন্তান রয়েছে।বাবা মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে নানার বাড়িতে বড় হন আদনান। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরীর নিউ শালবন এলাকায় বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে আদনান আরেকটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক। আদনান প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবী শিক্ষা গ্রহণ করেননি।
তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কোরআন শিক্ষার জন্য কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদরাসায় তালিম নেন। এ সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন। ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা বলে জানাগেছে। রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, ‘আবু ত্ব-হাকে পাওয়া গেছে। তিনি উদ্ধার হয়েছেন। এই মুহূর্তে এইটুকু তথ্য আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত দ্রুত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না আবু ত্বহা, তার দুই সঙ্গী আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনের। বিকেল ৪টার দিকে ওই তিনজনসহ আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে তিনি গাবতলীতে বলে তার মাকে জানান। এরপর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আদনানের। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে না পেয়ে ১১ জুন বিকেলে ত্ব-হার মা আজেদা বেগম রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১, ১৩:৩৮
পাঠকের মন্তব্য