ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২টি। অথচ কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্যস্ত থাকেন দাপ্তরিক কাজে। এই অবস্থায় খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলার ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা।
উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা এ হাসপাতাল। চিকিৎসক-কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দারা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, হাসপাতালে পাঁচজন কনসালট্যান্ট ও ১৭ জন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
তাঁকেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি রোগী দেখতে হয়। মাত্র একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অবশ্য কাগজে–কলমে পাঁচজন থাকলেও বাকি তিনজনের মধ্যে একজন ছুটিতে দেশের বাইরে, একজন উচ্চতর প্রশিক্ষণে ও অপরজন দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে।
এদিকে টেকনিশিয়ান না থাকায় দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এক্স-রে যন্ত্র ও দুই যুগ ধরে জেনারেটর মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া আসবাব ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির তীব্র সংকট রয়েছে।
গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একটি দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। একা সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক নাসিরন আক্তার।
কথা হয় পেটব্যথার চিকিৎসা নিতে আসা বিবি মরিয়ম (৫০) নামের এক রোগীর সঙ্গে। তিনি পৌরসভার চর গণেশ এলাকার বাসিন্দা। বিবি মরিয়ম বলেন, তিনি এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় আছেন। আর আগে আরও অনেকে আছেন।
উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের নুরুল আলম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত পা নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানতে পারেন হাসপাতালে সার্জারির কোনো চিকিৎসক নেই। এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তিনি ২২ কিলোমিটার দূরে ফেনীতে গিয়ে এক্স-রে ও চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকলেও দিনরাত কষ্ট করে তা সামাল দিচ্ছেন। কিন্তু সুইপার ও ওয়ার্ডবয়ের সংকট আরও প্রকট। চিকিৎসক নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে বাইরে থেকে লোক এনে হাসপাতালের কক্ষ ও শৌচাগারের আবর্জনা পরিষ্কার করেন। কয়েকজন চিকিৎসক পাওয়া গেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে–কলমে ৫০ শয্যার কথা বলা হলেও মূলত ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে গড়ে রোগী আসে ৩০০-৩৫০ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক সংকট, এক্স-রে যন্ত্র, জেনারেটরসহ বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার বিষয় একাধিকবার চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চরম সংকটের মধ্যেও রোগীদের সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে পাঁচটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কোনটিতে চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত রোগীরা ভিড় জমায়।
সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজজামান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সোনাগাজী উপজেলা নয়। জেলার সব কয়টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি চাহিদাপত্রের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অতি দ্রুত চিকিৎসক সংকটসহ অন্যান্য জনবলের সংকট দূর হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
সর্বশেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯, ১০:৩৪