কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের টাকা দিতেন ডি কোম্পানি প্রধান লন্ডন বাপ্পি -র‌্যাব

টঙ্গী এলাকায় দুটি পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হামলার সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জন সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১
টঙ্গী এলাকায় দুটি পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হামলার সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জন সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ডি কোম্পানি’ বা ‘ডিয়ারিং কোম্পানি’র সদস্যরা। স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে এই গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য। ডিয়ারিং কোম্পানির নেতৃত্বে প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫)। ফেসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ডিয়ারিং কোম্পানি’ নামে একটি গ্রুপ খুলে সেখানে নির্দেশনা ও সদস্যদের গত পাঁচ বছর ধরে উত্তরা-টঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তার ও নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন বাপ্পি। আর এই কাজে তার ছোটভাই পাপ্পু তাকে সহযোগিতা করতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এরআগে শনিবার রাতে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানি নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক মো. রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ও মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দানকারী মো. মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), মো. সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), মো. রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াসিন (১৮), মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) ও ইয়াসিন মিয়া ইয়াসিন (১৯)। এ সময় টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে লন্ডন বাপ্পির আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, দুটি রামদা, তিনটি রড ও একটি ছুরি উদ্ধার করে র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১ জুন টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরতর আহত করে ডিয়ারিং কোম্পানির গ্যাং গ্রুপের দুই সদস্য। পরে এই ঘটনা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার একটি টেইলার্সসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তারা। এতে টেইলার্সের মালিক দোকানি রূপালী, তার স্বামী আরজু মিয়া ও অন্য একজন আহত হন। এরপর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। এরপর র‌্যাব-১ ছায়া তদন্ত করে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডিয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রুপটি উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মারামারি, মাদকের কারবার হুমকি-ধামকিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। ডিয়ারিং গ্রুপে অন্তত ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে প্রতি সপ্তাহে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দিতেন গ্রুপটির পৃষ্ঠোপোষক লন্ডন বাপ্পি। নানা অপকর্মের মাধ্যমে বাপ্পির মাসিক আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতাররা ডি কোম্পানি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা এলাকায় মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়ে স্বীকার করেছে। এছাড়া টঙ্গীতে সংঘটিত দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে তারা। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম-পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যের ওপর র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আমরা তথ্য পেয়েছি, লন্ডন বাপ্পির ছোট ভাই পাপ্পুর নামেও মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় কারাগারে রয়েছে সে। এছাড়া গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। এ বিষয়ে সন্তানদের ওপর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের নজরদারি খুর জরুরি। সন্তানরা কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, ফেসবুক বা ইন্টারনেটে কোন কোন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত সেসবের খোঁজ রাখা প্রয়োজন। তা না হলে ছোট-খাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুনোখুনি করে কিশোর বয়সেই অপরাধী হয়ে উঠতে পারে তারা।

সর্বশেষ আপডেট: ৭ জুন ২০২১, ০১:১১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও