১০ দিনের জন্য অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ

সিলেট প্রতিনিধি :

সিলেটে শনিবার কয়েক দফা মৃদু ভূমিকম্পের পর বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কায় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৭ দিনের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ভবনগুলোতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) অভিযান চালিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি ভবন থেকে সবাইকে আগামী ১০ দিন অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, বাণিজ্যিক ভবনে আগামী ১০ দিন সব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এছাড়া আবাসিক ভবন থেকে সবাইকে সরে যেতে হবে। নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। এদিকে, শনিবার দফায় দফায় ভূমিকম্পে নগরীর পাঠানটুলা দর্জিবাড়ি মোহনা আবাসিক এলাকার বি ব্লকের দুটি ছয়তলা ভবন হেলে পড়ার গুজবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে রোববার ভবন দুটি দীর্ঘক্ষণ পর্যবেক্ষণ শেষে গণমাধ্যমকে বিশেষজ্ঞ দল জানায়, হেলে পড়া সম্পর্কে তারা কিছুই খুঁজে পাননি। আপাতদৃষ্টিতে হেলে পড়ার মতো মনে হলেও প্রকৌশল দৃষ্টিতে ভবন দুটিতে কোনো ত্রুটি তারা পাননি। ভবন দুটিতে কোনো ফাটলও পাওয়া যায়নি।

ভবন দুটিকে নিরাপদ ঘোষণা করেন বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়। কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর নড়েচড়ে বসে সিসিক। রোববার বিকালে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ২২ ভবনের মধ্যে বহুতলবিশিষ্ট সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন মার্কেট, মিতালী মার্কেট ও রাজা ম্যানশন, সমবায় ভবন ও সুরমা মার্কেটে অভিযান চালান সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় চারটি মার্কেট ছাড়াও তালিকায় থাকা আরও দুটি বাণিজ্যিক ভবন, ১১টি আবাসিক ভবন, একটি সরকারি অফিস, একটি আবাসিক হোটেল ও একটি স্কুল আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিটি মেয়র আরিফুল হক এ নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি বলেন, ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। আগামী কয়েক দিন বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পন হলে যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় সেই লক্ষ্যে আগামী ১০ দিন এসব ভবনে ব্যবসা পরিচালনা বন্ধ ও মানুষজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীর ২৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এরমধ্যে দুটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকিগুলোর মালিকদের বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও সেগুলো ভাঙা হচ্ছে না। ঘন ঘন ভূ-কম্পনে ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসাবে পরিচিত সিলেটে ভবনগুলো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ভেঙে পড়তে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ভবনগুলো হলো- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডের সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারের সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ, শেখঘাট শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরান লেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানী-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণপাড়ের পৌরবিপণি মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার ও জেন্টস গ্যালারি। এরমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩ ও ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণি মার্কেট ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২১, ১৬:০০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও