ঢাকায় পাওয়া গেল ভারতীয় করোনার ধরন

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

ঢাকায় করোনা রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন ১.৬১৭.২ পাওয়া গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ১.৬১৭.২ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, শিগগির এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করা দুই পুরুষ রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের নমুনা বিশ্লেষণের ফলাফল শুক্রবার গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) জিনোম সিকোয়েন্স ডেটাবেসে জমা দেয়া হয়।

জিআইএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই জনের মধ্যে একজনের বয়স ৪১ বছর ও অন্যজনের বয়স ২৩ বছর। আইইডিসিআর গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল তাদের নমুনা সংগ্রহ করে। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সাইন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভসে (আইডিএসএইচআই) নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। আইইডিসিআর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আর বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রচুর সংক্রমণ ঘটালেও, এর আগে পাওয়া ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে এটা মারাত্মক এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ডব্লিউএইচও।

গবেষকদের মতে, একই রকম ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আইসিডিডিআরের সিনিয়র গবেষক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে জিনোম সিকোয়েন্স করি। গত সপ্তাহে আমরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ২০ জনেরও বেশি করোনা রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছি। সেগুলোতে আমরা কোনো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাইনি। তিনি বলেন, তবে, ইতোমধ্যে বেশি সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব দেশে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো এখনো সেভাবে সমস্যা তৈরি করছে না বলে আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলি, মারাত্মক হোক বা না হোক কোনো ভ্যারিয়েন্টই এত সমস্যা তৈরি করতে পারবে না’, যোগ করেন তিনি।

এদিকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে আসা আট জনের নমুনা পরীক্ষার পর তাদের ছয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই জনের নিশ্চিতভাবে এবং চারজনের মধ্যে আংশিক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিশ্চিত হয়েছে আইডিসিআর ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, করোনার এ ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি তাই সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, করোনার ভারতীয় ধরনটি ‘বি.১.১৬৭’ নামে পরিচিত যা অতি সংক্রামক বলে বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। ভারতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এ ধরন ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভেতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে করতে থাকে অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে, এবং তার ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন মাথাব্যথার প্রয়োজন হয় না, কারণ নতুন সৃষ্ট অনেক ভ্যারিয়েন্ট মূল ভাইরাসের চেয়ে দুর্বল এবং কম ক্ষতিকর হয়।

কিন্তু কিছু ভ্যারিয়েন্ট আবার অধিকতর ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে - যার ফলে টিকা দিয়ে একে কাবু করা দুরূহ হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট - যেটার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭ - প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় অক্টোবর মাসে। ভারতে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

ভারত জানিয়েছে গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের যে ‘’ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট”-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, সেটির কারণেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি প্রাণঘাতী হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে এমন একদল বিশ্লেষক সম্প্রতি বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য উপাত্ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পদক্ষেপ, ভাইরাসের বিস্তারের ধরন - এমন নানা কিছু বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকদের দলটি যে সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছে তাতে একথা বলা হয়।

বাংলাদেশি বিশ্লেষকদের দলটির আনুষ্ঠানিক নাম বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ। অক্সফোর্ডের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আরও ৪২টি দেশের গবেষক ও বিশ্লেষকদের সাথে তারা কাজ করছেন। এর আগে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলো আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি।

তারা বলেছিলো দেশটিতে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশে ৬ জানুয়ারি প্রথম ইউকে বা যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এবং মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশে বৃদ্ধি পায়।

কিন্তু মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে দেখা যায় যে, অন্য যে সব ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশে, তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর আগে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিলো

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৮৩৩ জনের। আর কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ জন। দেশটিতে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরুর পর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ কিংবা বিভিন্ন মাত্রার লকডাউন দিয়েছে যা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বহাল আছে। যদিও এর মধ্যে দোকানপাট, শপিং মল, শহরের মধ্যে যানবাহন খুলে দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ৯ মে ২০২১, ১৩:৪৭
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও