গুলশানে তরুণীর আত্মহত্যা: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে মামলা বড় বোনের

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাতে গুলশান থানায় একটি মামলা (নম্বর ২৭/১২৯) করেছেন নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে। তাদের বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড়। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। এক লাখ টাকা ভাড়ায় মাস দুয়েক আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসারাত।

এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী  বলেন, মোসারাত জাহানের বাড়ি কুমিল্লা শহরে। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। এখানে ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোসারাত জাহানের পরিচয় ছিল। তিনি ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মোসারাত জাহান রোববার তার বড় বোনকে ফোন করে বলেন, তিনি ঝামেলায় পড়েছেন। এ কথা শুনে তার বড় বোন সোমবার কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যার দিকে ওই ফ্ল্যাটে যান তিনি। দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও বোন দরজা খুলছিল না। এরও কিছুক্ষণ আগে থেকে বোনের ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন। পরে বাইরে থেকে ‘লক’খুলে ঘরে ঢুকে বোনকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। পরে তিনি বাড়িওয়ালাকে বিষয়টি জানান। তখন পুলিশে খবর দেওয়া হয়। নিহত মুনিয়ার মরদেহ সুরতহালের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ঠিক কী কারণে তরুণী আত্মহত্যা করলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং মোসারাতের ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো জব্দ করেছে।

বাদী নুসরাত জাহান মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং প্রায় সময়ই মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে মোসারাত জাহানকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

‘সবশেষ গত ১ মার্চ আসামি মোসারাতকে প্ররোচিত করে বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তাঁর স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় এনে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তার (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখে। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো। ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝে মাঝে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।’

বাদী এজাহারে বলেন, ‘২৩ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করে বলেন, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাতকে) মেরে ফেলবেন।’

এজাহারে নুসরাত আরও বলেন, ‘দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাকে মোবাইল ফোনে কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না। শুধু ভোগ করেছেন। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন।’

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মরদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

সর্বশেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১, ২১:৪১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও